কিশোরগঞ্জে বিএডিসি’র উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) একেএম মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিলারদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া তিনি কোনো ডিলারকে বোরো ধান কিংবা আলু কোনো ধরনের বীজের বরাদ্দ দেন না। ঘুষ পাওয়ার পর বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে তিনি বীজের বরাদ্দ দেন। যেসব ডিলার বেশি ঘুষ দেন, তারা বীজের বরাদ্দও পান বেশি। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বীজ পাওয়া দূরে থাক, বীজ বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার হন ডিলাররা। উপপরিচালক একেএম মনিরুজ্জামান মুক্তিকে ঘুষ দিয়েও বেশ কয়েকজন ডিলার বীজ না পাওয়ায় তার ঘুষ বাণিজের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তাদেরই একজন ডিলার মো. অলিউল ইসলাম। তিনি মধুপুরের ধানবীজ পাওয়ার জন্য মুক্তিকে ১২ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। বীজ না পেয়ে তিনি ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে তাকে পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা চাইলে তাকে মারপিট করেন ডিডি মনির। পরে অন্যদের মধ্যস্থতায় ঘুষের আরও চার হাজার টাকা ফেরত দেন তিনি। এ ব্যাপারে গত ২০শে নভেম্বর মহাব্যবস্থাপক (বীজ) বরাবর একটি অভিযোগও দিয়েছেন ডিলার অলিউল ইসলাম। একই রকম ভাবে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিলার আখেরুল বাবু। বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে তাকে ১০ টন ডায়মন্ড আলু বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু তাকে পাঁচ টন বীজ সরবরাহ করা হয়। বাকি পাঁচ টন বীজ না পেয়ে তিনি এ নিয়ে দেনদরবার করেন। এ পরিস্থিতিতে তাকে ঘুষের এক লাখ টাকা ফেরত দেয়া হয় এবং পাঁচ টন বোরো বীজ সরবরাহ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জেলায় বিএডিসি’র ২৯৫ জন বীজ ডিলার রয়েছেন। তাদের প্রায় সবাইকে একই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে মুক্তিকে কমবেশি ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে বীজের বরাদ্দ নিতে হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের কাছ থেকে তিনি বেশি ঘুষ পেয়েছেন, তাদেরকে বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। মুক্তির এ ঘুষ বাণিজ্যের সহযোগী ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিউলী আক্তার এবং সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা গুদামরক্ষক শুভ্রামনিয়াম বৈষ্ণব। ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মুক্তি নিজের অপকর্ম ঢাকতে গুদামরক্ষক শুভ্রামনিয়াম বৈষ্ণবকে পাকুন্দিয়া উপজেলায় বদলি করে দেন। অন্যদিকে মুক্তির ঘুষ বাণিজ্যের কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ডিলারদেরকে বীজ না দেয়ায় ১৬০৩ টন বোরো ধানবীজ অবিক্রীত রয়ে গেছে। অথচ বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৪৯০ টন; যা অবিক্রীত বীজের চেয়ে ১১৩ টন কম। অবিক্রীত এসব বীজ এখন খাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে হবে। ফলে সরকার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ডিলাররা বলছেন, মনিরুজ্জামান মুক্তি উপপরিচালক (বীজ বিপণন) এর অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ডিলাররা বরাদ্দ অনুযায়ী বীজ বা অবীজ কোনোটাই উত্তোলন করতে পারেননি। ঘুষ না পেলে তিনি বীজ দেন না। ঘুষের টাকা পেলেই তিনি টাকা পাওয়ার প্রমাণ হিসেবে নিজ হাতে লেখা টোকেন ডিলারদের দিতেন। বিশেষ এ টোকেনের মাধ্যমে ডিলারদের গুদামরক্ষক শুভ্রামনিয়াম বৈষ্ণব বীজ সরবরাহ করতেন। মুক্তির ঘুষ বাণিজ্যের কারণে ডিলাররা বিগত ২০২৩-২০২৪ বিতরণ বর্ষে প্রায় ১৭০০ টন বীজ ধান অবিক্রীত রয়ে যায়; যা পরবর্তীতে অবীজ হিসেবে বিক্রি করা হয়। এ অবীজ ধানের মধ্যে কোনো ধান ডিলাররা বরাদ্দপ্রাপ্ত হিসেবে উত্তোলন করতে পারেননি। এছাড়া উপপরিচালক মুক্তি ব্রিধান ২৮ এর চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রতি টনে চার হাজার টাকা অতিরিক্ত নিয়ে ৩০০ টন ধান বিক্রি করেন। বাকি ধান প্রতি টনে এক থেকে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত নিয়ে বিক্রি করেন। ২০২৪-২৫ বিতরণ বর্ষে প্রতি টন ভিত্তি ধানবীজে চার হাজার টাকা এবং মধুপুরের ধানবীজে তিন হাজার টাকা ডিলারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করেছেন তিনি। এছাড়া অন্যান্য যেকোনো জাতের বীজে ডিডি মনিরকে প্রতি টনে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ফলে ডিলাররা চাহিদা থাকার পরও ডিডি মনিরের বেঁধে দেয়া ঘুষ রেটের কারণে প্রয়োজন মতো ধানবীজ উত্তোলন করতে পারেননি। ফলে প্রতি বছরের মতো এ বছরও অনেক ধানবীজ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে উপপরিচালক (বীজ বিপণন) একেএম মনিরুজ্জামান মুক্তি মানবজমিনকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমি এ অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। যেসব অভিযোগের কথা বলছেন, সেসব অভিযোগের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই।
সূত্রঃ দৈনিক মানবজমিন