নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় গত ২০ জুলাই ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, বল্লম, রড,হকিস্টিক নিয়ে হামলার ঘটনায় পাকুন্দিয়া থানায় ২ টি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। পাকুন্দিয়ার বড়বাড়ির মোস্তফা কামাল একটি এবং দরদরা এলাকার নজরুল ইসলাম নামের বিএনপি কর্মী বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে এ এজাহার দায়ের করেছেন।
মামলাগুলোতে প্রধান আসামী করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনকে। এছাড়াও অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের ছেলে তৌফিকুল ইসলাম সাগর, পাকুন্দিয়ায় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু, জাতীয় শ্রমিকলীগ উপদেষ্টা আতিকুল্লাহ সিদ্দিকী মাসুদ, সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম, শিল্পপতি মকবুল হোসেনসহ একটি মামলায় ৯৪ এবং অপরটিতে ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা গুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একটিতে ৮ অপরটিতে ৩৩ নাম্বার আসামি করা হয়েছে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের কাজিহাটি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে হাজী মকবুল হোসেনকে। তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়, মকবুল হোসেন পুলিশের হাত হইতে শর্টগান কাড়িয়া নিয়া গুলি করলে মামলার স্বাক্ষী সফিকের বাম চোখের নিচে ও মাথায় লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়। জখমীদের চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হইয়া গিয়াছে।
৭০ জন আসামির নাম উল্লেখ করা বড়বাড়ির এলাকার মোস্তফার মামলায় উল্লেখ করা হয়, দেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গত ২০ জুলাই (শনিবার) সমগ্র দেশের মত পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরে সকালে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল করাকালীন প্রধান আসামি এডভোকেট সোহরাব উদ্দিন ও ২য় আসামি রফিকুল ইসলাম রেনুর নেতৃত্বে সকল আসামীরা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, বল্লম, রড, হকিস্ট্রিকসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিক্ষোভরত ছাত্র জনতার উপর ১ ও ২ নং আসামীর হুকুমে ৯ হইতে ৫৫ নং আসামীরা হাতে থাকা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে এবং ছাত্র জনতাকে ধাওয়া করে। আসামীদের উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণে পাকুন্দিয়া বাজার এলাকায় ডাকবাংলা মোড় ও বটতলা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে মানুষ দোকানপাঠ বন্ধ করিয়া ছুটাছুটি করিতে থাকে আসামীদের ককটেলের মজুদ শেষ হইয়া পড়িলে ছাত্রজনতা সংগঠিত হইয়া প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিয়া বিক্ষোভ করিতে থাকিলে ৩নং আসামী আতাউল্লা সিদ্দিক মাসুদের হাতে থাকা শর্টগান থেকে গুলি ছুড়লে উক্ত গুলি স্বাক্ষী মাসুদের বাম চোখে লেগে মারাত্মক জখম হয়।
৪নং আসামী নারান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের হাতে থাকা শর্টগান দিয়া গুলি ছুড়িলে উক্ত গুলি কাওছারের ডান চোখে লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়। ৫নং আসামী অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের ছেলে তৌফিকুল ইসলাম সাগরের হাতে থাকা শর্টগানের গুলি ছুড়িলে স্বাক্ষী পাপ্পুর ডান চোখে লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়। ৬নং আসামী পৌর মেয়র নজরুল ইসলামের হাতে থাকা শর্টগানের গুলি ছুড়িলে স্বাক্ষী রানার ডান চোখে লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়।
৭ নং আসামী ভিপি ফরিদ উদ্দিনের হাতে থাকা শর্টগানের গুলি ছুড়িলে স্বাক্ষী মমিনের হাতে ও বুকে লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়। ৮নং আসামী মকবুল হোসেন পুলিশের হাত হইতে শর্টগান কাড়িয়া নিয়া গুলি করিলে স্বাক্ষী সফিকের বাম চোখের নিচে ও মাথায় লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়। জখমীদের চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হইয়া গিয়াছে।
অন্যান্য আসামীরা ছাত্র জনতার উপর চড়াও হইয়া বাইরাইয়া কোপাইয়া জখম করে। তদন্তকালে জখমীদের নাম ঠিকানা পাওয়া যাইবে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করিয়া ছাত্রজনতাকে জখম করে। জখমীরা প্রশাসন ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রকাশ্যে চিকিৎসা নিতে পারে নাই। স্বাক্ষী সোহেল, কাউছার, পাপ্পু সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসিলে এখানে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব নয় জানাইলে ঢাকা চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে চিকিৎসা নেয় স্বাক্ষী রানা ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অন্যান্য জখমীরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কবলে থাকায় কোথাও মামলা করার পরিবেশ না থাকায় ৫ আগষ্ট দেশে গণঅভূত্থানে সরকারের পতন হওয়ায় থানায় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় জখমীদের চিকিৎসা কাজে ব্যস্থ থাকায় মামলা করিতে বিলম্ব হয়।
অপরদিকে, ৯৩ জনের নাম উল্লেখ করে দরদরা এলাকার নজরুল ইসলাম করা মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৪ আগষ্ট সকাল থেকেই থেকেই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রসার ছাত্র-ছাত্রীদের পাকুন্দিয়া সদরে বিভিন্ন রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মিছিল করিতে থাকে। পুলিশ ও বিজিবি বাহিনী সেই মিছিল ছাত্রভংগ করার চেষ্টা করিতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্ষোভ কারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বেলা অনুমান ১২ টার দিকে ১নং আসামী অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র,ককটেল,রড,বল্লম,রাম দা,হকিষ্টিকসহ অন্যান্য আসামীদের নিয়া পাকুন্দিয়া থানার সামনে উপস্থিত ২নং তারই ছেলে তৌফিকুল ইসলাম সাগরসহ সকল আসামীকে হুকুম দিয়া বলে যে, শালাদেরকে গুলি করিয়া, ককটেল মারিয়া, কুপাইয়া সরকার পতনের স্বপ্ন দেখা শেষ করিয়া দে। হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে সকল আসামীরা অস্ত্র উচাইয়া ছাত্র/জনতার মিছিলের দিকে আগাইতে থাকে ১০ থেকে ৫২ নং আসামীরা হাতে থাকা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাইয়া ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং ছাত্র জনতাকে দৌড়াইয়া নিয়া যায়। মুহুর মুহু ককটেল বিষ্ফোরনের বিকট শব্দে সমস্ত বাজারের দোকান পাঠ বন্ধ হইয়া যায়। রিক্সা/অটোরিক্সা ক্ষতি হয়। আসামীদের ককটেলের মজুত শেষ হইয়া পড়িলে ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিলে ২নং আসামী তৌফিকুল ইসলাম সাগর খুন করার উদ্দেশ্যে হাতে থাকা শর্টগানের গুলি ছুড়িলে স্বাক্ষী আসিকের কপালে লাগিয়া মারাত্মক জখম হয় । ৩নং আসামী আতিকুল্লাহ সিদ্দিকী মাসুদের হাতে থাকা শর্টগানের গুলি চালাইলে সাক্ষী শুভর ডান হাটুর নিচে লাগিয়া শত শত গ্লিটার বিদ্ধ মারাত্মক জখম হয়। ৪নং আসামী ভিপি ফরিদ উদ্দিনের হাতে থাকা শর্টগানের গুলি করিলে উক্ত গুলি সাক্ষী রুবেলের মাথায় কপালে লাগিয়া জখম হয়। ৫নং আসামী আসাদুজ্জামান ডিলারের হাতে থাকা শর্টগান দিয়া গুলি করিলে উক্ত গুলিতে সাক্ষী সুজনের কপাল, মাথা মুখে লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়। ৬নং আসামী একরাম হোসেন টিপুর শর্টগান থেকে গুলি করিলে সাক্ষী রবিনের মাথায় লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়।
৭নং আসামী নাজমুল দেওয়ান ৩নং আসামী আতিকুল্লাহ সিদ্দিকী মাসুদের হাত হইতে শর্টগান কাড়িয়া নিয়া গুলি করিলে সফিকের চোখের নিচে ও কপালে লাগিয়া মারাত্মক জখম হয়। ৮নং আসামী নাজমুল ৯ম আসামী হিমেলের হাতে থাকা বল্লম দিয়া স্বাক্ষী রাব্বুলকে খুন করার জন্য ঘাই মারিলে উক্ত ঘাই বাম হাতের কব্জীর উপরে লাগিয়া এপার উপার জখম হয়। ৯নং আসামী হিমেল হকিষ্টিক দিয়া বারি মারিয়া সাক্ষী ছোটনের বাম হাতে কাঁধে লাগিয়া হাতের হাড় ভাঙ্গিয়া ঝুলিয়া পড়ে। অন্যান্য আসামীরা ছাত্র জনতার উপর আক্রমণ করিয়া এলোপাতারী বাইরাইয়া বিভিন্ন লোকজনকে জখম করে।
পাকুন্দিয়া বাজারের এরফান মাষ্টারের ঘর সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করিয়া ঘর ভাঙ্গিয়া মালামাল লুটতরাজ করিয়া নিয়া যায়। আসামীদের আঘাতের ফলে সাক্ষী আসিককে নিউরোসাইন্স হাসপাতাল ঢাকা, সাক্ষী রাব্বুলকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সাক্ষী শুভকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল/নিউরোসাইন্স এবং চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। সাক্ষী সুজনকে ঢাকা মেডিকেল, স্বাক্ষী রবিন, সাক্ষী সফিক, সাক্ষী ছোটন কে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। আমিও বাম হাটুর নিচে ও পিটে গুলি বিদ্ধ হই। অন্যান্য জখমীরা পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে গোপনে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করে। ঘটনার পর গত ৫ আগষ্ট দেশে গণঅভূত্থানে সরকারের পতন হওয়ায় থানায় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় জখমীদের চিকিৎসা কাজে ব্যস্থ থাকায় ও আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে মামলা করিতে বিলম্ব হইল ।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান টিটু গণমাধ্যমকে বলেন, আসামীদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।