মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পাকুন্দিয়া কটিয়াদী আসন ; রাজনীতির এক জটিল সমীকরণ
Update : শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৪, ৩:১৩ অপরাহ্ণ

সুমন বাঙালী
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরর সার্বিক পরিস্থিতিতে এখানে বলা যায়, রাজনীতি ও নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। নির্বাচনী আমেজ ও পরিবেশ বলতে যা বুঝায়, তার প্রায় পুরোটাই বিরাজ করছে এ আসনে। প্রচার প্রচারণা, মিছিল মিটিং, মাইকিং আর ধূমায়িত রং চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাজনৈতিক বিচার বিশ্লেষন এখন তুঙ্গে চায়ের স্টলেও।সবচেয়ে বড় উত্তেজনার বিষয় হচ্ছে এ আসনের চলমান রাজনৈতিক দাবার গুটির চাল! কুটকৌশল ও শেষ মুহূর্তের ভোটের এবং সুযোগ সুবিধার হিসাব নিকাশ!

নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য, একসময়কার জনপ্রিয় নেতা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আক্তারুজ্জামান রঞ্জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। তার নিজস্ব কিছু ভোট ব্যাংকও আছে এখানে। সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে বয়কট করলেও বিএনপি সমর্থক সাধারণ মানুষের বড় একটা অংশের ভোট তিনিই পাবেন বলে আশা করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগনও তাই ভাবছেন।

পাশাপাশি অবাক করার বিষয় হচ্ছে অনেকটা রহস্যজনকভাবে আওয়ামীলীগের বর্তমান সংসদ সদস্য, তার অনুসারী নেতা কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও তিনি বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন এবং জয়ের ব্যাপারে বেশ সম্ভাবনার কথা বলছেন।

ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগ এ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি, অত্যন্ত সৎ ও ভালো মানুষ হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাহার আকন্দ সাহেব কে। তিনি বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ প্রেমিক এবং জীবনে হাজারও প্রতিকুলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে, আওয়ামীলীগ তথা মুজিব আদর্শের চর্চা করেছেন। ফলে বলাই যায়, সাধারণ আওয়ামী সমর্থক ও অনুসারীদের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য। তিনি তাঁর মতো করে গুছিয়ে আওয়ামীলীগ এর ত্যাগী, বিশ্বস্ত ও মূল ধারার নেতাকর্মীদের বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত, আবেগিক ও সত্যিকারের আওয়ামী নেতা, কর্মী ও সমর্থক দের নিয়ে নিয়মিত মিটিং মিছিল ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। জনগণ মনে করে, স্থানীয় ভাবে যারা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ এর অনেকটা ধারক ও বাহক, তারা তার পক্ষেই মাঠে নেমেছেন।মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, পাকুন্দিয়ার মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু, প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামসুল হক গোলাপ মিয়ার অনুসারী সাধারণ আওয়ামী সমর্থকদের ও নেতাকর্মীদের বিশাল অংশের সাপোর্টও তিনিই পাচ্ছেন। যেহেতু তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এবং পরীক্ষীত ভালো মানুষ, সেহেতু তিনিও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী। পাশাপাশি এই এলাকায় আওয়ামীলীগ সমর্থক অনেক সাধারণ মানুষের কাছে নৌকা একটি আবেগের নাম, যার সুবিধা তিনি মিছিল মিটিংয়ে পাচ্ছেন এবং নির্বাচনেও পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। বিশেষ করে স্থানীয় ভাবে আওয়ামী লীগ এর আদর্শিক নেতা, প্রয়াত গোলাপ ভাইয়ের অনুসারীরা নৌকা কে একটা আবেগের মার্কাই মনে করে থাকেন যারা নৌকার বাইরে চিন্তা করতে পারেন না। ফলে নৌকার নয়া মাঝির জন্য এটি একটি বাড়তি সুবিধা বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ আসনের আরেকজন অত্যন্ত শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন এডভোকেট সোহরাব সাহেব। তিনি আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য (২০১৪ সালের)। তিনি বর্তমান পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ এর আহবায়ক। মূলত পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগে তার একটা নিজস্ব বলয় আছে এবং সাবেক সংসদ সদস্য হওয়ায়, উক্ত সংসদীয় আসনে তার একটা নিজস্ব ভোট ব্যাংকও আছে। পাশাপাশি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি কটিয়াদি – পাকুন্দিয়াতে ব্যাপক উন্নয়নও করবছিলেন। এ কারণে তিনিও বেশ জোরেশোরেই প্রচারণা, মিটিং, মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন এবং জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। আওয়ামীলীগ এর স্থানীয় অনেক নেতা কর্মী ও সমর্থকও তার সাথেই আছে।

ফলে কিশোরগঞ্জ – ২ (কটিয়াদি – পাকুন্দিয়া) আসনে নির্বাচনী আমেজ ও উত্তাপ, দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতীয়মান হচ্ছে যে এখানে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দিতা এবং জমজমাট লড়াই হবে। আগেই বলা যাচ্ছে না হার জিত নিয়ে। অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন এবং কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও উপচে পড়বে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে অনেকটাই। একথা নির্দিদ্বায় বলা যায় নির্বাচনি খেলা এখানে অনেকটাই জমে উঠেছে।

তবে সবকিছু ছাড়িয়ে কিছু নেতা কর্মীদের আদর্শের বিচ্যুতি, দল বদল, ভাই বদল,অভিভাবক বদল, লাভের হিসাব নিকাশ সাধারণ জনগণ এবং কর্মী ও সমর্থকদের ভাবিয়ে তুলেছে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে বলে অনেকে মনে করছেন।

সুমন বাঙালী
সহকারী শিক্ষক, বিএডিসি উচ্চ বিদ্যালয়,মিরপুর,ঢাকা

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ