কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনে কার পক্ষে মাঠে নামবেন-এ প্রশ্নে নূর মোহাম্মদ বলেন, নামলে মেজর আখতারের পক্ষেই নামব। তাঁকেই যোগ্য প্রার্থী মনে করছি। মেজর আখতারুজ্জামানকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রতিদিন নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়, দেখাও হয়। তবে সমর্থনের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাহার আকন্দকে প্রশ্ন করলে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদ এখনও নৌকার পক্ষে মাঠে নামেননি। তবে তিনি তাঁর লোকদের নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলে দিয়েছেন।
এই আসনে ত্রিমুখী লড়াই জমে উঠেছে। প্রার্থীরা হলেন– সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ (নৌকা), স্বতন্ত্র দু’জন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন (ঈগল) ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আখতারুজ্জামান (ট্রাক)। তাদের মধ্যে রাজনীতির মাঠে নবীন আব্দুল কাহার আকন্দ।
আখতারুজ্জামানকে বিএনপির ‘ঠোঁটকাটা’ নেতা হিসেবে অনেকে আখ্যায়িত করেন। কারণ তিনি দলের যে নেতাদের কর্মকাণ্ড এবং সিদ্ধান্ত ভুল মনে করেন, তাদের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। এসব কারণে তিনি অনেকবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। এই আসনে অন্য তিন প্রার্থী হলেন মীর আবু তৈয়ব মো. রেজাউল করিম (গণফ্রন্ট), আলেয়া (এনপিপি) ও মো. বিল্লাল হোসেন (বিএনএফ)। তবে আওয়ামী ঘরানার দুই প্রার্থী ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। পদধারী নেতাদের একটি অংশ নৌকার পক্ষে, অপর অংশ ঈগলের পক্ষে নেমেছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফরিদ উদ্দিন (ভিপি ফরিদ) সোহরাবের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। অন্যদিকে কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন খান জানিয়েছেন, তিনিসহ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিলন নৌকার পক্ষে নেমেছেন। বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদ এখনও নীরব রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের তৃণমূলে অনেক সমর্থক আছে। আবার কাহার আকন্দ চাকরি ছেড়ে নতুন রাজনীতিতে নামলেও নৌকা দলীয় প্রতীক হওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী তাঁর পক্ষে।
এদিকে মেজর আখতারুজ্জামানও শক্তিশালী প্রার্থী। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ায় এবং তারেক রহমানের আন্দোলন কৌশলের প্রকাশ্য সমালোচনা করায় বিএনপির পদধারী নেতাদের খুব একটা কাছে পাচ্ছেন না। অবশ্য মাঠ পর্যায়ের অনেকেই তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন। এর জন্য ইতোমধ্যে কটিয়াদী উপজেলার দুই বর্তমান ও এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা যুবদলের এক যুগ্ম আহ্বায়ক দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। সম্প্রতি আখতারুজ্জামান সম্মানীর বিনিময়ে নির্বাচনের কর্মী নিয়োগের জন্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
সোহরাব উদ্দিন এবং আখতারুজ্জামান দুইবার করে এমপি হয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান ১৯৯১ সালে প্রথম বিএনপির এমপি হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। তখন এমপি হয়েছিলেন কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির ‘প্রয়াত’ সভাপতি হাবিবুর রহমান দয়াল। একই বছর অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আখতারুজ্জামান বিজয়ী হন। অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী ডা. আব্দুল মান্নান মারা যাওয়ার পর সোহরাব উদ্দিন প্রথম উপনির্বাচনে এমপি হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী হয়ে এমপি হন। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সোহরাব উদ্দিনের পরিবর্তে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ নৌকা পেয়ে বিজয়ী হন। তখন সোহরাব উদ্দিন আর প্রার্থী হননি। তবে মেজর আখতারুজ্জামান বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন।
নূর মোহাম্মদকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে আখতারুজ্জামান জানান, ‘নূর মোহাম্মদ কাকে সমর্থন দেবেন, সেটা তাঁর বিষয়। এ ব্যাপারে আমি কী করে বলব?’ নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাহার আকন্দ বলেছেন, দিন দিন তাঁর সমর্থন বাড়ছে। এমপি নূর মোহাম্মদ এখনও তাঁর পক্ষে মাঠে নামেননি। অন্য নেতারা নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।
মেজর আখতারের পক্ষে কাজ করার জন্য বহিষ্কার প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘আমরা এখন সতর্ক আছি। বহিষ্কারের পর
আর কেউ আখতারুজ্জামানের পক্ষে যায়নি। কাগজ নিয়ে বসে আছি। কেউ যাবে, আর নামটা লিখে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।’
-সূত্রঃ দৈনিক সমকাল
সমকালের অনলাইনে সংবাদটি দেখতে
এসআর/পাপ্র