ফারুক ওয়াসিফ
সেন্ট মার্টিন বা নারিকেল জিঞ্জিরা হলো সেই এলাকা যেখানে ঈশ্বর থাকেন কিন্তু সরকার কম থাকেন। ঈশ্বর থাকেন সেখানকার শত শত এতিম শিশুদের সাথে, তাদের বাবারা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। হয় সমুদ্র থেকে আর ফেরেনি, নয়তো মৌসুমী বিয়ে করে এখন অন্য জায়গায় আরেক সংসার পেতেছে। এটা সেই জায়গা যেখানকাার যুবকদের এলাকায় কোনো বড় হওয়ার সুযোগ নাই, ট্যুরিস্ট গাইড হওয়া ছাড়া অথবা অটো চালক, অথবা রেস্টুরেন্টের মেসিয়ার। সরকার ব্যবস্থা না করলে তাদের আসলেই যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। এরকম আট হাজার মানুষ সেখানে আটকা। এটুকু মানুষের জন্য কিছু করা গেল না? মাত্র ৪৫ মিনিটের দূরত্ব। ছোট্ট এই জায়গাটাকে তারা পৃথিবী ভেবে সেখানেই ঘুরপাক খেয়েছে ভাগ্য গড়ার জেদে। দ্বীপটা যখন ডুবে যাবে, অনেক মানুষ মারা যাবে, তখন সরকার আর সাংবাদিক টেকনাফে বসে সব দেখবে। তাদের মাথার ওপর ঘুরবে টিনের তৈরি এক বঙ্গ স্যাটেলাইট। সেই স্যাটেলাইট আর তার সরকার জননী গত দুদিনে একটা উদ্ধার জাহাজও পাঠাতে পারেনি! ২৬ এপ্রিল থেকে জানা ছিল, একটা বড় কিছু আসছে। অথচ সেন্ট মার্টিনে কোনো নুহের জাহাজ আসেনি। কিন্তু কত কত প্রমোদতরী আসতো, কেয়ারী আসতো। এই প্রলয়ের রাতে কেবল ঈশ্বরই আছেন তাদের সাথে। তিনিই জানেন, তাঁর মনে কী আছে। কাকে মেরে তিনি কাকে শিক্ষা দেন; কে তা বলতে পারে!
* সেন্ট মার্টিনের দুজন অধিবাসীর নম্বর ছিল। একজন হাফেজ ভাই, তিনি তাঁর পরিবারকে গতকাল স্পিড বোটে টেকনাফ পাঠিয়ে বসে ছিলেন কী হয় কী হয় ভেবে। আরেকজন এতিম শিশু জাহিদের এক বড় ভাইয়ের। সেই নম্বরটায় পোঁছাতে পারিনি।
ফারুক ওয়াসিফ: পরিকল্পনা সম্পাদক, সমকাল; লেখক
farukwasif0@gmail.com