Pakundia Pratidin
ঢাকাশুক্রবার , ২৫ নভেম্বর ২০২২
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইতিহাস
  3. ইসলাম ও জীবন
  4. কৃতি সন্তান
  5. জাতীয়
  6. জেলার সংবাদ
  7. তাজা খবর
  8. পাকুন্দিয়ার সংবাদ
  9. ফিচার
  10. রাজনীতি
  11. সাহিত্য ও সংস্কৃতি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্ৰেম এবং ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

প্রতিবেদক
পাকুন্দিয়া প্রতিদিন ডেস্ক
নভেম্বর ২৫, ২০২২ ৩:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আলম সাঈদ: বিবর্তনমূলক মনস্তত্ত্বের ( Evolutionary Psychology) ধারণা অনুযায়ী প্রেম হচ্ছে প্রজাতি হিসেবে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সৃষ্ট এক বিবর্তনবাদী ষড়যন্ত্র বা ফাঁদ। ভালবাসা হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার আরো বড় ধরনের ষড়যন্ত্র।

ফ্রাংক ডিকসি’র তুলিতে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের প্রেমের চিত্রায়ণ।সূত্র: উইকিপিডিয়া।

বিভিন্ন শ্রেণীর বানরকে যখন প্রকৃতি কিছু অতিরিক্ত বুদ্ধিমত্তা দিল, তখন দেখা গেল এই বুদ্ধিমান বানরেরা (বিবর্তিত বনমানুষ) বাড়তি বুদ্ধিমত্তাটুকু ব্যবহার করছে পরস্পরের ধ্বংসসাধন করতে। এদের মধ্যে মানুষের অন্যান্য প্রজাতিগুলোর উপর গণহত্যা চালিয়ে তাদের সমূলে বিলুপ্ত করে জিতে গেল হোমো স্যাপিয়েন্স। দেখা গেল সে এবার ধ্বংসাত্মকতা কিছুটা ছেড়ে খানিকটা সৃষ্টিশীলতায় নিমগ্ন হল।

এই বুদ্ধিমান প্রাণী আবার সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগল। অন্যান্য প্রাণী থেকে প্রাণপণে নিজেদের আলাদা করার তাগিদে সৃষ্টি করল রোমান্টিক প্রেম, চিরন্তন ভালবাসা ও সংস্কৃতির ধারণা। এদের সঙ্গে আরো যুক্ত করল নন্দনতত্ত্ব ও নৈতিকতার ধারণা। প্রেম তাই এক গভীরতর সাংস্কৃতিক বিভ্রমের (illusion) নাম। আর ভালবাসা হল এক আদর্শিক বিভ্রম। প্রেমের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করবার প্রচেষ্টার নাম ভালবাসা। এই বিভ্রমকে প্রকৃতি প্রশ্রয় দিয়েছে। কারণ এটা ছাড়া বুদ্ধিমান মানুষদের দিয়ে নিয়ত সন্তান উৎপাদন ও বংশ বৃদ্ধির কাজ চালু রাখা সম্ভব হত না। মানুষ আনন্দলোভী প্রাণী কিন্তু প্রকৃতি মানুষের আনন্দ নয় বরং সংখ্যাবৃদ্ধিতেই আগ্রহী। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে একটা মনোরম আপোষের নাম হল “প্রেম”। প্রেম তাই একই সঙ্গে তীব্র আনন্দ ও যাতনার।

ফ্রয়েড বলেন, প্রেমের যে ক্ষেত্রগুলোকে আমরা যৌনতাবহির্ভূত মনে করি তা আসলে যৌনতাবহির্ভূত নয়। যৌনতা ব্যতীত কোন সৌন্দর্য চেতনা ও প্রেম নেই। তাই পিউবার্টি (puberty) বা যৌনতা চেতনার উন্মেষের আগে শিশুকে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ইত্যাদি কিছুই ঠিকমত শেখানো যায় না।

অনেকেই প্রেম ও ভালবাসাকে আলাদা করার চেষ্টা করেন। কেবল যৌনতাকেন্দ্রিক মমতাকে প্রেম ও যৌনতা বহির্ভূত মমতাকে ভালবাসা বলে চিহ্নিত করতে চান। কিন্তু বাংলা ভাষায় এদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। আমরা যৌন প্রেমকে ভালবাসাও বলি আবার যৌনতা বহির্ভূত ভালবাসাকেও প্রেম বলি, যেমন- দেশপ্রেম।

তবে বাংলায় এ শব্দ দুটো বেশিরভাগ সময় সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দুটো শব্দই লৈঙ্গিক প্রেম ও লিঙ্গ বহির্ভূত প্রেম বুঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন মানবপ্রেম ও নারীপ্রেম এই দুটো শব্দের মধ্যে প্রেম শব্দটি যৌনতা বহির্ভূত ও যৌন ভালবাসা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে “মানবভালবাসা” বা ” নারীভালবাসা” একই অর্থ প্রকাশ করলেও এদুটি শব্দ বাংলা ভাষার বাগরীতি বহির্ভূত। মানে প্রায় সময় এদের মধ্যে ব্যবহারগত ভিন্নতা আছে কিন্তু অর্থগত ভিন্নতা নেই।

দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়