Pakundia Pratidin
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৫ মে ২০২৩
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইতিহাস
  3. ইসলাম ও জীবন
  4. কৃতি সন্তান
  5. জাতীয়
  6. জেলার সংবাদ
  7. তাজা খবর
  8. পাকুন্দিয়ার সংবাদ
  9. ফিচার
  10. রাজনীতি
  11. সাহিত্য ও সংস্কৃতি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নজরুল নার্গিসের প্রেম,বিরহ ও অভিমান

প্রতিবেদক
পাকুন্দিয়া প্রতিদিন ডেস্ক
মে ২৫, ২০২৩ ৭:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সুলতান আফজাল আইয়ূবী

আমাদের জাতীয় কবি নজরুল। ঝাঁকরা চুলের বাবরি দোলানো কখোনা বা চুলের ওপর লম্বা কিস্তি টুপি, পাঞ্জাবি ও ধুতির সঙ্গে চাদরে আবৃত স্বকীয় পোশাকের এক মহান মানুষ বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম।প্রেম, দ্রোহ,বিদ্রোহ, চেতনা কি ছিল না তার?

১৯২০ সালের দিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পরিষদে এসে পরিচয় হয় কুমিল্লা জেলার মুরাগনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের পুস্তক ব্যবসায়ী আলী আকবর খানের সঙ্গে। বাউন্ডুলে নজরুল ছুটলেন আলী আকবর খানের বাড়িতে। খাঁ বাড়ীর পরিবেশ নজরুলকে বিমোহিত করে। পুকুর পাড়ে বসে মনের আনন্দে বাঁশের বাঁশিতে সুর তুলেন। নজরুলের সেই বাঁশের বাঁশির সুর শুনে ষোড়শী নার্গিসের মনে সৃষ্টি হয় রেখাপাত। হৃদয়ে জাগে দোলা, বুকে জাগে স্পন্দন। নজরুলের প্রেম কাননে ফোটে নার্গিস ফুল। নার্গিস আকবর আলী খানের ভাগ্নি।
প্রেমিক কবি রচনা করেন
‘কার বাঁশি বাজিল
নদী-পাড়ে আজি লো?
নীপে নীপে শিহরণ কম্পন রাজিল
কার বাঁশী বাজিল?

নজরুল নার্গিসের শুরু প্রেম। প্রেম এক মারাত্মক নেশা, যার রোমাণ্ঠিকতা মাদকের চেয়েও আসত্তি তৈরী করে হৃদয়ে। প্রেম থেকে অবশেষে বিয়ে। মহা ধূমধামে ভাগ্নী নার্গিসকে বিয়ে দিলেন বাউন্ডুলে নজরুলের হাতে। কবির মানস বধূ নার্গিসকে জীবন-সঙ্গিনী হিসেবে পাবার মুহূর্তে বেজে ওঠে এক অশনি সংকেত। কাবিননামায় লেখা হয়েছিল বিয়ের পর নার্গিসকে নজরুল দৌলতপুর থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারবেন না। নজরুলকে ‘ঘর জামাই’ হয়ে নাকি চিরদিনই থাকতে হবে দৌলতপুরে।

কবি নজরুল ছিলেন পৌরুষদীপ্ত এক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। ‘ঘর জামাই’ হয়ে শ্বশুর বাড়ি দৌলতপুরে থাকা কবির ব্যক্তিত্বে হানে চরম আঘাত। এতে কবি তাঁর সহজাত প্রবৃত্তিতে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। তবে সামাজিক মান-মর্যাদা সর্বোপরি ভালোবাসার মানস প্রিয়তমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে। ধুমধামের সঙ্গে বিয়ে হয় সম্পন্ন।

রাত পোহাতে না-পোহাতে ঝরে পড়লো নিশি ভোরের নার্গিস। মুছে গেল হাতের মেহেদী। খসে পড়লো নাকের বেসর- নাকফুল। ‘ঘরজামাই’ হয়ে থাকার কথা শুনে কবি দুঃখে ক্ষোভে, ক্রোধে যেন ফেটে পড়লেন। নববধূ নার্গিসকে দৌলতপুর থেকে তাঁর সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলেন কলকাতায়। ছিন্নমূল বাউন্ডুলে কবিকে বুঝে উঠতে পারেননি নবপরিণীতা কবি-বধূ নার্গিস আ’সার খানম। নাম ঠিকানা বিহীন বাঁধন-হারা এক কবির সঙ্গে ঘর বাঁধলেও নার্গিস অজানা-অচেনা অনিশ্চিত পথে সেদিন পা বাড়াতে সাহস পাননি। একরোখা নজরুল বিদ্যুৎ গতিবেগে রাতেই বাসর ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে এলেন। ওই রাতেই নজরুল অঝোর বৃষ্টি উপেক্ষা করে ১১ মাইল পথ পায়ে হেঁটে মুরাদনগরের দৌলতপুর ত্যাগ করে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউ রোডের বাড়িতে আসেন। এরপর তিনি কখনো দৌলতপুরে ফিরে যাননি।

নজরুল চরমভাবে বিদ্রোহী ছিলেন, কথাটি সত্য, তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে তিনি তাঁর বিদ্রোহী সত্তাকে শোক ও বিরহে অভিমানে মিশে যেতে দিয়েছিলেন যা তিনি প্রকাশও করেছেন। তাঁর মুখের কথা বন্ধ হয়ে যাবার বছর খানিক আগে কবি একটি ভবিষ্যতদর্শী স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দেন, যে ভাষণটির শিরোনাম, “যদি আর বাঁশি না বাজে”। সে ঘনিষ্ঠ রক্ত-লেখাটিতে বললেন, “যদি আর বাঁশি না বাজে আমি কবি বলে বলছিনে আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি আমায় ক্ষমা করবেন—আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।”

নজরুল নার্গিস প্রেম,বিয়ে অবশেষে চির অভিমানী হয়ে কাটালেন বাকি জীবন।

তথ্যুসুত্র: আবদুল মান্নান সৈয়দ কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত শ্রেষ্ঠ নজরুল।