
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই প্রথম বিশ্বের বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিগণ নামাজে একে অপর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুম্মার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। এর আগে কখনও এরকম দূরত্ব বজায় নামজ আদায় করতে দেখা যায়নি।
তাই এই পরিস্হিতিকে কেন্দ্র করে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতিতে মসজিদে নামাজের জামাতে এক মুসল্লি অপর মুসল্লি থেকে দূরত্বে দাঁড়াতে পারবে কিনা?
প্রথমত, জামাতের সহিত নামায আদায়ের সময় মুসল্লিগন একে অপরের সাথে মিলে, ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানো সুন্নত ৷ দুজন মুসল্লির মাঝে একজন দাঁড়াতে পারে এ পরিমান ফাঁকা রাখা নিয়ম ও সুন্নত পরিপন্থী৷ কেননা নামাজে কাতার সোজা করা এবং পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ানো সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে-أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَ تَرَاصُّواঅর্থ : আপনারা আপনাদের কাতার সোজা করুন এবং পরস্পর মিলে দাঁড়ান।’ (বুখারি)
বুখারি মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে-سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَاِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِن اِقَامَةِ الصَّلاةِ অর্থ : ‘কাতার সোজা করুন, কারণ কাতার সোজা করা নামাজ প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত।’ (বুখারি-মুসলিম)
হাদিসে আরও এসেছে-‘কাতার সোজা করুন, কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে দাঁড়ান, কাতারের মাঝে ফাঁক বন্ধ করুন, হাতগুলো সহজ ও স্বাভাবিকভাবে রাখুন, শয়তানের জন্য কাতারের মধ্যে খালি জায়গা বন্ধ করুন। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তাকে মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিবেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
عن عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَنْ سَدّ فُرْجَةً فِى صَفٍّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَ بَنٰى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنّةِ.
অর্থাৎ আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কাতারের মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দিবেন।
[তবারানী, হাদীস ৫৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস ৩৮২৪]
এই হাদীসগুলির আলোকে বলা যায় যে, স্বাভাবিক অবস্থায় দুজন মুসল্লির মাঝে একজন দাঁড়াতে পারে এ পরিমান জায়গা ফাঁকা রেখে দাঁড়ানো সুন্নতের পরিপন্থী৷
দ্বিতীয়ত, আইম্মায়ে আরবায়ার মতে, নামাজে ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানো নামায সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত কিংবা রুকন নয় ৷ তাই সর্বসম্মতিক্রমে ফাঁকা রেখে নামায পড়ে ফেললে নামায হয়ে যাবে ৷ কিন্তু নামায মাকরুহ হবে৷
আর তৃতীয়ত, ফকিহগণের নিকট এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম যে, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ অবশিষ্ট থাকে না। পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনের তাগিদে অনেক নিষিদ্ধ বিষয়ও মানুষের জন্য বৈধ।(অর্থাৎ ওযরের কারণে কারাহাত বা মাকরুহ কাজ মাকরুহ থাকে না ৷ তা বৈধ হয়ে যায়)৷
(ফতহুল কাদীর, ১/৩৬০-৬১; হাশিয়াতুল খারাশী, ২/৩৩; নেহায়াতুল মিনহাজ, ২/১৯৫)
অতএব বর্তমান করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবের সময় করোনাভাইরাস সংক্রমনের আশংকায় মসজিদে জামাআতের সাথে নামাজ পড়ার সময় কাতারবন্দি মানুষের জন্য দূরত্ব বজায় রেখে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ানোয় কোনো ক্ষতি নেই। ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ালে নামাজ হবে না এমনটি নয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনায় ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে নামাজের কোনো ক্ষতি হবেনা ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আ’লাম।
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে হিফাজত করুন এবং আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস মাও: আজিম উদ্দিন বিন মজনু।
ইমাম এন্ড খতিব; হ্যাটফিল্ড জামে মাসজিদ,আমেরিকা।