সুইসাইড নোট
আকিব শিকদার
মা বাবা রাজি নয়, বলে দিয়েছে— “হয় ছেলেটাকে ভুল, না হয় এ সংসারের তৃসীমানা ছেড়ে ভাগ।”
মধ্যরাতের বিছানায় মেয়েটা ভাবে, নিম্নশ্রেনীর প্রেমিকার মতো প্রেমিকের হাত ধরে পালানো তাকে কি মানায়…!
সে চিৎ হয়ে শুয়। বুকের উপর প্রেমিকের দেওয়া মালাটা। লকেটে চুমুর ভঙ্গিমায় ঠোট লাগাতেই মনেপরলো, নিশাত তাকে পরিয়ে ছিলো
এক বিকেলে রেললাইনে দাড়িয়ে। সে দিয়েছিলো নিশাতের হাতে হাতঘড়ি। আর বলেছিলো— “আমাকে ভুলে অন্যকারও হাত ধরতে পারবে? অন্যের দেওয়া ঘড়ি তুমি পরতে পারবে এই হাতে?” আহা স্মৃতী… তরতাজা স্মৃতী, চোখে ভাসে চোখ বুজলেই।
ভালোবাসার যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক, বেচে না থেকে ভালো মৃত্যুকে বরণ। নৌরিন মালার লকেটে দুটু চুমু খেলো, আর খেলো গুনে গুনে আঠারোটি ঘুমের অসুধ। তারপর চিরনিঝুম ঘুম।
পুলিশ তার লাশ নিয়ে গেলো লাশকাটা ঘরে। গিলটির মালাটা গলা থেকে ছিড়ে ছুড়ে দিলো ময়লার ঝুড়িতে। দাফন কাফন শেষে নিস্তব্ধ নিরালা। সপ্তাহখানেক পর মা ঘর ঝারু দিতে গিয়ে দেখে খাটের নিচে একটা চিরকোট, সুইসাইড নোট, তাতে লেখা— “আমার মৃত্যুর পর গলা থেকে মালাটি কেউ খুলবে না প্লিজ, এমনকি শেষ গোসলের বেলাতেও না।
আমি ওর স্মৃতী বুকে নিয়ে কবরে ঘুমাতে চাই।”
এদিকে ছেলেটা কি করে ভুলবে প্রেমিকার মিনতী! তাই রেলের চাকার নিচে ধরে দিলো দুটো হাত, কেটে গেলো কনুই অব্দি। এই হাতে সে
কখনো কাওকে জরিয়ে ধরতে চায় না আর।
হারুয়া, কিশোরগঞ্জ।