জিয়াউল বাতেন
বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা উড়ানো লজ্জা ও অপরাধ। প্রতিটি স্বাধীন দেশের একটি জাতীয় পতাকা আছে। প্রতিটি পতাকার একটি পরিমাপ, নির্দিষ্ট রং-রূপ, ডিজাইন রয়েছে। পতাকা কখন! কোথায়! কিভাবে উত্তোলন করতে হবে? আবার কোথায় উত্তোলন করা যাবে না, কখন পতাকা নামাতে হবে তার একটি আইন রয়েছে। যদি কেউ তার অবমাননা করে তাহলে কি ধরণের শাস্তি হবে তারও বিধান আছে। প্রতিটি দেশেই কঠোরভাবে পালন করা হয় জাতীয় পতাকা আইন।
আসন্ন ২০ নভেম্বর ২০২২ থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে ঘিরে ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল এই দুই মেরুতে ভাগ হয়ে যায় । দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা , উপজেলা , ইউনিয়ন ও গ্রামে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল কিংবা অন্যকোন দেশের পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দেয় । রাজধানী সহ সারা দেশে এত পরিমান ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার পতাকা উত্তোলন করা হয় , এই সময়ে বাইরের দেশ থেকে বাংলাদেশে কেউ আসলে বুঝতেই পারবে না যে ,কোন দেশে আসছে।
অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলো ছাড়া অন্য কোনো স্থানে অন্য রাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলন করতে হলে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। ১৯৭২ সালের পতাকা আইন লঙ্ঘণ করে যত্রতত্র বিদেশি পতাকা উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনর নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। দেশের মাটিতে বিদেশী পতাকা ওড়ানোর বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটা নীতিমালা আছে। আপনি জেনে শুনে আইন অমান্য করে নিজের নিজের দেশের অসন্মান করছেন, তখন আপনি আর যা-ই হোন না কেন, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ নন। আপনাকে এই কাজ থেকে বিরত রাখা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব।
লিংক:http://গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২
বাংলাদেশের পতাকা উঠানো নামানোর ব্যবহার বিধি সম্পর্কে কয়জনে জানে আর পতাকা আইন সম্পর্কে কত জনই বা জানতে চায়,? ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা যেমন আর্জেটিনা, ব্রাজিল, জার্মানী, ইটালী, ফান্সের পতাকা বাংলার আনাচে, কানাচে,ঝাড়ে, জঙ্গলে,বিল্ডিং এর ছাদে,গাছের উপরে,মোবাইল টাওয়ারে, কেউ আবার ইচ্ছামত বাংলাদেশের পতাকাকে সম্মান দিতে গিয়ে বিদেশী বড় বড় পতাকার সাথে ছোট একটি বাংলাদেশের পতাকা উড়ায়। কেউ আবার পতাকার রঙে বাসা বাড়ি রং করে।
আর হ্যাঁ খেলা মানুষকে আনন্দ দেয়, এক এক জনের ভাল লাগার দল ভিন্ন হতে পারে তাদের জন্য আমরা হাত তালি দিব, অভিনন্দন জানাবো, ব্যানার , ফেস্টুন দিব,ফেইসবুকে দিব, নানা উপায়েই আনন্দ করতে পারি। কিন্তু বিদেশী পতাকা উড়িয়ে নয়। ফুটবল বিশ্বকাপের টান টান উত্তেজনায় কাঁপা দোষের নয় বরং খেলাকে প্রত্যেকেই ভালোবাসা উচিত । ফুটবল বিশ্বকাপের মত আন্তর্জাতিক একটা আসর আমরা অবশ্যই উপভোগ করব, তবে জাতি হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে তবেই করব। তাই বলে বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করে অন্যকোন দেশের পতাকাকে গগনচুম্বীভাবে উড়ানো প্রকৃত দেশ প্রেমিকদের কাজ হতে পারে না । বিশ্বের কোন দেশে বিদেশী পতাকা উড়ায় না । এমনও লোক আছে খেলার সময় যে পতাকা উড়ায় আর কোন দিন নামায় না বিশ্বকাপের ৬ মাস পর বাংলাদেশে যদি ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনা থেকে থেকে লোক আসে, এসে দেখবে তার দেশের পতাকা বৃষ্টিতে ভেজে আর রোদে শুকাচ্ছে তাহলে তারা কি ভাববে? বাঙালীরা জাতীয় পতাকা কি ? পতাকার মর্যাদা সম্মান কিভাবে দিতে হয়, তারা জানে না। এটা বাংলাদেশের জন্য লজ্জা ও অপরাধ। বিশ্বের অনেক নামীদামী দেশও টি-২০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের করতে পারে নাই। সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলছে। আর টিভির পর্দায় সারা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা,, যে পতাকায় জড়িয়ে রয়েছে ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের দাগ, যখন লাল সবুজ পতাকা স্ট্যোডিয়ামে ফক ফক করে উড়ে, যখন একদল তরুণ যুবক বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে শ্লোগান দেয় তখন আমাদের আনন্দে বুক ফুলে যায়।
কিন্তু এখনে দু:খের ও লজ্জার বিষয় হলো ক্রিকেট বিশ্ব কাপ শুরু হওয়ার পর কিন্তু কোন জায়গায় বাংলাদেশের কোন পতাকা উড়াছে তা চোখে পরে নাই। এমন কি বাংলাদেশের জার্সি পড়ে ঘুরছে তাও চোখে পড়ে গুটা কয়েক তরুন তবে কোন মেয়ে জার্সি পড়েছে এমন চোখে পড়েনি।
আজ যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে বিশ্বে মাথা উচু করে দাড়িঁছে , আমরা আজ বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছি না, খেলোয়ারদের উৎসাহিত করার জন্য তেমন কিছু করছি না। আপনারা যদি আরেকটুকু গভীর ভাবে ভাবেন , যে সব দেশের জন্য আমরা পতাকা উড়িয়ে কোটি কোটি টাকা নষ্ট করছি সে সব দেশ আজ কি তাদের দেশে বাংলাদেশে পতাকা উড়াছে? আমার জানা মতে যদি কেউ পতাকা উড়ায় তাহলে জেলে যেতে হবে। তাহলে কেন আমারা বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা উড়াব। করোনা মহামারীর পর রাশিয়া ইউক্রেন যোদ্ধ এ রকম বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আসুন আমরা দেশের কোটি কোটি টাকা নষ্ট না করি। দেশের যুব সমাজের প্রতি অনুরোধ যাতে নিজেদের পতাকাকে অবমাননা কিংবা অমর্যাদা না করা হয় সে ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন । যে পতাকাটি অর্জন করার জন্য ত্রিশ লাখ মানুষ বুকের রক্তের ফসল। অতীতের সব কথা ভূলে গিয়ে ফুটবলের আসন্ন বিশ্বকাপ আসরে যাতে দেশের পতাকাকে তার প্রাপ্ত মর্যাদার স্থানে রেখে ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে উত্তোলন করা হয়, সে ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা এবং কঠোরতা কামনা করছি ।
জিয়াউল হক বাতেন
কলামিষ্ট, সংগঠক ও রাজনৈতিককর্মী