বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বৃষ্টিতে কোন রোমান্টিকতা নেই
Update : বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২, ২:৫২ অপরাহ্ণ

জহিরুল ইসলাম পাপেল

দুপুর থেকে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুমঝুম করে বৃষ্টি হচ্ছে না। টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। সারাদিন এমন ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে কোন রোমান্টিকতা নেই। যা আছে তা হচ্ছে বিরক্তি।

এভাবে বৃষ্টি হলে কোন অজুহাতে কাজে ফাঁকি দেয়া যায় না। বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে ক্লাস মিস দেয়া যায় না। এমন বৃষ্টিতে রাস্তায় নালার পানি উঠে থৈ থৈ করে না। কিন্তু রাস্তায় ভয়ানক ময়লা কাদা আর ঝড়তে থাকা অবিরত বৃষ্টি তিতিবিরক্ত করে ফেলে।

সেই বিরক্তির সাথে আরেকটি মহাবিরক্তি যোগ হয়েছে।
তা হলো জ্বর।

পৃথিবীতে জ্বরের চেয়ে বড় আপদ আর আছে বলে মনে হয় না। বৃষ্টিতে ভিজলে, রোদে হাঁটলে, ওয়েদার পাল্টালে, ব্যথা পেলে ইত্যাদি এহেন কোন কারণ নেই যার কারণে মানুষের জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে না।

আবার জ্বর আসার পর সুস্থ হতে ঔষুধ খেলেও লাগবে ৭ দিন, না খেলেও লাগবে ৭ দিন। সুস্থ হবার পর যে শরীরটা থাকবে, তাতে না থাকবে বল আর না থাকবে শক্তি।

গত দু’দিন আগে বৃষ্টিতে ভিজে আমি সেই মহাবিরক্তিকর জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেছি।

কিন্তু দেশের উচ্চশিক্ষিত হয়ে উঠতে থাকা সমাজের মধ্যেকার একদল কামলা, যাদের ভদ্রকথায় গৃহশিক্ষক বলে সম্বোধন করা হয়, তাদের বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় না।

তারা সামান্য বেতনের টিউশনে একদিনের কামাই করলে তার জন্য গড়ে ১০-১৫ মিনিট জবাবদিহিতার কবলে পড়তে হয়।

এতেও বিরক্ত যত-ই হোক না কেন, তাদেরকে মিউ মিউ করে টিকে থাকতে হয়। অথবা ঠাট্ দেখিয়ে টিউশন ছেড়ে চলে আসতে হয়।

আমার পকেটের বর্তমান টানাহ্যাঁচড়া অবস্থায় আমার মধ্যে ঠাট্ দেখানোর মতন ব্যাকআপ নেই। আবার জবারদিহিতার বিরক্তির কাছে জ্বরের বিরক্তি কিছু-ই না।

তাই জ্বর নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছি।

আমার কোন ছাতা নেই। একটা ছাতা অবশ্য ছিলো। গতবছর বন্ধুর বাসায় ভুলে ফেলে এসেছিলাম। আনবো আনবো করে সে ছাতা আর আনাও হলো না। তাছাড়া নতুন ছাতা কিনবো কিনবো করেও কেনা হয়নি।

জ্বর গায়ে বৃষ্টিতে ভিজলে নতুন করে জ্বর স্কোয়ার হবার সম্ভাবনা নেই। থাকলেও কিছু করার ছিলো না।

প্রায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্টুডেন্টকে পড়ালাম। পড়ানো শেষ করে টিউশনের বাসা থেকে বেরিয়ে আরেক দফা বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে বেশ খোলা একটা স্থানে বসে থাকি। খুব বাতাস হোক। সেখানে বসে বসে সিগারেট খাই।

নরসুন্দা নদী এখান থেকে কাছেই। এ নদীর ঘাটের চেয়ে খোলা জায়গা আর মাথা এলো না। সমস্যা হলো এখানে এ সন্ধ্যের সময়টা লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে।

আজ তেমন কোন মানুষ নেই। ফাঁকা হয়ে আছে পুরো এলাকা। দু একজন জেলের মতন দেখতে লোক হঠাৎ হাঁটাহাঁটি করছে। কয়েকটা ঘুপচি কোণা দেখে কিছু প্রেমিক-প্রেমিকা ছাতা উঁচিয়ে বসে আছে। ছাতা ঠিক এমন ভাবে মেলে দেয়া আছে, ছাতার ভেতরে হয়তো আলোও বড্ড মুশকিলে ঢুকছে!

একটা চারকোণা চাতানের উপর বসে সিগারেট ধরিয়েছি। ইদানিং অনেক বাতাসেও সিগারেট ধরাতে পারি। ম্যাচের কাঠিকে কে কতটা কৌশলে ধরতে পারে, তার উপরেই নির্ভর করে সিগারেট ধরানোর সফলতা।

প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে। সে বাতাস হয়তো শুধু পৃথিবীর কাছাকাছিই হচ্ছে। আকাশের মেঘগুলোর কোনো দৌঁড়ঝাপ নেই। মেঘ যদি না দৌঁড়ায়, আকাশটাকে মরা মনে হয়। আজ আকাশটাকে ঠিক অমন মরা মনে হচ্ছে।

ঘন কালো একটা মরা আকাশ।

ঝিড়ঝিড় বৃষ্টি হয়েই চলছে। এ বৃষ্টির সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটা হচ্ছে, বৃষ্টির ছটাতেও আমার সিগারেট ভিজে নিভে যাচ্ছে না। বরং বাতাসে শটাং জ্বলছে। ওদিকে আমি ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছি!

আঁধারে এ জায়গাটা আশ্চর্য রকমের মায়াবী হয়ে যায়। লোকে-লোকারণ্য হয়ে থাকলে সে মায়া খুঁজে পাওয়া যায় না।

আজ খুঁজে পাচ্ছি।

চুপচাপ বসে আছি।

পুরাণো কাঠের বাটের ছাতা মাথায় একটা ছেলে এগিয়ে আসছে এদিকে। বয়স ৭-৮ হবে। হাতের বালতিতে চায়ের ফ্লাস্ক।

“চা খাইবেন ভাইয়া?”
“খাওয়াবি? দে নাহয়!”
“ছিগরেট্ ও আছে। খাইবেন?”
“কোনটা আছে?”
“খালি ডার্বি আর মেরিজ আছে। বালা ছিগরেট্ নাই।”
“দে, ডার্বির প্যাকেটটা দে।”
“ভাইয়া, একটা কথা জিগাইতাম..”
আমি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “বল।”
“আফনের কি মন বেশি খারাপ? মন খারাপ না থাকলে বাসায় চইলা যান। এই বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বরে এক সপ্তাহ কাইত!’
“আর যদি মন খারাপ থাকে?”
“যদি মন খারাপ থাকে, তাইলেও কাইৎ। কাইৎ থাকতে থাকতে মন খারাপি গায়েব হই যাইবো।”

আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে ওর কথা শুনছি আর হাসছি। ছেলেটা নিজের ছাতাটা আমার মাথার উপরেও ধরে রেখেছে। মনে হয় আমার জন্য মায়া সৃষ্টি হয়েছে ওর মনে। এ মায়া মানুষের মনে উৎপন্ন হয় কী করে?

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ