সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মরহুম শামসুল হক গোলাপ এমপি ; স্মৃতিচারণ
Update : রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৫৫ অপরাহ্ণ

পাকুন্দিয়ার রাজনীতির প্রাণপুরুষ এ কে এম শামসুল হক গোলাপ (মৃত্যু: ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯) যিনি এলাকায় গোলাপ মিঞা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক ও তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-১ (পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর) আসনের সাবেক এমপি,ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক।

এ কে এম শামসুল হক গোলাম মিঞা একজন সৎ,আদর্শ,ন্যায়পরায়ন ও সাদামনের মানুষ ছিলেন। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি ও মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল যেন ওনাকে বেহেশত নসীব করেন সেই দোআ করছি । মরহুম এমপি সাহেবের কথা স্মরণ হলেই আমার স্মৃতিস্পটে ভেসে উঠে কয়েকটি চিত্র, ১৯৯৩/৯৪ সাল আমি কিশোরগঞ্জ শহরে মেসে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পড়ি, হঠাৎ শামীম ভাই(বর্তমান জাঙ্গালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান) নগুয়া মেসে এসে বললো চলো গোলাপ মিঞা সাহেবের বাসায় যাই,আমি আর আমার বন্ধু সেলিম সহ তিনজন উনার কিশোরগঞ্জ শহরের ফিসারী রোডের বাসায় গেলাম,আগে থেকেই গোলাপ মিঞা সাহেব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন গ্রামের বাড়ী তারাকান্দি বাজারে আসবেন দলীয় একটা কর্মসূচিতে যোগ দিতে,তখন আখড়াবাজার হতে তারকান্দি বাজারে আসতে রিক্সাওয়ালা ১০ টাকা ভাড়া বেশি চাওয়াই, আমাদেরকে নিয়ে তিনি মোরগ মহল হেঁটে এসে রিক্সায় উঠেয়ছিলেন,সেই সময় অনেকবার উনাকে বাই সাইকেল চালাতে দেখেছি,অর্থাৎ তিনি তখনই সাবেক একজন এমপি,রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। অথচ তাঁর জীবন ধারন ছিল কত সাধারন।

আরেকটি ঘটনা, ১৯৯৪ সাল,একদিন ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজে কম টাকায় ফরম ফিলাপ করার জন্য উনি জেলা প্রশাসকের কাছে আমাকে ও বন্ধু সেলিমকে নিয়ে যাবেন,জেলা প্রশাসক মাকসুদুল হক তখন কলেজের সভাপতি এবং উনি গভনিং বডির সদস্য। আমরা সকাল ১০ টার দিকে রিক্সা নিয়ে উনার বাসা সামনে অপেক্ষা করছি,তা দেখে তিনি রেগে গেলেন, উনার প্রশ্ন? এক-দেড় কিলোমিটার রাস্তা রিক্সায় যেতে হবে কেন?তোমাদের কি টাকা বেশি হইছে? রিক্সা ছেড়ে আমাদেরকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নিকট হতে হেঁটে ডিসি অফিস গিয়েছিলেন।

এই ধরনের আরও অনেক ঘটনা আছে,তাঁর মত সৎ নেতা এমপি পাওয়ার সংখ্যা দেশে খুবই কম,তাই গোলাপ মিঞা সাহেবকে এই এই অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ সততার মূর্তপ্রতীক হিসাবে চিনতেন।

পারিবারিকভাবে আমার বড় চাচা মরহুম মোঃ ছোরত আলীর সাথে খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিলো উনার,সেই সুবাদে কিশোরগঞ্জে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি নিলেই তিনি আমাদের ডাকতেন,উপস্থিত হতাম দলবলে, মিছিল মিটিং এ স্লোগান দিতাম তাঁর সাথে।১৯৯৪ সালে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন মহান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা,কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়ামে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ মহোদয়ের সভাপতিত্বে বিশাল জনসভা,নেত্রীকে ফুলেরতোরা দিয়ে স্টেডিয়ামের প্রধান গেইটে আমাদের বেশ কয়েকজনকে নিয়ে নেত্রীকে বরন করেছিলেন এই মহান নেতা মরহুম একেএম শামসুল হক গোলাপ মিঞা।

১৯৯৬ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ শুরু করেন, জীবনের শেষ সময়েও তিনি অর্থের অভাবে ঢাকার শান্তিনগরের বোনের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন,নানা শারিরীক জটিলতায় ১৯৯৯ সালে ২৫ শে সেপ্টেম্বর ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন।

আজ তাঁর জন্মভূমি পাকুন্দিয়ার তারাকান্দিতে ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া রইলো আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুক।

মোঃ শফিকুল ইসলাম শফিক
সাবেক সভাপতি, চরটেকী উচ্চ বিদ্যালয়,পাকুন্দিয়া কিশোরগঞ্জ।

 

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ