বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কালিয়াচাপড়া চিনিকলের প্রায় দুই একর জমি বিক্রির চেষ্টা
Update : রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৩ অপরাহ্ণ

পাকুন্দিয়া উপজেলার কালিয়াচাপড়া চিনিকলের প্রায় দুই একর জমি বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,পুলেরঘাট হাইওয়ে সংলগ্ন মাইজহাটি গ্রামে কালিয়াচাপড়া চিনিকলটি ১৯৬৫ সালে স্থাপিত হয়। লোকসানের কারণে ১৯৯৪ সালে বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ২০০৪ সালে এটি বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এই চিনিকলের অধীনে ১৯টি মৌজার বিভিন্ন দাগে মোট ১৮৪.৩ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে চিনিকল চত্বরে রয়েছে ১০২.৭৫ একর জমি।

২০১৫ সালে সরকারের কাছ থেকে চিনিকল, এর অধীনে থাকা সব জমি ও স্থাপনা সাফকবলা দলিলে তিন কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনে নেয় নিটল মোটরস লিমিটেড। সেই দলিলে শর্ত ছিল, ক্রেতা এসব জমিতে শিল্প স্থাপন বা সম্প্রসারণ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। এই শর্তের তোয়াক্কা না করে ধীরে ধীরে ওই সব জমি স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের কাছে বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, চিনিকলের পাকুন্দিয়া সদর মৌজার জায়গায় ট্রাক দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে মিস্ত্রিরা দেয়াল নির্মাণ করছে। মঠখোলা ও চারিপাড়া মৌজার জায়গার চারপাশে পাকা খুঁটি পুঁতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছেন ক্রেতারা। ওই সব স্থান কেউ কেউ ফের বিক্রির জন্য প্লট তৈরি করছে।

এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমি ৫২ শতাংশ জমি কিনেছি। এখন এই জমি প্লট আকারে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। শুধু এটি নয়, আরো ছয়টি আখ ক্রয়কেন্দ্র বিক্রি করা হয়েছে। প্রত্যেকে দোকান করার জন্য প্লট আকারে এসব জমি কিনে নিচ্ছেন।’

কটিয়াদী উপজেলার চারিপাড়ার জমি প্রসঙ্গে পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এমদাদুল হক জুটন বলেন, ‘আমি চারিপাড়া মৌজার ৫২ শতাংশ জমি সাফকবলা দলিল মূলে কিনেছি।’

এ ছাড়া মঠখোলা মৌজার ৫২ শতাংশ জমি কিনেছেন মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন।

পাকুন্দিয়া পৌর সদরের বাসিন্দা দিলিপ মিয়া বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর মামুনের কাছ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ জমি কিনেছি ৬৩ লাখ টাকায়। তবে মামুন বলেছেন, দলিলে স্বাক্ষর করবেন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।’

একই এলাকার বাসিন্দা মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘মামুনের মাধ্যমে আমি এখান থেকে ৭ শতাংশ জায়গা কিনেছি।’

এসব জমিজমা ঠিকঠাক ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ছিল প্রাইভেটাইজেশন কমিশন, যা বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডা।

এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. মোহসিন উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সাফকবলা দলিল সাধারণত শর্তহীন হয়। তবে কর্তৃপক্ষ নিটল মোটরসকে চিনিকলসহ এর জায়গাজমির যে দলিল দিয়েছে, তা শর্তযুক্ত। আমার কাছে কম্পানির লোকজন এসেছিল জমি বিক্রির দলিল করতে। কিন্তু আমি তাদের বিডার কাছ থেকে অনাপত্তি সনদ নিয়ে আসতে অনুরোধ করেছি। এ কারণে জমি বিক্রির দলিল সম্পাদন হয়নি।’

এ বিষয়ে নিটল মোটরসের কালিয়াচাপড়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এসব তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি ঢাকা কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। ঢাকা কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক ওমর ফারুকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বক্তব্য না দিয়ে সশরীরে যেতে বলেন।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, ‘দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে এসব সম্পত্তি বিক্রি করা অবৈধ। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই বিষয়টি বিডাকে জানাতে হবে।’

বিডার পরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায় গনমাধ্যমকে বলেন, ‘কালিয়াচাপড়া চিনিকলের জায়গাজমি কোনোভাবে বিক্রি যোগ্য নয়। এটি একেবারে অবৈধ কাজ। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

পাপ্র/সুআআ

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ