সুলতান আফজাল আইয়ূবী
বিয়ে মানে আমার কাছে বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, সমঝোতা, হৃদয়ের সম্পর্ক আর ভালবাসা। আমাদের বাঙ্গালি মুসলিম সমাজের অধিকাংশ জায়গায় বিয়ে গুলো সুন্নাহ অনুযায়ী হচ্ছেনা, আর বিয়েকে কেন্দ্রকরে প্রচলিত সংস্কৃতি, হাই লেভেলের সাউন্ডে গান বাজনা না হলে তো বিবাহ বাড়ী বলেই আমরা বিশ্বাস করিনা।
কিশোরগঞ্জ থেকে ময়মমনসিংহ, মুক্তাগাছার সৈয়দপাড়ায় পৌঁছালাম দুপুর প্রায় তিনটায়। বিয়ে বাড়ির পরিবেশটাই ছিলো অন্যরকম। পুরুষ মহিলাদের খাবারের আয়োজন ছিলো সম্পূর্ণই আলাদা। পর্দার খেলাফ কিছু হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
মোহরে ফাতেমী অনুযায়ী মোহরানা নির্ধারণ হলো। আমাদের সমাজের অধিকাংশ জায়গায় বিয়ে হয় বর- কনে দুজনের কবুল বলার মধ্য দিয়ে। অথচ, সুন্নাহ হচ্ছে ইসলামী বিবাহে বর, কনে এবং কনের অভিভাবকের(ওয়ালী) সম্মতির(কবুল) প্রয়োজন হয়। বৈবাহিক চুক্তিটি অবশ্যই কনের অভিভাবক(ওয়ালী) এবং বরের দ্বারা সম্পাদিত হতে হবে, বর এবং কনের দ্বারা নয়। কনের নিকটস্থ পুরুষ অভিভাবক কনের ওয়ালী হবেন, প্রাথমিকভাবে কনের বাবাকেই ওয়ালী হিসেবে গণ্য করা হয়। আজকের এ বিয়েতে এমনটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুৎবা। গতানুগতিক কয়টি বিয়েতে খুৎবা হয়? আজকের বিয়ের খুৎবা পাঠের দ্বায়িত্ব ছিল আমার উপর, অতিসম্মান দেখাতে গিয়ে অন্যকে সৌজন্য প্রস্তাব দিতে গিয়ে নিজের আশাটাকেই হারালাম। বিবাহ সমাপ্তি দোআর পর আসরের সালাতের ইমাম কে হবে? সর্বসমামতিক্রমে জামাই আজকের সালাতের ইমাম হলেন। অথচ! বিবাহের দিন অনেকেই বিবাহের ব্যস্ততার কারণে সালাতই পড়েননা।
ছিলোনা গেইটে বরকে আটকানোর নামে হৈ-হুল্লুর। শালীর আবদারে যুবতী মেয়েদের দ্বারা দুলাভাইকে হাত ধোঁয়ানো, আন্ধার ঘরে প্রবেশে আবার নানা ভিন্নধর্মী সংস্কৃতি। অনেক জায়গায় গেইট,হাতধোঁয়া, আন্ধারঘর নিয়ে ঝগড়া বা বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনাও আমরা শুনি। এসবের কিছুই ছিলোনা এ বিয়েতে।
বিয়ের পর কনেকে তার দুলাভাই বা এমন সম্পর্কের কোলে করে গাড়ীতে তুলে দেওয়া আরেক সংস্কৃতি। অথচ, এ কনেকে তার বাবা হাত ধরে গাড়ীতে তুলে দিয়েছেন, আর কনে ছিলো সম্পূর্ণ হিজাবআবৃত।আমরা বন্ধু-বান্ধবরা চাইলেও তার বউকে কিঞ্চিৎ দেখারও কোন সুযোগ ছিলোনা।
অনেকেই হয়তো বলবেন, এভাবে বিয়ে হয় নাকি? বিয়েটা ফাংশে মনে হয়।বা এগুলো দীর্ঘকালধরে চলে আসা বাঙ্গালি সংস্কৃতি। এ ক্ষেত্রে, আমি বলবো। আপনার প্রথম পরিচয় কি বাঙ্গালি না মুসলিম? যদি বাঙ্গালি বলেন,,তবে বলবো বাঙ্গালি সষ্কৃতির গোড়ার দিকে যান, যখন আমাদের মা চাচীদের বিয়ের সময় রিক্সায় কাপড় দিয়ে ঢেকে নতুন বউ যাতায়ত করতো।
ভাই! সবমিলিয়ে আমি আপনি আমরা সবাই জগাখিচুড়ীর ধর্ম ও বাঙ্গালি সংস্কৃতি লালন করছি নিজেদের খেয়াল খুশি মতো। আমরা কেউ ১০০% ধর্ম কর্ম পালন করছিনা বা করতে পারছিনা। তবে মুসলিম হিসেবে আমাদের পুরোপুরি ধর্ম চর্চা করা আবশ্যক কর্তব্য।
আসুন আমাদের বাঙ্গালিয়ানা , ধর্ম, সাহিত্য,সংস্কৃতি সবগুলো হোক সভ্যতা ও শালীনতার ভেতরে।
বি:দ্র: বিয়েটা ছিলো আমার সহপাটি আলামিন ভাইয়ের , ময়মনসিংহের কাছের সহপাটিদের মধ্যে তার সাথের পথচলার স্মৃতিগুলো অমলিন হয়ে থাকবে। পরিশেষে তাঁর শুভ প্রণয়ের জন্য দোআ রইলো। রাব্বেকারীম তাদের দাম্পত্য জীবন সুখময় করে দিক।
بارك الله لك وبارك عليك وجمع بينكما في خير
“শ্যামল ছায়া (ময়মনসিংহ টু কিশোরগঞ্জ)
রাত :৮:৪৫,৯ ই নভেম্বর -২১ ঈ.”
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক,পাকুন্দিয়া প্রতিদিন