বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সাদাকাতুল ফিতর রামাদানকে পূর্ণতা দান করে | সুলতান আফজাল আইয়ূবী
/ ১৯৮ Time View
Update : শনিবার, ২৩ মে, ২০২০, ১০:২০ অপরাহ্ণ

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দিনগুলো পেরিয়ে মাহে রামাদান শেষ হয়ে আমরা ঈদুল ফিতরের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে একটি মূল ইবাদত হলো যাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতরা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি অনুগ্রহ এই যে তিনি আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে কোন ভুল ত্রুটি হলে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন। যেমন নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ভুল-ত্রুটি ক্ষমার ব্যবস্থা রেখেছেন। এমনিভাবে সিয়াম পালনে মানুষের যে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে তার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য যাকাতুল ফিতর আদায়ের বিধান দিয়েছেন। এবং এই যাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে দরিদ্র ও অনাহারী মানুষেরা যেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, ঈদের দিনে তাদের ঘরেও যেন ভাল খাবারের আয়োজন থাকে, কেউ যেন অর্থাভাবে ঈদের খুশি থেকে বঞ্চিত না থাকে সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইসলাম মুসলমানদেরকে যাকাতুল ফিতর/সাদাকাতুল ফিতরের এ বিধান দিয়েছেন।এ প্রসঙ্গে আমরা একটি হাদিস দেখতে পারি, ইবনু আব্বাস (রা) সুত্রে বর্নিত, তিনি বলেন রাসুল (সা) যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন অশ্লীল কথা ও খারাপ কাজ হতে রোযাকে পবিত্র করতে এবং মিশকিনদের খাদ্যের জন্য । যে ব্যক্তি সলাতের (নামাযের) পুর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদকাহ গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি সালাতের পর তা আদায় করবে তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহিত হবে । (আবু দাউদ, ১ম খন্ড,হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ,হা/১৮২৭)

যার কাছে ঈদের দিন নিজের পরিবারের একদিন ও একরাতের ভরন-পোষণের খরচ বাদে এক সা’ পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী থাকবে তার উপরই সদকাতুল ফিতর ফরজ হবে। যার উপর সদকাতুল ফিতর ফরজ তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন তেমনি নিজের পরিবারের অন্য ব্যাক্তিদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে যা কিছু প্রধান খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত যেমন পনির, গম, যব, ভুট্টা, চাউল, খেজুর ইত্যাদি থেকে এক সা’ পরিমাণ দান করতে হবে।

রামাদান মাসে ফিতরা সম্পর্কে আলোচনা হলেই একটি শব্দ উঠে আসে আর তা হল “সা”। এই “সা” এর পরিমাপ কেমন আমরা তা সঠিক জানিনা।(সা সম্পর্কে আমার প্রথম ধারনা হয় কওমী মাদ্রাসার ৭ম ক্লাস নাহভেমীর জামাতের মালাবুদ্দা নামক একটি ফিকহের ক্লাসে)সা হচ্ছে ওজন করার বা মাপার একটি পাত্র। যেমন গ্রামাঞ্চলে উড়া/ ফাতি/ বাটি/ কাঠা ইত্যাদি দ্বারা ধান মাপা হয়। আধুনিক যুগে কিলোগ্রামের প্রচলন হওয়ায় সেই সা’র ওজন এখন আরবেও নাকি বিলুপ্ত প্রায়। সুতারাং সা একটি পরিমাপের পাত্র,কোন ওজনের নাম নয়। এই সা’র ব্যাখ্যায় ফুকহায়ে কেরামের বিভিন্ন মতের মধ্যে একটি সুন্দর, সহজ মত হল: – একজন সাধারণ শারীরিক গঠনের মানুষ অর্থাৎ অধিক লম্বা নয় এবং বেঁটেও নয়, এই রকম মানুষ তার দুই হাত একত্রে করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, ঐরকম পূর্ণ চার অঞ্জলি সমান হচ্ছে এক সা। (ফাতাওয়া মাসায়েল/ ১৭২-১৭৩, ফতোয়া নং ৫৭৩৩ খণ্ড ৯য় পৃ: ৩৬৫)

সদকাতুল ফিতর আদায় করার দুটো সময় রয়েছে। একটি হল উত্তম সময় অন্যটি হল বৈধ সময়। উত্তম সময় হল শাওয়ালের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করা। সদকাতুল ফিতর আদায় করার সুযোগ দেয়ার জন্যইতো ঈদুল ফিতরের সালাত একটু বিলম্বে আদায় করা মোস্তাহাব। সদকাতুল ফিতর আদায় করার বৈধ সময় হল: যদি কেউ ঈদের দু একদিন পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করে দেয় তবে আদায় হয়ে যাবে। তবে ঈদের সালাতের পরে কেউ ফিতরা আদায় করলে সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় হবে না বরং সেটা সাধারণ নফল সদকা / দান হিসেবে আদায় হবে।

 

নিজ শহরের অভাবী ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন। যারা জাকাত গ্রহণের অধিকার রাখে এমন অভাবী লোকদেরকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করতে হবে। একজন দরিদ্র মানুষকে একাধিক ফিতরা দেয়া যেমন জায়েজ আছে তেমনি একটি ফিতরা বণ্টন করে একাধিক মানুষকে দেয়াও জায়েজ।

 

যাকাতুল ফিতর আদায়ে আমাদের সমাজের বেশ কিছু রীতি-নীতি যেগুলো সমাজে প্রচলিত আছে যেমন :- নগদ টাকা দিয়া ফিতরা দেওয়া।ফিতরা হিসেবে নগদ টাকা দেওয়াকে যদিও অনেক ফুকাহায়ে কেরাম সমর্থন করেন। কিন্তু ঈদের আনন্দে আপনার পাশের প্রতিবেশীকে শরীক করার জন্য নগদ টাকার চেয়ে খাদ্য সামগ্রী দেওয়াটাই বেশী আনন্দের ও মহব্বতের।আর নগদ টাকা দেওয়াটা কেমন যেন কৃপা বা সহায়তা মনে হয় পক্ষান্তরে খাদ্য সামগ্রী দেওয়াতে পরস্পরে ভালবাসা মহব্বত সৃষ্টি হবে।আর মূলত খাদ্য সামগ্রী দেওয়াটাই রাসূলের সুন্নাহ। মূলত সম্পদের যাকাতের বেলায় যেহেতু আমাদের সমাজে ইসলামী যাকাতব্যবস্থা চালু নেই সুতারাং যাকাতের বেলায় নগদ অর্থ দিয়ে কাউকে কর্মসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।

আমাদের সমাজের প্রচলিত আরও একটি রীতি হল শরীয়াহ বোর্ড সর্বনিম্ম যে যাকাতের পরিমান নির্ধারণ করেন সেটাই আমরা ফিতরা আদায় করি।অথচ এটি মুমিনের তাকওয়া পরিপন্থি, আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করবো অপর মুসলিমের জন্যও সেটাই পছন্দ করবো এটা হচ্ছে প্রকৃত মুমিনের গুন। তাই সর্বনিম্ম যেটা ৭০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে সেটা নয়,বরং সর্বোচ্চ বা আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ফিতরা আদায় করা উচিত।

 

লেখক : তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

nobosur15@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ