সুলতান আফজাল আইয়ূবী
মহামরীর এ ক্লান্তিলগ্নে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করে তার রহমতের সামিয়ানায় আমাদেরকে আসন দেওয়ার জন্যই মাহে রমজানকে আমাদের মাঝে মহান উপঠৌকন হিসেবে দিয়েছেন। পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের বারিধারায় সিক্ত করে তার বান্দাকে ক্ষমার উপযোগী করে তোলেন। আর রমজানের দ্বিতীয় দশকে অগণিত বান্দাকে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মাফ করে দেন। এ মহা পূন্যময় সময়ে আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা,আমাদের গুনাহের কারনেই আমাদের উপর বিভিন্ন বালা মুসিবত,বিপদ আপদ এসে থাকে। এ প্রসঙ্গে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, জল–স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল। (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।
তাই এ মহামারী থেকে পরিত্রানের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আমরা পরিত্রান পেতে পারি এ মহামারী থেকে। আল্লাহর রহমত আমাদের জন্য সর্বদা উন্মুক্ত করে দেওয়া আছে। কিন্তু আমরা কেন পারছিনা দুহাত তুলে তার রহমত আমাদের নিজের করে নিতে? আল্লাহর কাছে চাইতে আমাদের কিসের এত ভয় ও শঙ্কা? আমাদের পাপরাশি কি আমাদেরকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করাতে লজ্জিত করে? তবে শুনুন, আপনার পাপরাশি কি ফিরআউনের চেয়েও বেশী? ফিরআউন তো নিজেকে খোদা দাবি করেছিল। অথচ, তাকে দাওয়াত দেওয়ার সময় আল্লাহ পাক মুসা ও হারুন আ: কে বলে দিয়েছিলেন ‘ তোমরা দুজন তার সাথে নরম সুরে কথা বলে,হয়তো সে উপদেশ গ্রহন করবে অথবা আমাকে ভয় করবে ‘(সুরা ত্বহা-৪৪)।
ফিরআউনের মত সীমালঙ্গনকারীকেও আল্লাহ পাক ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেখানে তো আপনি আল্লাহকে ডাকুন,তার কদমে সিজদা দিন,তার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন।অতএব,আল্লাহ পাক আপনাকে কেন নৈরাশ করবে ? এর প্রশ্নই উঠেনা। আল্লাহ পাক হচ্ছে গাফুরুর রাহীম তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। এ ব্যাপারে চমৎকার একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে বুখারী ও মুসলিমে “আল্লাহ বলেন আমার বান্দা আমাকে যেমন ভাবে, আমি তেমন।সে যখন আমার কথা স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি।সে যদি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে,আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। সে যদি কোন সেমিনারে আমাকে স্মরণ করে আমি তারচেয়ে বড় সেমিনারে তাকে ম্যানশন (উল্লেখ) করি।সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই।আর যদি সে এক হাত এগোয় আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই।আর যদি আমার বান্দা আমার দিকে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাই”
আহ! চিন্তা করেছেন একবার? আপনার স্রষ্টা আপনাকে ক্ষমা করার জন্য কতটুকু আশার বানী শুনিয়েছেন? আপনার প্রভু আপনাকে ভালবেসে সৃষ্টি করেছেন, আপনাকে জাহান্নামে দেওয়ার জন্য নয়। ক্ষমার আরও বড় সুযোগ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা এ মাহে রমজানে। এক জন বান্দা যখন মহান আল্লাহর দরবারে তাওবা করে, তখন মহান স্রষ্টার সীমাহীন করুণায় সিক্ত হয় তার হৃদয়। আল্লাহর নূরের আলো জ্বলে ওঠে অন্তরে। রমজান সে সুযোগ নিয়ে আসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৩৭) তাই আসুন মাহে রমজানের এ পূণ্যময় সময়ে আমরা আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোআ করি মাগফিরাত কামনা করি। মহামারী মুক্ত পৃথিবী কামনা করি। আল্লাহপাকের ইচ্ছাই আমরা পৃথিবী ও আখিরাতের শান্তি পেতে পারি।
তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী
nobosur15@gmail.com