সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভালবাসা দিবসের আড়ালে কাঁদে বিপ্লবীরা
/ ১৮৫ Time View
Update : রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:২৩ অপরাহ্ণ
ভালবাসা দিবসের আড়ালে কাঁদে বিপ্লবীরা: সুলতান আফজাল আইয়ূবী
  • সুলতান আফজাল আইয়ূবী: ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবসের আড়ালে লুকিয়ে আছে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। বর্তমান প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে মাথানত করে দেশ,জাতির স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অপসংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি করার মন-মনসে। যা আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়ংকর অশনি সংকেত। আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস তো গড়তে জানেই না ; আর জানবে কি ভাবে? তারা তো ইতিহাসই  জানতে চায় না। আমাদের তরুন সমাজের একটি অংশও লেজুরভিত্তি রাজনীতি করে,একটা অংশ ব্যস্ত থাকে জাতির পিতা কিংবা স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক করে কিংবা শুধু ধর্মীয় ইতিহাস ও ধর্মীয় রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকে,কিংবা আরেক পক্ষ বাম রাজনীতির নামে শুধু ধর্মহীন সেকুলার মন-মানসিকতা লালনা করে। তাঁরা মনে করে এই বুঝি ইতিহাস! তারা জানতে চায় না বাঙ্গালির ২০০ বছরের গোলামির ইতিহাস, পাকিস্তানী শাসনের ২৩ বছর, স্বৈরাচারের ৯ বছর, তাঁরা ভাবতে জানেনা আগামীর দেশ-জাতি নির্মানের পথ-পদ্ধতি। জানতে চায় না এই শাসন শোষণের মধ্যে বিদ্রোহীদের জীবন কথা, তাঁদের আত্তহুতির কথা। তাঁরা চিনে না মাস্টার দা, প্রিতিলতা , ক্ষুদিরামকে। তাঁরা চিনে না আসাদ কে, চিনে না রুমি আজাদ সহ অসংখ্য তরুন মুক্তিযোদ্ধাদের। মুসলিম তরুণদের অনেকেই চিনেনা সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ূবীকে, জানেনা মুহাম্মদ বিন কাসিমের দিগ্বিজয়ী ইতিহাসকে। অনেক সংগ্রামীর শুধু নাম জেনেই যথেষ্ট। তাঁদের আদর্শ, উদ্দেশ্য জানা প্রয়োজন মনে করে না। তরুণদের এই অসচেতনতার পিছনে প্রধান কারণ শাসক গোষ্ঠী। কেননা, এই

শাসক গোষ্ঠী তারা নিজেদের স্বার্থে সবকিছুর মত ইতিহাসকেও তাঁদের দখলে নিয়ে যেতে চায়। মাঝে মাঝে ইতিহাসকে বিকৃতিও করে দেয়। অনেক সময় পরিকল্পিত ভাবে তাঁরা প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে দেয় না, কারন ইতিহাস জানলে তাঁদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। কিন্তু ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে এক প্রজন্ম ভুলে গেলেও তার পরের প্রজন্ম ঠিকই ইতিহাসকে খুজে বের করে নিয়ে আসে। ইতিহাস যে হারিয়ে যায় না;হারাতে পারেনা। ইতিহাস উদ্ধার হয়ে মানুষের সামনে আবার উপস্থিত হয়। দেখিয়ে দেয় শাসকের বিরুদ্ধে শোষিতদের সংগ্রামের রূপ।

আজ আমি এমন এক সংগ্রামের কথা বলবো যাকে ইতিহাসের পাতায় চাপা দিয়ে রেখেছে ১৪ ই ফেব্রুয়ারির বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে তরুণ-তরণীদেরকে বিদেশি অপসংস্কৃতিতে মাতিয়ে রাখতে। প্রকৃতপক্ষে একজন সচেতন তরুণের কাছে ১৪ ফেব্রুয়ারি (স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস) ১৯৮২ সালে এরশাদ এক রক্তপাতহীন অভুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তার মিলিটারি শাসনে সবাই যখন নীরব, তখন ছাত্ররাই প্রথম প্রতিরোধের ডাক দেয়, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় ছিল প্রায় ৯ বছর, এই সময়ে হাজার হাজার মানুষ কারাবরণ করে এবং প্রতিরোধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহী প্রতিবাদ করেছিলো ছাত্ররা। সেই দিনটি ছিল ১৯৮৩ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। তার পর শুরু হয় দেশব্যাপী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। ১৯৮৩ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে পালিত হয় ছাত্র জমায়েত ,সচিবালয় অভিমুখে মিছিল এবং অবস্থান ধর্মঘট। ছাত্রদের দাবী ছিল মজিদ খানের গনবিরোধী শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, ছাত্রবন্দীদের মুক্তি ও দমননীতি বন্ধ,গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। কিন্তু সেই শান্তিপুর্ন কর্মসুচিতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর বুলেটের গুলিতে নিহিত হয় জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীসহ সারাদেশে ১০ জন। তাই এই দিনটি কে বলা হয় “স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে। এই দিনে যারা আমাদের নতুন সূর্যোদয় ও ভোরের আলো এনে দেওয়ার জন্য জীবন দিয়ে গেলো, সেই তাঁদের কে আমরা দুপুর হতে না হতেই ভুলতে বসেছে তথাকথিত ভালবাসা দিবসের নামে বেহায়াপনায় কবলে? এই লজ্জা সমগ্র বাঙ্গালি জাতির! আমাদের তো উচিত ১৪ ই ফেব্রুয়ারিতে স্মরণ করা জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালী’দেরকে। যারা আমাদের ভালোবেসেছিল,দেশকে ভালবেসেছিল,ভালবেসেছিলো দেশের মানুষকে। ভালোবেসে জীবনকে উৎসর্গ করেছিল। একেই তো বলে প্রকৃত ভালোবাসা।

আমাদের দেশে তারুণ্যের এই বিপ্লবী চেতনাকে তরুণ হৃদয় থেকে মুছে দিতে, তরুণদেরকে মন-মননকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে ১৯৯৩ সালে এই ১৪ ই ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবস শুরু হয় সাপ্তাহিক যায়যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমানের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরে যায়। নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসে ইতিহাসের কালো অধ্যায়। শুরু হয় দেশে ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন উৎসব। জাফর, জয়নাল, দিপালীর জন্য কারো মনে কোন ভালোবাসা থাকে না। আমাদের মনে রাখতে হবে স্বৈরাচারে অধিনে ভালবাসাও বিকশিত হয়না। ভালবেসে প্রিয় মানুষকে ফুল দিতেও বুকভরা সাহসের দরকার। যারা ভালবেসে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইনের শত আমেজেও তাদেরকে আমরা কীভাবে ভুলে থাকতে পারি?

(যদিও ১৪ ফেব্রুয়ারির উক্ত স্বৈরাচার প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে আমার ব্যক্তিমত ও ইসলাম ধর্মের কিছু মত পার্থক্য আছে,কিন্তু আমি বুঝাতে চেয়েছি তারুণ্যের এই বিপ্লবী চেতনাকে নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে দিতে, বিপ্লবীদেরকে আমি সব সময় মনের গহীন থেকে সালাম জানাই)

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ