সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
অভির ভিন্ন সময় || অনয় দাস
/ ১৩৮ Time View
Update : শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:১৬ অপরাহ্ণ

আলো আঁধারের খেলা মনে হয় শুরু হয়ে গেছে। সময় বড্ড পরিবর্তনশীল। স্রোত যেমন থেমে থাকে না, সময়ও থেমে থাকে না। অভির মুখে এসব কথা শুনে দাদু থমকে গেলো। তিনি জিজ্ঞেস করলো,“কি হয়েছে, অভি? হঠাৎ করে এসব বলার কারণ কি?” অভি উত্তরে বললো,“সময় আজ ভিন্ন মোড় নিয়েছে।সবাই সবাইকে চিন্তে শুরু করেছে,পরিস্থিতি পরিস্থিতির বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। তাই তো কবি বলেছেন,
“আলো বলে,‘অন্ধকার, তুই বড় কালো’
অন্ধকার বলে,‘ভাই,তাই তুমি আলো’।”
দাদু আবারও বললো, “অভি, তুই যা বলেছিস সব ঠিক আছে। কিন্তু কেনো বলছিস?” তুমি জানো না নাকি যে বিশ্বব্যাপী নতুন মরণব্যাধী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। হ্যাঁ,জানি তো এখন কি হয়েছে?
তুমি কি জানো কিভাবে এই ভাইরাস ছড়ায় আর কিভাবে মানবজাতিকে আস্তে আস্তে গ্রাস করে ফেলছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের জন্য আমরা আজ বন্দি। চাইলেও আজ কেউ স্বাধীনভাবে বাইরে বের হতে পারছে না।

আচ্ছা এই ভাইরাসের নাম কি?
‘কোভিড-১৯’(করোনা ভাইরাস)।
এতো জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বললি, কিভাবে এই ভাইরাস ছড়ায় সেটা বললি না?
‘যদি কারোর শরীরে করোনা ভাইরাসটা থেকে থাকে তবে সে যদি হাঁচি বা কাশি দেয় তবে তার হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাসটি অন্যের শরীরে প্রবেশ করে। তার যদি কারোর শরীরে করোনা ভাইরাস থাকে, তবে ২-১০ দিনের মধ্যে তার ১০০ ডিগ্রির ওপরে জ্বর, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা এবং বিশেষভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। সবচে’ বড় কথা হলো এই ভাইরাসটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে, ফুসফুসকে নিস্তেজ করে দেয় এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে।’
‘আচ্ছা,তাহলে তুই এসব করোনা ফরোনা নিয়ে গবেষণা কর। আমি বাজারে যাই, তোর দাদীর নাকি শুঁটকি মাছ খেতে ইচ্ছে করছে, তাই নিয়ে আসি।’
‘আরে, দাদু করছো কি?’
‘বাকি কথা পরে শুনবো। এখন আমার হাতে সময় নাই। দেরি হলে আবার তোর দাদী রাগ করবে।’
‘আচ্ছা,যাওয়ার আগে আমার আর কিছু কথা শুনে তো যাও।’
‘আচ্ছা, বল তাড়াতাড়ি।’
‘তুমি কি জানো এই ভাইরাসটি কাদের বেশি আক্রমণ করে?
না, জানি না। তুই বল।’
’যাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং হার্টের রোগ আছে তাদের এই রোগটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।’
’কি বলিস? আমার তো হার্টের সমস্যা আছে। এখন কি করবো?’
‘তুমি এখন থেকে একদমই ঘর থেকে বের হবে না। বারবার সাবান পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।’
‘এতো কিছু কি আমি পারবরে,নাতি?’
‘তুমি চুপ করে আমার কথা শুনো আর যা বলছি তা তোমাকে মানতেই হবে। তোমার নিজের জন্য এবং তোমার নিজের হাতে গড়ে তোলা পরিবারের জন্য তোমাকে সব নিয়ম -কানুন মেনে চলতে হবে।’
‘আচ্ছা,বল্।’
‘নোংরা হাত নিয়ে যেখানে সেখানে ধরবে না। আর নাক,চোখ তো একদমই ধরবে না।’
‘আচ্ছা,শুন। তোর দাদী যে শুঁটকি মাছ খেতে চাইলো তার কি হবে?’
‘তার ব্যবস্থা আমি করছি।’

অভি গোসল করে বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার দাদীর জন্য শুঁটকি মাছ আনতে হবে। তার দাদু তার প্রস্তুতি নেওয়া দেখে অবাক! কিরে নাতি,এসব কি করছিস?
‘কেন কি হয়েছে?’
‘হাতে গ্লাভস পড়েছিস কেনো?’
‘হাত থেকেই এই জীবাণুটা খুব সহজে নাক,মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তাই গ্লাভস পড়েছি।’
‘তাহলে,মুখে মাস্ক পড়েছিস কেনো?’
‘অন্য কারোর শরীর থেকে যেনো এই করোনা ভাইরাসের জীবাণু আমার শরীরে প্রবেশ করতে না পারে, তাই।’
‘আচ্ছা,সব ঠিক আছে। কিন্তু পকেটে ওটা কি ঢুকালি?’
‘এটা হলো হ্যান্ড সেনিটাইজার জেল। বের হচ্ছি তো তাই নিয়ে নিচ্ছি। বাইরে যেখানে সেখানে তো সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা নাই, তাই বারবার যেনো হাত পরিষ্কার করতে পারি সেজন্য সেনিটাইজার নিয়ে নিলাম।’
‘আচ্ছা আমি তাহলে ঘরে গেলাম। তুই যাওয়ার সময় টাকা নিয়ে যাস।’

অভি বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে দাদুর ঘরের দিকে যাচ্ছে টাকা আন্তে। অভি ঘরে গিয়ে দাদুর কাজ দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে গেলো।
‘আরে দাদু, তুমি এসব করছো কি?’
‘তোকে টাকা দিতে হবে না? তাই টাকা গুনছি।’
‘সে ঠিক আছে। কিন্তু তুমি বারবার মুখ থেকে থুথু এনে টাকা গুনছো কেনো?’
‘তা নাহলে যে একসাথে দুইটা নোট চলে আসে।’
‘তুমি জানো এভাবেও অনেক মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এমনকি হচ্ছেও?’
‘এটা কিভাবে সম্ভব?’
‘শুনো,কোনো করোনা পজিটিভ ব্যক্তি যদি এই টাকা ধরে থাকে তবে করোনা জীবাণু এই টাকার মধ্যেও থাকতে পারে। তাই টাকা গুনার সময় শুধু হাত ব্যবহার করবা এবং টাকা গুনা শেষ করেই সাবান পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে।’
‘আচ্ছা।’

অভি বাজারে যাচ্ছে। তখনই তার এলাকার কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা। তার বন্ধুরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি আর হ্যান্ড শেকের মাধ্যমে খোশ-গল্প করছে। এসব দেখে সে তার বন্ধুদের করোনা সম্পর্কে সবকিছু খুলে বললো এবং বুঝালো। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলতে অনুরোধ করলো। এক বন্ধু অভিকে জিজ্ঞেস করলো,“কতটুকু দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে?”
‘কোনো করোনা পজিটিভ ব্যক্তি যদি হাঁচি বা কাশি দেয় তবে করোনা জীবাণু ১ মিটার বা ৩ ফুট দুরত্ব পর্যন্ত ছড়াতে পারে। তাই এক জন আরেক জনের কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। খুব দরকার না হলে ঘর থেকে না বের হওয়াটাই উত্তম কাজ।
‘আচ্ছা,তাহলে তুই বাজারে কেনো এসেছিস?’
‘দাদীর জন্য শুঁটকি মাছ কিনতে এসেছি।’
‘তাহলে আমরা বাড়ি যাই, তুইও শুঁটকি মাছ কিনে বাড়ি যা।’
‘ঠিক আছে।’

অভি শুঁটকি মাছ কিনে বাড়ি ফেরার পথে তার আরেক বন্ধু বিনুধের সাথে দেখা। বিনুধ বললো,“অভি,শুনেছিস করোনার জন্য সারাদেশ লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে?”
‘কি আর করবে,বল। পরিস্থিতি তো দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে।’
‘কিন্তু যারা দিন আনে দিন খায়,কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকে তাঁদের কি হবে? তাদের জন্য তো কিছু করা দরকার।’
‘হ্যাঁ,ভালো বলেছিস। এতো বড় কাজ আমরা একা তো পারবো না। তাই এর জন্য শুভ সংঘ-জাককানইবি শাখা আমাদের পাশে থাকবে।’
‘কিভাবে?’
‘এই সংঘের মাধ্যমে আমরা অনেক অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবো, ত্রাণ বিতরণ করে এমনকি আর্থিক ভাবেও সাহায্য করতে পারবো।’
‘তাহলে চল কাল থেকে কাজ শুরু করে দেই।’
‘আচ্ছা।’

অভি আর বিনুধ হাঁটতে হাঁটতে আসার সময় একটা অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করলো। একটা লোক রাস্তার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর আশপাশের মানুষ তা দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলছে। কেননা এই পড়ে থাকা ব্যক্তিটি নাকি করোনা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে আছে। এসব দেখে অভি আর বিনুধ ঔ লোকটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার দেখানোর পর বুঝা গেলো ওনার আসলে খেতে না পেয়ে শরীর দুর্বল হয়ে যায় আর সেই জন্যই অজ্ঞান হয়ে যায়।
‘কি যে একটা অবস্থা, বিনুধ? সবাই তাদের মানবিকতা, মনুষ্যত্ব ও বিবেক কিভাবে বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে তা বুঝাই যেতো না যদি না আমরা করোনার সম্মুখীন না হতাম। কত নিচ হলে মানুষ এমন জঘন্য কাজ করতে পারে,বলতো?’
‘এসব বলে এখন কিছু করতে পারবো না। চল শুভ সংঘ -জাককানইবি- এ যাই আর প্লান করি কিভাবে অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়।’
‘ঠিক বলেছিস। তাহলে চল বাড়িতে শুটকি মাছটা দিয়ে যাওয়া যাক।’
যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই অভির পছন্দের ব্যক্তি নিলুর সাথে দেখা। নিলু অভিকে ডাকছে।
‘অভি…অভি…..এই অভি, শুনো না?’
‘আরে, নিলু যে, মেরে লায়লা, কেমন আছো?’
‘আরে রাখো তো তোমার রসিকতা। কাজের কথা শুনো।’
‘আচ্ছা,বলো কি হয়েছে?’
‘শ্যামু আছে না, ওর বড় ভাই তো করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল, জানোই তো।’
‘খারাপ কিছু হয়েছে কি?’
‘আরে না…। ওর ভাই এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।’
‘কি বলো! এটা তো অনেক ভালো আর ভরসার খবর। কিভাবে সম্ভব হলো বলতো?’
‘করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর তো ওর ভাই একদমই ভেঙে পড়ে। তারপর অনলাইনে অনেকের করোনা জয়ের গল্প পড়ার পর, তিনিও নিজেকে শক্ত করেছিলেন। পরিবার থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন, প্রতিদিনই ব্যায়াম করতেন, নিজের থালা-বাসন নিজের পরিষ্কার করতেন, প্রতিদিন ৩/৪ বেলা কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড় করতেন আর একদমই ঘর থেকে বের হতেন না। পাশাপাশি ভিটামিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফলমূল খেতেন।’
‘তাহলে মনোবল শক্ত রেখে, সঠিক নিয়ম মেনে করোনার বিপক্ষে লড়াই করতে হবে।’
‘হ্যাঁ, ঠিক তাই। বাকিটা উপরওয়ালার হাতে।’

তবে নিলু,তুমি কি লক্ষ্য করেছো করোনার পর থেকে দেশে দূষণ কমে গেছে। প্রকৃতি আগেরচে’ অনেক সিনেমেটিক হয়ে গেছে। চারপাশটা সবুজ-শ্যামলে ভরপুর। আশপাশটা কত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন! আজ আকাশটাও অনেক সুন্দর দেখায়। পরিবেশের ঘ্রাণটাও সুগন্ধিময়।
‘হ্যাঁ,রোমাঞ্চকর পরিবেশ।’
‘তাহলে চলো, তোমাকে নিয়ে মায়ের কাছে যাই। মায়ের সাথে দেখা করে তোমার আর আমার বিষয়টি বলি।’
‘যাবো, তবে এখন না। আগে পৃথিবী সুস্থ হোক।’
‘তাহলে,কাল সকালে চলে আসবা। সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাল থেকেই কাজে লেগে পড়বো।’

এভাবে অসচেতন মানুষদের সচেতন, সবার মাঝে ত্রাণ বিতরণ, আর্থিক সহায়তা প্রদানের কাজ অব্যাহত রইলো। ঘরে থাকার যুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় করা হলো।

লিখেছেন : অনয় দাস, শিক্ষার্থী – জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। 

 

 

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ