
এগারসিন্দুরে ভোটের মৌসুমি হাওয়া চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হবে বলে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর থেকেই সারাদেশ জুড়েই বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার ৯ ইউনিয়নে শুরু হয়ে গেছে তুমুল নির্বাচনী গুঞ্জন। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীগণ এক ধরনের প্রচার কার্যমক্রম শুরু করেছেন। বিভিন্ন গ্রামের হাটবাজার এমনকি চায়ের দোকানে দোকানে আড্ডায় গল্পে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বিশ্লেষণ। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমান তালে চলছে প্রচার-প্রচারণা। কেউ কেউ আবার আগাম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের মাঝে।
নির্বাচন সামনে রেখে পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুর ইউনিয়নে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম: মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম একজন সমাজ সেবক ও রাজনীতিক। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালের গণ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি এগারসিন্দুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী’র (সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ) এগারসিন্দুর ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বর্তমানে এগারসিন্দুর ঈশাখান উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং মঠখোলা হাজী জাফর আলী ডিগ্রি কলেজ গভর্নিং বডি’র সদস্যসহ বিভিন্ন ধর্মীয়, সামজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম সামনের ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্র জীবনে ইউনিয়ন ও উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি করা কালে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছি। পারিবারিক ভাবেও আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করি। আমার বাবা প্রয়াত মো. বজলুর রহমান বাংলাদেশ কৃষকলীগ এগারন্দিুর ইউনিয়ন শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। কর্মকান্ড বিচার বিবেচনা করে দলীয় হাইকমান্ড ‘ইনশাহআল্লাহ’ আমাকে মনোনয়ন প্রদান করবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। মো. বদরুল আমিন সরকার ফরহাদ: বদরুল আমিন সরকার ফরহাদ পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং জেলা কৃষক লীগের ভূমি বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এগারসিন্দুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
তিনিও এগারসিন্দুর ইউপি নির্বাচনে নৌকার নমিনেশন প্রত্যাশী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দলীয় কার্যক্রম বিবেচনা করলে আমাকে মনোনীত করা হবে বলে আশা করি। মো. আসাদুজ্জামান: আসাদুজ্জামান একজন ব্যবসায়ী। এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক, বাহাদিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি, মঠখোলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বাহাদিয়া নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। মো. শাহাব উদ্দিন: শাহাব উদ্দিন সৌদি আরব প্রবাসী। তিনি দানশীল ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। শাহাব উদ্দিন ছুটি নিয়ে সম্প্রতি দেশে এসেছেন। এলাকায় তাঁর উদ্যোগে ৫টি মসজিদ, প্রায় ১৬০০ টিউবওয়েল, শতাধিক শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে। করোনাকালীন লকডাউনের সময় অস্বচ্ছল ও অসহায় মানুষকে চালডাল তেল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণ সহযোগিতা দিয়েছেন। তিনিও আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী। এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হলে এলাকার গরীবদুখী মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষ শতভাগ সেবা পাবে। কোনো ঘুষের বিনিময় বা প্রজেক্টে দুই নম্বরি করবো না।
অনেক নেতারা এই সব পদে আসে ইনকাম করার জন্য। আমি ইনকামের জন্য আসিনি। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছি। সুতরাং আমি চেয়ারম্যান হলে এখান থেকে আমার নেওয়ার কিছু নাই। এলাকার মানুষকে দিয়ে যেতে চাই। একদিন চলে যাবো, যাতে মানুষ এটুকু মনে রাখে, এটাই অমার চাওয়া।’ মো. রিপন মিয়া (রিপন মেম্বার): রিপন মেম্বার চরদেওকান্দির সাবেক ইউপি সদস্য। বর্তমানে তিনি মঠখোলা সেকান্দর আলী মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, মঠখোলা হাজী জাফর আলী কলেজ পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য, মঠখোলা টান বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তরুণ বয়স হতেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনিও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘আমি তরুণ বয়স হতেই আওয়মী লীগের রাজনীতি করি। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। দলের জন্য যেকোনো কাজে সামনে থেকে কাজ করি।
আশাকরি দল আমাকে মনোনীত করবে।’ মো. মাহবুবুল হক বিপুল: মাহবুবুল হক বিপুল বয়সে তরুণ হলেও এগারসিন্দুরের রাজনীতিতে এ নামটি বেশ পরিচিত। তিনি বর্তমান এমপি মহলের ঘনিষ্ট বলে জানা যায়। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি তরুণ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দলের নানান কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছি। আমি দল থেকে মনোনীত হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তারুণ্যের ছোঁয়ায় পরিবর্তনের ডাক দেবো। আমি আশাকরি ত্যাগী কর্মী হিসেবে দল আমাকে মনোনীত করবে। মো. নূরুল ইসলাম: এগারসিন্দুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাস একজন সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ।
তিনিই সম্ভবত এবারের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মাঝে সর্বাপেক্ষা প্রবীণ। তিনিও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘আমি পাকিস্তান আমল থেকেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় আছি। আমি তৃণমূলে আওয়ামী রাজনীতির একজন ত্যাগী কর্মী হিসেবে দলের কাছে মনোনয়ন চাই। আশাকরি দল আমাকে মনোনীত করবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে এগারসিন্দুর ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এখন পর্যেন্ত একমাত্র নাম হিসেবে সাবেক দুই বারের চেয়ারম্যান বজলুল করিম বাবুলের নামই শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীগণ নানা রকম কৌশল অবলম্বনে ভোটের মাঠে নিজেদের অনুকূলে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও দলীয় মনোনয়ন পেতে এখন রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে দৌড়ঝাঁপ সহ লবিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কেউ কেউ।