মাঠজুড়ে ফুটে আছে হলুদ সরষে ফুল। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই এমন অপূর্ব নিসর্গ শোভা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখন চোখে পড়ছে এই দৃশ্য। গত কয়েক বছরে এই উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরষে চাষ। প্রতি মৌসুমেই বাড়ছে সরষেখেতের পরিমাণ। গ্রামাঞ্চলের আমন ধান কাটার পর বোরো ধান চাষের আগে পতিত জমিতে সরষে চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকেরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলার বড় আজলদী, চরপলাশ, পোড়াবাড়িয়া ও পাকুন্দিয়া পৌরসভার ২০টি গ্রামের ৪৬৩ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে সরষের চাষ করেছেন কৃষকেরা।
চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড়আজলদী গ্রামের কৃষক হজরত আলী (৫০) বলেন, ‘গত মৌসুমে ৭০ শতক জমিতে সরষে চাষ করেছিলাম। চাষে খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা। সরষে বিক্রি করে পেয়েছি ৩০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে দেড় একর জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সরষে চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় এ মৌসুমে ৫০ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি মৌচাক দিয়ে মাসে তিন হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।
পাশের জমিতে সরষে চাষ করেছেন হাবিবুর রহমান, তিনি জানান, এবার ৪০ শতক জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের সরষে চাষ করেছেন। কম খরচ ও কম পরিচর্যায় বেশি লাভ হয় বলে সরষে চাষ করেছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, পাকুন্দিয়া উপজেলায় দেশি ও উচ্চফলনশীল—এই দুই জাতের সরষে চাষ হয়। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল জাতের সরষে চাষে লাভ বেশি। আমন ধান কাটার পর বোরো ধান চাষের আগে পতিত অলস জমিতে সরষে চাষে খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কৃষি প্রণোদনা দেওয়ায় কৃষকরা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। উপজেলা কৃৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খেতে সরষের বীজ বোনার পর ফলন আসতে ৭০ থেকে ৭৫ দিন সময় লাগে। নভেম্বরের শুরুতে বীজ বুনলে মধ্য জানুয়ারির ভেতরেই ফলন ঘরে তোলা যায়।
এরপর সরষের দানা ও তেল বাজারে বিক্রি করেন কৃষকেরা। পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম আল-আমিন বলেন, বাজারে সরষে তেলের চাহিদা বেশি থাকায়, পতিত অলস জমিতে কম পরিশ্রমে লাভ বেশি হয় সরষে চাষে। এ কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরষে চাষ। এখন পাকুন্দিয়া উপজেলার প্রায় ৪৬৩ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।