
আব্দুল ওয়াহাব আইন উদ্দিনের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২০০৭ সালের দিকে। তখন আমি কটিয়াদিরের পংমসূয়া মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে পড়ি, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা রমিজ উদ্দিন সবুজের সাথে মরহুম আইনুদ্দিনের সখ্যতার সুবাদে মাঝে মাঝে সেখানে যেতেন সেই সুত্রে তাকে প্রথম দেখা। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশ রাজনীতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুবাদে তাঁকে ভাল করেই চিনি। তিনি পাকুন্দিয়া – কটিয়াদিরের গণ মানুষের জননেতা হিসেবে রূপ নিয়েছিলেন। সমকালীন রাজনীতি ব্যাবসায়ী বা সরকারী আমালাদের দখলে এ কথা ধ্রুব সত্য, কিন্তু মরহুম আইনউদ্দিন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসে জনতার কাছে নিজেকে মেলে দিয়ে প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি গণ মানুষের নেতা।
২০১৬ সালের জুলাইর দিকে পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিনের ইউনিয়ন পরিষদে সংবর্ধণা সভায় তার সাথে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ ও কথা বলার সুযোগ হয়। তখন আমি পাকুন্দিয়া প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম। সেদিন তার মুষ্টিবদ্ধ হাত পিছনে রেখে আরেক হাতে মাইক্রোফোন ধরে কবিতার পঙতির অনূরূপে দারাজ কন্ঠের আবৃত্তির মত বক্ত্যব্য আমাকে দারুণভাবে শিহরিত করেছিলো। সেদিনের সে চিত্র আজও আমার চোখে ভাস্বর হয়ে আছে। এক নিঃশ্বাসে তার প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের নাম ও মহিলা মেম্বারদের নাম, আবৃত্তির মত করে পাটুয়াভাঙ্গার প্রতিটি গ্রামের নাম বলে তিনি চমকে দিয়েছিলেন উপস্থিত জনতাকে। জনতারাও তাঁর বক্তব্যে আবেগতাড়িত হয়ে করতালির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন তাকে যে “আপনি আপনি আমাদের হৃদয়ে গেঁথে গেছেন”।বক্তব্যের পর তিনি পরিষদের একটি রুমে ডুকলেন, একটি সিগেরেট ধরালেন,আমি যাওয়ার পর আমাকে বসতে দিলেন পাশের চেয়ারে, আমার পরিচয় দেওয়ার পর তিনি আমার কাছ থেকে ওয়েব নিউজ পোর্টাল সম্পর্কে বেশ কিছু জানলেন, জানালেন। আমিও তাঁকে প্রতিদিনের অফিসে একদিন চায়ের দাওয়াত দিলাম।
এরপর থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রামে সাক্ষাৎ হয়েছে, কথা হয়েছে।বিশেষ করে মুগ্ধ হতাম বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে তাঁর সরব উপস্থিতি ও কোরআন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য আমাকে / আমাদেরকে দারুণভাবে আকর্ষিত করতো। তিনি,গত ২৩ ডিসেম্বর (বুধবার) রাতেও মোটরসাইকেল যোগে একটি ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার পথেই সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন।
গত ২৭ নভেম্বর শুক্রবার একটি কাজে কটিয়াদিতে, আমি হোন্ডায় পিছনের সিটে বসা, উপজেলা পরিষদের ভিতর থেকে পাঞ্জাবী টুপি পড়ে দেখলাম উনি জুমআর নামাজের জন্য মসজিদের দিকে যাচ্ছেন, হাতের ইশারায় সালাম দিলাম, উনিও মুচকি হাসি দিয়ে সালামের জবাব নিলেন।এ মুচকি হাসির কথোপকথনই আমার উনার সাথে শেষ দেখা। নিয়তি সেই শুক্রবারই (২৫ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এ ইন্তেকাল করেছেন “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”।
আমি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু প্রত্যেক দলের কিছু ভাল মনের মানুষদের আমি ভালবাসি। এমনি অগনিত ভালবাসার মানুষের একজন চলে গেলেন না ফেরার দেশে কটিয়াদি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কটিয়াদি উপজেলা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জনাব আবদুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন। আইন উদ্দিন নামটা শুনলে আমার হৃদয়ষ্পটে দুজন ব্যক্তির অবয়ব ভেসে উঠতো, একজন বাংলাদেশের ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট মরহুম আইনুদ্দিন আল আজাদ, অন্যজন তিনি। নিয়তি এমনি ছিল দুজনই সড়ক দূর্ঘটনায় ওপাড়ে পাড়ি জমালেন। তাদের জীবনের কোন একটি ভাল কাজের বিনিময়ে রাব্বে কারীম ওপাড়ে তাদেরকে শান্তিতে রাখুক।
সুলতান আফজাল আইয়ূবী
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, পাকুন্দিয়া প্রতিদিন
nobosur15@gmail.com