৫৫ বছর পর নিজ গ্রামে ফিরলেন গোলাম মোস্তফা
উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের দগদগা গ্রামের গোলাম মোস্তুফা(৬৫) পিতা- আজিম উদ্দিন ১৯৬৫ সালের দিকে ১০ বছর বয়সে দগদগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পিতার সাথে পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও রেলস্টেশনে গিয়ে হারিয়ে যান তিনি। হারিয়ে যাওয়ার ৫৫ বছর পর গোলাম মোস্তুফা, তার স্ত্রী, দুই ছেলে এক মেয়ে সন্তানসহ শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের দগদগাস্থ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময় তার সহোদর ছোট ভাই আবদুল আওয়াল হারিয়ে যাওয়া বড় ভাইকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লোত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর গোলাম মোস্তুফা নিজ বাড়িতে আসার খবরে আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসীসহ উৎসুক জনতা তাকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন।
এলাকাবাসি ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের দগদগা গ্রামের আজিম উদ্দিনের পুত্র গোলাম মোস্তুফা। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পাশ্ববর্তী গফরগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেনে উঠার পর হারিয়ে যান। তারপর পাবনা জেলার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনের পাশ্ববর্তী একটি চায়ের দোকানের সামনে অসুস্থ্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সিরাজ উদ্দিন নামের এক রিকসা গ্যারেজ মালিক তাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন। তাকে চিকিৎসা করিয়ে লালন পালন করেন। এক সময় গোলাম মোস্তুফা আশ্রয়দাতার রিকসা গ্যারেজের কাজে সাহায্য করতে শুরু করেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে ওই এলাকার সোহাগী বেগমকে বিয়ের করেন তিনি। বিবাহের পর তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। বড় ছেলে সজিব হোসেন একটি কোম্পানীতে চাকুরী করেন। ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম সুরুজ ব্যবসা করেন। মেয়ে সুমনা ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করেন। এমনি অবস্থায় তার পরিবার নিয়ে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রহমান কলোনীতে বসবাস করে আসছিলেন। গত চার বছর আগে তিনি স্টোকে আক্রান্ত হলে প্যারালাইজড হয়ে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়। হঠাৎ তিন মাস আগে স্ত্রী সোহাগীকে ডেকে তার হারিয়ে যাওয়ার কথা গুলো বলেন। সেই সময় তার বাড়ির ঠিকানা মেয়েকে কাগজে লিখতে বলেন। পরে ছেলে সজিব হোসেন গুগল ম্যাপে সার্চ দিয়ে তার পিতার জন্মস্থান দগদগা গ্রামের সন্ধান পান। গুগল থেকে দগদগা গ্রামের এক ব্যবসায়ীর মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তার সাথে কথা বলে পিতার ছবি ফেইজবুকে পাঠায়। ওই বব্যসায়ী বিষয়টি ওই এলাকার লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করলে ও হারিয়ে যাওয়া গোলাম মোস্তুফার ছবি দেখালে তার ছোট ভাই আবদুল আওয়াল তাকে সনাক্ত করেন। পরে গত ২ অক্টোবর সহোদর ছোট ভাই আবদুল আওয়াল হারিয়ে যাওয়ার বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে তাকে চিনতে পেরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসার জন্য বলেন। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে গোলাম মোস্তফা স্ত্রী-সন্তানসহ ৫৫ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
গোলাম মস্তেুাফার কাছে জানতে চাইলে, তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পিতার সাথে রেল স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলতে বলতে আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তার সহোদর ছোট ভাই আবদুল আওয়াল পাকুন্দিয়া প্রতিদিন বলেন, বড় ভাই হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুজি করে তাকে পাইনি। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ভাইকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। গোলাম মোস্তুফার ছোট ছেলে সজিব হোসেন জানান, দীর্ঘদিন পর পিতার জন্মস্থানে ফিরে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এলাকাবাসিসহ আমার চাচা-চাচি, চাচাত ভাই-বোনেরা আমাদের সাদরে গ্রহণ করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আশ্রয়দাতা সিরাজ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশন সংলগ্ন এক চায়ের দোকানের পাশে অনুমান ৫৫ বছর আগে অসুস্থ্য অবস্থায় তাকে পরে থাকতে দেখে তিনি নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন। চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ্য করে নিজের রিকসা গ্যারেজে কাজ দেন। পরে তাকে বিবাহ করিয়ে আলাদা ভাবে জমি ক্রয় করে বাড়ি করে দেন।
দগদগা গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিত্ব জালাল উদ্দিন বলেন, শৈশবে গোলাম মোস্তুফাকে নিয়ে আমরা এক সাথে মাঠে খেলাধুলা করেছি। ১৯৬৫ সালের দিকে তার হারিয়ে যাওয়ার খবরে অনেক কষ্ট পেলেও এতদিন পর ফিরে এসেছে খবর পেয়ে তাকে দেখতে ছুটে এসেছি।
এ ব্যাপারে জাংগালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার শামীম আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, হারিয়ে যাওয়া গোলাম মোস্তুফা ৫৫ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসার খরবটি আমি শুনেছি। দীর্ঘদিন পর এলাকার ছেলে এলাকায় ফিরে আসায় দগদগা গ্রামের মানুষ খুবই আনন্দিত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
Leave a Reply
More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ