অনেকের ধারণা, হাত ও পায়ের চামড়া ওঠা সাধারণত শীতকালে হয়ে থাকে। শীতকালে চামড়া ওঠা স্বাভাবিক হলেও বছরজুড়েই যদি হাত-পায়ের চামড়া ওঠে, তাহলে এটি অবশ্যই সমস্যা। কারণ সারা বছর হাত-পায়ের চামড়া ওঠা স্বাভাবিক নয়। হাত-পায়ের চামড়া ওঠাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কেরাটোলাইসিস এক্সফোলিয়াটিচা বলা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, হাত-পায়ের চামড়া ওঠার প্রথম কারণ হচ্ছে- জিনগত বা বংশগত। এর বাইরে পুষ্টিহীনতা ও ত্বকের পরিচর্যায় অবহেলা থেকেও চামড়া ওঠে। চামড়া উঠে যাওয়ায় শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। কাজের ব্যস্ততার মধ্যে কিছুটা সময় বের করে শরীরের যত্ন নিলেই এ সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যাবে।
তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল
হাতের চামড়া উঠে যাওয়ার জন্য তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল সমপরিমাণে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। যদি হাতের কাছে তিলের তেল না থাকে, তাহলে বিকল্প হিসেবে জলপাইয়ের (অলিভ) তেল ব্যবহার করতে পারেন। পায়ের চামড়ার জন্য মধু, গ্লিসারিন, লেবুর রস ও ঘৃতকুমারীর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় লাগাতে হবে। বিশেষ করে রাতে খাবার শেষে যখন ঘুমোতে যাবেন, তার ঠিক ৩০ মিনিট আগে লাগিয়ে রাখুন। তারপর পায়ে পাতলা মোজা পরে ঘুমোতে যান।
সয়াবিনের গুঁড়ো
সয়াবিন গুঁড়ো হাত-পায়ের চামড়া উঠে যাওয়া বন্ধে খুবই উপকারী। সয়াবিন কড়াইয়ে দিয়ে হালকা আঁচে কিছুক্ষণ নেড়ে গুঁড়ো করে নিন। এরপর সেটি দিয়ে হাত ও পা ধুতে পারেন। এটি পরিষ্কারের পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজার ভূমিকা রাখে। এভাবে যদি একটু খেয়াল করে হাত ও পা পরিষ্কার রাখেন এবং রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে গ্লিসারিন ব্যবহার করেন, তাহলে চামড়া উঠা বন্ধ হয়ে যাবে।
হাত ভেজা রাখবেন না
রান্নাঘরের কাজ, গোসল কিংবা হাত-পায়ে পানি লাগতে পারে, এমন অনেক কাজ রয়েছে। এ ধরনের পানির কাজ শেষ করার পর দ্রুত শুকনো তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে শুকিয়ে ফেলুন। একইভাবে পা মুছে নিলে ভালো হয়। মনে রাখবেন, যদি চামড়া উঠে তাহলে কোনো অবস্থায়ই হাত-পা ভেজা রাখবেন না। গ্লিসারিন মাখুন ঘুমানোর আগে। এছাড়া খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রাখুন। যেমন- আমিষ, লৌহ, জিঙ্ক, ভিটামিন-এ, ই ও সি। পুষ্টিহীনতার কারণে চামড়া উঠা বন্ধ হবে।
লবণ ও শ্যাম্পু
হালকা গরম পানির সঙ্গে লবণ ও শ্যাম্পু মিশিয়ে হাতের তালুর পরিচর্যা করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। গরম পানির মধ্যে আধা চামচ শ্যাম্পু ও একটু লবণ দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাত-পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় শেষে ব্রাশ দিয়ে হাত-পা ঘষবেন। দেখবেন, হাত-পায়ের মরা চামড়া উঠে যাবে।
হাত ও পায়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি। প্রশ্ন থাকে, ময়েশ্চারাইজার কেনার সময় কী কী জিনিস ময়েশ্চারাইজারে থাকা আবশ্যক?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাডেমি অব ডার্মাটোলজি’র মতে, একটি আদর্শ ময়েশ্চারাইজারে নিম্নলিখিত জিনিস থাকা বাঞ্ছনীয়।
১. পেট্রলেটাল (অর্থাৎ পেট্রোলিয়াম অয়েল) ২. মিনারেল ওয়েল ৩. সিয়া বাটার ৪. ল্যানলিন এবং ৫. ডায়ামেথিকন (এক ধরনের সিলিকন)।
এগুলো Occlusive হিসেবে অর্থাৎ আর্দ্রতা আটকে রাখে। আরও কিছু বিষয় আছে, যেগুলোকে বলে Humeticants অর্থাৎ আর্দ্রতা উৎপাদনকারক। যেমন- ১. হায়ালুরনিক এসিড, ২. গ্লিসারিন, ৩. ল্যাকটিক এসিড ও ৪. ইউরিয়া।
একটি আদর্শ ময়েশ্চারাইজারে এসব উপাদান থাকা জরুরি।
লেখক : কন্সালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট অ্যান্ড ডার্মাটো সার্জন, ডা. আজমল হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা