মহান আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্য দুনিয়াকে পরিক্ষাঘার বানিয়েছেন। এই তীব্র শীতেও মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছেন। যারা তীব্র শীতে বস্ত্রহীন, ঘরহীন তাদের পরীক্ষা করছেন শীত,ক্ষুধার মাধ্যমে। আর আমাদের পরীক্ষা করছেন এসব শীতার্ত মানুষদের বিপদে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি তা দিয়ে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)
তা ছাড়া মহান আল্লাহ সমগ্র মুমিন জাতিকে এক দেহের মতো বানিয়েছেন। ফলে দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে গোটা দেহ আক্রান্ত হওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮০)
তাই আমরা আমাদেরই শীতার্ত ভাই-বোন যারা এ প্রচন্ড শীতেও খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে তাদেরকে এমন বিপদের মধ্যে রেখে স্বস্তিতে থাকতে পারি না। এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব শীতার্ত মানু্ষদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করা। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, সরবরাহ করা। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তারা যেন পরিবার নিয়ে পর্দা রক্ষা করে নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এখনই তো সময় আখিরাতের জন্য বিনিয়োগ করার। মানুষের বিপদে এগিয়ে এসে তার জন্য খরচ করাকে মহান আল্লাহ বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এবং তা তিনি বহুগুণ ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তররূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৫)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার অর্থ হলো তাঁর পথে খরচ করা। গরিব, অসহায় ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা। একে ঋণ বলা হয়েছে রূপকার্থে। কেননা এর বিনিময় দেওয়া হবে সওয়াবরূপে।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করজ (ঋণ) দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান। (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৮)
তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। এবং জাতিকে এই মহাবিপদ মজামারী করোনা থেকে রক্ষা করতে ও নানা বিপদ থেকে বাঁচতে নিজেদের কৃত গুনাহ থেকে বেশি বেশি তাওবা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।