এম হাসান বিন মোশাররাফ
মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হলো ইয়াওমুল জুমু’আহ বা জুমার দিন।মর্যাদাপূর্ণ ও ঘটনাবহুল এ দিনটিকে আল্লাহ তা’য়ালা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতোই মর্যাদা দান করেছেন।
রাসূল(সা:) বলেছেন,”মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।”(ইবনে মাজাহ-১০৯৮)
তিনি আরো বলেছেন,”মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতো শ্রেষ্ঠ দিন।”(ইবনে মাজাহ-১০৮৪)
সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে এ দিনটি সর্বোত্তম।এ দিনেই আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন।আর এ দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন,”যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়। ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনেই আদম (আ:)কে সৃষ্টি করা হয়েছে।এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাকে জন্নাত থেকে বের করা হয়।আর এ দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।”(সহিহ মুসলিম-৮৫৪)
জুমু’য়ার গুরুত্ব
পবিত্র জুমু’আহ অপরিসীম গুরুত্বের দাবিদার বলেই আল্লাহ পাক “সূরাতুল জুমু’আহ” নামে একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন।যেখানে তিনি বলেন,হে মুমিনগন! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান করা হয়,তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে মসজিদে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ কর।(সূরা জুমু’আ-০৯)
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “ক্রীতদাস, মহিলা,নাবালেগ ও অসুস্থ ব্যক্তি এই চার শ্রেনীর মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য।”(আবু দাউদ-১০৬৭)
জুমার নামাজের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে মুহাম্মদ (সা:) বলেন,”নিশ্চয় আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি।অত:পর যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ পড়ে না,আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বলিয়ে দেই।”(মুসলিম-৬৫২)
জুমু’আর ফজিলত
জুমার দিনকে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বেশী ফজিলতপূর্ণ করা হয়েছে এবং এ দিনে সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতঃ রাসূল (সা:) বলেছেন,”জুমার দিন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করে এবং নামাজে আগমনকারীদের নাম ক্রমানুসারে লিখতে থাকে।অত:পর ইমাম যখন মিম্বরে বসেন,তখন তারা লেখাগুলো গুটিয়ে নেয় এবং খুতবা শোনার জন্য চলে আসে।মসজিদে যে সর্বপ্রথম প্রবেশ করে তাকে একটি উট কুরবানির সওয়াব দেওয়া হয়।এভাবে যারা দুই,তিন,চার ও পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে তাদেরকে যথাক্রমে একটি গাভী, ভেড়া, মুরগী ও ডিম কুরবানির সওয়াব প্রদান করা হয়।”(মুত্তাফাকুন আলাই)
শুধু তাই নয়,হাদীসে এসেছে যে,জুমার নামাজের জন্য আল্লাহ তার বান্দাকে এক জুমা থেকে অন্য জুমাসহ আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দিবেন।নামাজে যেতে প্রত্যেক কদমে কদমে নফল নামাজ ও রোজার সওয়াব প্রদান করেন।
জুমু’আয় না যাওয়া বড় একটি অপরাধ
জুমু’আর গুরুত্ব ও ফজিলত যেহেতু অনেক বেশি। তাই বিনা কারণে জুমু’আয় অবতীর্ণ না হওয়ার অপরাধটা ও অনেক বড়।অযথা জুমু’য়া থেকে বিরত থাকাটা মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।এ ব্যাপারে রসূল(সা:) বলেছেন,”যে ব্যক্তি পরপর তিন জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দিবে, আল্লাহ সে ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দিবেন।(তিরমিজি)
মুসলিম শরীফে বলা হয়েছে যে,অত:পর সে আত্মভোলা হয়ে যাবে এবং নিজেকে সংশোধন করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূল (সা:) বলেন,”যে ব্যক্তি পরপর তিন জুমা ত্যাগ করলো,সে ইসলামকে পিছনের দিকে নিক্ষেপ করলো।”(সহিহ মুসলিম)
দোআ কবুলের অনন্য সুযোগ
জুমার দিনের সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে এই দিনে এমন একটা সময় আছে,যখন মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।
রাসূল (সা:)বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোন কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।”(মুত্তাফাকুন আলাই)
এ নির্দিষ্ট সময়টি নিয়ে বেশ কিছু মতামত পরিলক্ষিত হয়।তবে সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য মত হলো আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়।
খুতবার আলোচ্য বিষয় যা হওয়া উচিত
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম।আল্লাহ তায়ালা বলেন,”হে মুমিনগন!তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করো।”(সূরা বাকারা-২০৮)
অন্য আয়াতে বলেন,”আমি এই কিতাবে কোন কিছু বাদ দেই নি।”(সূরা আনয়াম-৩৮) প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ তার ব্যক্তিগতজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত কিভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম।বস্তুতঃ এমন কোন বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বিষয়ে কোরআন সুন্নাহর দৃষ্টিভঙ্গি নেই।তাই জুমার খুতবায় সমসাময়িক পরিস্থিতি বা সমস্যা সমাধানে কোরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা উচিত।রাসূল(সা:) এর জীবনাদর্শ আমাদের তাই শিক্ষা দেয়।
জুমু’আর দিনে করণীয়
হাদীসের আলোকে কিছু করণীয় বিষয় উল্লেখ করা হলো-
* গোসল করা।
* উত্তম পোশাক পরিধান করা।
* সুগন্ধি ব্যবহার করা।
* আগে আগে মসজিদে যাওয়া।
*মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামাজের পর বসা।
* মনযোগ দিয়ে খুতবা শুনা।খুতবা চলাকালীন সময়ে চুপ থাকা।
* কাউকে না ডিঙ্গিয়ে যেখানে জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই বসা।
(আবু দাউদ-৪৭৯)
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে জুমু’আর গুরুত্ব অনুধাবন করে করণীয় বিষয়গুলো পালনের মধ্য দিয়ে আপনার প্রিয় বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন।(আমীন)
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া