শিথানের পাশে শিথানের মতো অনিবার্য আসন পেতে নিয়েছে বইটি। অঘোষিতভাবে লেখক এসে নিভৃতে বসে পড়েছেন প্রিয়দের একটি চেয়ারে। ঝলমলে প্রচ্ছদে এঁকে রাখা শামুকের কৈফিয়ত দিতে লেখক বলেছেন, “উদ্দেশ্য, যাদের জন্য বইটি লেখা হয়েছে তারা যেন বইটি বিদ্যুৎগতিতে না পড়ে শম্বুক গতিতে পড়েন।” কিন্তু প্রথম পাঠে কি আমি শম্বুক গতিতেই পড়েছিলাম? যতটুকু মনে পড়ে ১৫২ পৃষ্ঠার বইটা প্রায় ৮০ পৃষ্ঠা পড়ে নামাজ না কী একটা কাজে উঠেছিলাম। তারপর কাজটা শেষ করে এসে বাকী অংশটাও পড়ে ফেলেছিলাম। তা ছাড়া আর উপায়ই বা কী! তিনি যেভাবে সরল বয়নে শব্দের সফল ব্যবহার করে তাতে টেনে দেন অলঙ্কারের দীপ্তি-রেখা, গদ্যকে করে তুলেন ঝরঝরে, ঝলমলে–সেই ঝলমলে গদ্যের তীক্ষ্ণ অলঙ্কারের সুক্ষ্ম আভা কি হৃদয়-মানসে তাড়া দেয় না তড়িৎগতিতে পড়ার? সেই তাড়নায়ই তো সেবার বিদ্যুৎগতিতে পড়েছিলাম। আর তখন তো আমি ‘সাহিত্য কাকে বলে’ তাও জানতাম না। তাইতো ঝাপিয়ে পড়েছিলাম–নদীর পানিতে মাছদের ঝাপিয়ে পড়ার মতোই। আর তড়িৎগতিতে পড়ার কারণে উপকার শিকারেও কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয় না। কিন্তু একটি ভালো বইয়ের শেষ বলে যে কিছু নেই! তাইতো বইটি আবার হাতে নিই। খুঁটে খুঁটে পড়ি। কী সুন্দর করে লেখেন তিনি! “বদনদীপ্তি আর অলঙ্কারের আভা যখন একাকার হয়ে জ্বলে ওঠে তখন ভাবতে কষ্ট হয়-কে কার অলঙ্কার।” কথাটি যেন তার লেখার ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য। তাইতো বইটা আবার পড়ে শেষ করি। তারপর আবার পড়ি, আবার পড়ি। আরও পড়ব। দশবার, বিশবার বা আরও অনেক বার। কারণ, আমি যে শেকড়ে রস সংগ্রহ আর প্রাণে পুঁজি বাড়াতে চাই! তাইতো আমার কাছে ‘পরিমাণটা বড় কথা নয়, বড় কথা অর্জন’।
বই : সাহিত্যের ক্লাস
লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন
মুদ্রিত মূল্য :১৭০ টাকা
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আখতার
বিষয় : ইসলামি বিবিধ বই
রিভিউ লেখক: নকীবুল হক