
মাও: ফখর উদ্দিন
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সৃষ্টি কতইনা অপরূপ! এই সৃষ্টির মাঝে মানব জাতিকে দিয়েছেন কিছু স্পেশাল বৈশিষ্ট। এই বৈশিষ্টের অন্যতম হল বাকশক্তি তথা কথা বলার ক্ষমতা। যেমন মানতিক শাস্ত্রের ভাষায়, “حيوان ناطق”(বাকশক্তি সম্পন্ন প্রাণী)। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা এই বাকশক্তিকে ব্যবহারের নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
জিহ্বা একটি নরম গোস্তের টুকরা হলেও এটি মহান আল্লাহ তা’আলার একটি বড় নিয়ামত। এটি দিয়ে যেমন অগণিত পুণ্যের কাজ করা যায়, ঠিক এর বিপরীত অসংখ্যা গুনাহের কাজ এটি দিয়েই সংগঠিত হয়। শ্রেষ্ঠতম সম্পদ তথা ঈমান এই জিহবা দিয়ে উচ্চারিত হয়, অপর দিকে কুফরীও এই জিহবা দিয়েই বের হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক বস্তু তা উপস্থিত হোক বা অনুপস্থিত, স্রষ্টা হোক বা সৃষ্টি, জানা অথবা অজানা, বাহ্যিক অথবা আভ্যন্তরীণ সকল কিছুই এই নরম গোস্তের খণ্ড দিয়েই বর্হিগমন ঘটে। উদাহরণ স্বরূপঃ জ্ঞান যে বস্তুকে বেষ্টন করে, জিহবা তা বর্ণনা করে তা সত্য হোক বা মিথ্যা হোক। জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই। এটি এমন এক বৈশিষ্ট্য যা জিহবা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রতঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায় না। যেমনঃ চোখের কাজ দেখা, কানের কাজ শোনা, পায়ের কাজ চলাচল করা ইত্যাদি। কিন্তু জিহবার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত। এর কোন সীমা পরিসীমা নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি তার জিহবাকে সংযত রাখে না, শয়তান তাকে দিয়ে অনেক কিছু বলাতে পারে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারে।
নিম্নে মহাঐশী গ্রন্থ কুরআনুল কারিম ও হাদীসে পাক থেকে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীস….
لَّا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا.
অর্থ :-“তাদের অধিকাংশ গোপন কথাবার্তা কিংবা সলা-পরামর্শে মঙ্গল বা কল্যাণ নেই; তবে সদকা দেয়া বা পূণ্য কাজকর্ম করা এবং জনগণের মাঝে সংস্কারের আদেশ দেয়া অবশ্যই ভিন্ন ব্যাপার। যে আল্লাহর সন্তূষ্টির জন্যে এ কাজ করে আমি তাকে শীঘ্রই বড় রকমের পুরস্কারে ভূষিত করবো।” (সুরা নিসা আয়াত ১১৪)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুটি বিষয় বুঝিছেন। প্রথমে বলেছেন কথার মাঝে উপকারিতা নেই শেষে বলেছেন উপকারিতা রয়েছে এবং এর জন্য পুরস্কার ও রয়েছে তবে হতে হবে দান সদকাহ,ভাল কাজ এবং সংশোধনের কথা।
* কৃতকার্য মুমিনের গুণের অন্যতম গুণ হল অযথা কথা বলা হতে বিরত থাকা।
পবিত্র কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে –
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ”
অর্থ:-“যারা বাজে বা বেহুদা কথা ও কাজ থেকে দুরে থাকে”।(সুরা মুমিনুন আয়াত ৩)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, –
من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرًا أو ليصمت”
অর্থ :- “যে আল্লাহ তায়ালা এবং পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে”। (বুখারী মুসলিম)
হাদিসে এসেছে-
” مَنْ صَمَتَ نَجَا “.
অর্থ :-“যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায় “।(মুসনাদে আহমদ)
* পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার জন্য জিব্বার হেফাজত জরুরী। যেমন হাদিসে এসেছে-
“الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ.”
অর্থ :- “প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি যার জবান এবং হাত হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ “।(বুখারী)
জিব্বার মাধ্যমে গীবত হয়, আর গীবতকে মরা ভাইয়ের গোসত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। জবানের দ্বারা অপবাদ হয়ে থাকে আর বুহতান অত্যাধিক হারাম।
*হাদিসে পাকে এসেছে –
” كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ “.
অর্থ :” মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট শুনে শুনে বলতে থাকা “।(মুসলিম)
* যাচাই না করে কথা বলাতে মিথ্যুক হওয়ার আশংকা রয়েছে।
*মিথ্যার সম্পর্কে ধমকি এসেছে হাদিসে –
“” إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ ؛ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَالْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ”
অর্থ : তোমরা মিথ্যা হতে দূরে থাক, কেননা মিথ্যা পাপের দিকে উৎসাহিত করে আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।(মুসনাদে আহমদ)
* জিব্বা সংযতে রয়েছে বেহেস্তের সুসংবাদ, নবী করিম সাঃ বলেন-
“من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه أضمن له الجنة ”
অর্থ:‘যে ব্যক্তি নিজের দুই চোয়ালের মধ্যস্থ অঙ্গ এবং দুই রানের মধ্যস্থ অঙ্গ হেফাজত করবে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার। ’
* প্রসিদ্ধ আরবি প্রবাদে বলা হয়-
‘المكثار كحاطب ليل’
অর্থাৎ, ‘অধিক বাক্যালাপকারী রাত্রে লাকড়ি সংগ্রহকারীর মত’। রাত্রে কাঠ সংগ্রহকারী সে জানেনা অন্ধকারে সে কি সংগ্রহ করছে। তার উপকারী কিছু নাকি অনুপকারী। এবং রাতের আঁধারে যেকোন বিপদের সম্মুখীন হতে পারে,দংশীত হতে পারে বিষাক্ত প্রাণী কর্তৃক(সাপ, বিচ্ছু)।যার ফলে হতে পারে মৃত্যু।
তাই আমাদের সকলের উচিত বাকসংযত রাখা।আল্লাহ আমদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুক -আমিন।
খতিব,শিক্ষক ও তরুণ আলেম