মাও: ফকরুদ্দীন
সালাম শান্তির প্রতীক। সালামের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়ে অপর ভাইকে অভিবাদন জানানো জান্নাতিদের কাজ। ইসলাম ধর্মে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) এই কাজটিকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহ রাসুলকে (সা.) যেসব বস্তু বা বিষয় উপহার দিয়েছেন, এর মধ্যে সালাম অন্যতম। তিনি বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। মহান রাব্বুল আলামিন সর্বপ্রথম মানব আদম (আ.)-কে সালামের শিক্ষা দেন। সালাম আরবি শব্দ। এর অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি। সালাম একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামি অভিবাদন।
সালাম নিয়ে কোরআন হাদিসের কিছু বক্তব্য দেখে নেই। সালাম শব্দটি সিলমুন ধাতু হতে নির্গত এর অর্থ -শান্তি, সন্ধি ইত্যাদি। আল্লাহ সুবহানাহু ও তায়ালা হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টির পর তাকে বললেন,
‘اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ النَّفَرِ – وَهُمْ نَفَرٌ مِنَ الْمَلَائِكَةِ جُلُوسٌ – فَاسْتَمِعْ مَا يُجِيبُونَكَ ؛ فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ. قَالَ : فَذَهَبَ، فَقَالَ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. فَقَالُوا : السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ.
অর্থ :’ হে আদম ঐ ফেরেস্তাদের ছোট দলটির নিকট যাও যারা বসা অবস্তায় রয়েছে তাদেরকে সালাম দাও।অতপর তারা কি জবাব দেয় তা মনযোগ সহকারে শুন কেননা ইহা তোমার জন্য এবং তোমার বংশধরের জন্য অভিবাদন। অতপর তিনি সেখানে গিয়ে আসসালামু আলাইকুম বললেন’।(বুখারী 3326)
শুধু তাই নায় মানবজাতির সৃষ্টির পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত এমনকি জান্নাত পর্যন্ত সালামের কথা বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক নবি রাসুলের প্রতি আল্লাহ তায়ালা সালাম প্রেরণ করেছেন। যেমন কোরআনুল কারিমের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত হয়েছে
১.সুরা আনয়ামে এসেছে-
وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ﴿٥٤ الأنعام﴾
২.সুরা আরাফে এসেছে –
وَنَادَوْا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ﴿٤٦ الأعراف﴾
৩.সুরা ইউসূফে এসেছে –
دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ﴿١٠ يونس﴾
৪.সুরা হুদে এসেছে –
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَىٰ قَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ ﴿٦٩ هود﴾
৫.সুরা রদে এসেছে –
سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٢٤ الرعد﴾
৬.সুরা ইব্রাহিমে এসেছে –
خَالِدِينَ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ﴿٢٣ ابراهيم﴾
৭.সুরা নাহলে এসেছে –
يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿٣٢ النحل﴾
৮.সুরা মারয়ামে এসেছে –
قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيًّا ﴿٤٧ مريم﴾
৯.সুরা ক্বাসাসে এসেছে –
سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ ﴿٥٥ القصص﴾
১০.সুরা আহজাব-
تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلَامٌ وَأَعَدَّ لَهُمْ أَجْرًا كَرِيمًا ﴿٤٤
الأحزاب﴾
১১.সুরা ইয়াসিন –
سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ ﴿٥٨ يس﴾
১২.সুরা সফফাত-
سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ ﴿٧٩ الصافات﴾
১৩.সুরা সফফাত-
سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ ﴿١٠٩ الصافات﴾
১৪.সুরা সফফাত-
سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ ﴿١٢٠ الصافات﴾
১৫.সুরা সফফাত-
سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ ﴿١٣٠ الصافات﴾
১৬.সুরা আল জুমার-
وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ ﴿٧٣ الزمر﴾
১৭.সুরা জুকরুফ-
فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ ﴿٨٩ الزخرف}
১৮.সুরা আল জারিয়াহ-
إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ ﴿٢٥ الذاريات﴾
১৯.সুরা আল জারিয়াহ-
إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ ﴿٢٥ الذاريات﴾
২০.সুরা আল ক্বদর-
سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿٥ القدر﴾
২১.সুরা আল বাক্বার-
تُثِيرُ الْأَرْضَ وَلَا تَسْقِي الْحَرْثَ مُسَلَّمَةٌ لَا شِيَةَ فِيهَا ﴿٧١ البقرة﴾
২২.সুরা আল বাক্বারা-
بَلَىٰ مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ ﴿١١٢ البقرة﴾
২৩.সুরা আল বাক্বারা-
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ ﴿١٢٨ البقرة﴾
২৪.সুরা আল বাক্বারা-
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ ﴿١٢٨ البقرة﴾
২৫.সুরা আল বাক্বারা-
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿١٣١ البقرة﴾
এছাড়াও প্রসিদ্ধ হাদিসের ৯টি কিতাবে সালাম শব্দটি ৪৮৬ বার এসেছে এবং সরাসরি “আসসালামু আলাইকুম ” বাক্যটি ৯ কিতাবে এসেছে ৯৫ বার।সালাম আল্লাহ তায়ালা এবং রাসূল সাঃএর পক্ষ হতে এগুলো কারো ব্যক্তিগত শব্দ নয়।
ইসালমিক স্কলারদের কাজ হল আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাঃ কে অনুসরণ করা তাদের বাণী গুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া শিক্ষা দেওয়া। এর পরেও যদি ইসলামিক স্কলাররা শুদ্ধভাবে সালাম শিক্ষা দিলে কেউ যদি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সালামকে জঙ্গিদের শব্দ বলে তাহলে ঐ ব্যক্তিকে জঙ্গি বলা হয় না বরং indirectly আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সাঃ বলা হয়।নাউজুবিল্লাহ। কারণ সালাম কারো ব্যক্তিগত শব্দ নয়।পরওয়ারদিগার আমি সহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন -আমিন।
‘আল্লাহ হাফেজ ‘।
তরুণ আলেম, শিক্ষক ও খতিব
পাটুয়াভাঙ্গা, পাকুন্দিয়া।