বেগম জাহেদা সিদ্দিকী
আমাদের প্রতিবেশীর বাড়ির বাইরের খোলা জায়গায় ঠিক দুপুর বেলায় খেলা করছে হাত তিনেক লম্বা একটি বিষধর গোক্ষুর সাপ,আর একটি বিড়াল। প্রথমে একজনের নজরে পড়লো বিষয়টি। তারপর সে চুপিচুপি হাতছানি দিয়ে একে ওকে ডাকল। দূরে দাঁড়িয়ে সাপ-বেড়ালের খেলা দেখতে লাগলো সবাই। অনেকে আতঙ্খিত হয়ে গেল। আশ্চর্য! ওরা দুজন এত মগ্ন হয়ে খেলছে,এত মানুষের সমাগম খেয়ালই করছে না।এমন সময় একজন মুরব্বী গোছের লোক এসে দৃশ্যটা দেখে আঁতকে উঠলেন। বললেন তোমরা সবাই পাগল হয়ে দেখছো নাকি!চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছো,ওদের খেলা যখন শেষ হবে,সাপটা কোনদিকে যাবে তা তোমরা জানো?যাওয়ার সময় কয়জনকে ছোবল মারবে তা ভেবে দেখছো?এখনই সাপটাকে মেরে ফেলো।
ভয়ে সবার মুখ শুকিয়ে গেলো,কিন্তু নড়ার নাম কেউ করলো না। একজন বললেন,কেমন করে সাপকে মারা হবে?সাপের কাছে যাবে কে? মুরব্বী মুখ খিঁচিয়ে বললেন,কাছে যেতে কি বলছি,কাছে গিয়ে মারা যায় নাকি?লম্বা বাঁশ বা একটা লাঠি হলে ভাল হয়।সঙ্গে-সঙ্গে একজন ছুটে গিয়ে লম্বা একটি লগি নিয়ে এল।তখন একজন শক্তিশালী লোক দূর থেকে লগি দিয়ে সজোরে সাপের গায়ে আঘাত করলো। আঘাতটা লাগলো সাপের ঘাড়ের নিচে। এতক্ষনে সাপটা ফনা তুলে চারদিক দেখলো। মুখে ক্রুব্ধ গর্জন নেই! হিস-হিস শব্দ নেই!! সাপের দৃষ্টিতে মনে হলো বেদনা আর ঘৃণা ফুটে উঠলো। যেন বলতে চাইলো,আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করিনি। শুধু মজা করে খেলছিলাম। তাই সাবধান হওয়া প্রয়োজন মনে করেনি। তার শাস্তি তোমরা আমাকে এভাবে দিলে?মেরে ফেলেছো আমাকে?
তার উদ্যত ফণাতে আবারও পড়লো লগির আঘাত। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো বেচারা সাপ। সবাই খুশি হয়ে তার মৃতদেহটা লগিতে ঝুলিয়ে নিয়ে চলে গেল। আমি দুঃখে মুষড়ে পরলাম। কেন যেন ব্যাপারটা আমাকে ভীষণভাবে আহত করলো। দু’চোখ ভরে জল এলো। আমার মা সব শুনে অবাক। তিনি বললেন কি সৃষ্টি ছাড়া মেয়েরে,বাবা! তুমি মুরগীর বিষ্ময় দেখতে পাও।সাপের বেদনা দেখতে পাও। আরও কত কিছুযে দেখবো,তার ঠিক ঠিকানা নেই।
বিশিষ্ঠ লেখিকা ও গল্পকার,ঢাকা।