সুলতান আফজাল আইয়ূবী
একটা সময় কোন ইস্যুর পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে যুক্তিতর্ক ও প্রকৃত সমালোচনার জায়গা ছিল টিভি টকশো ও সংসদ। কিন্তু দুঃখজনক দুটো জায়গায় আজ তৈলাসক্ত। সংসদে তো বিরোধী দল নেই বললেই চলে। আর টিভি টকশোগুলো আছে ধর্ম, মাদ্রাসা ও মুসলিম মানেই জঙ্গি বানানোর মেশিন এ কথা প্রচারে। এখনকার টকশো আর সংসদ অধিবেশন আমজনতা আগের মত উৎসাহ নিঢে দেখে বলে মনে হয়না। বাঙ্গালির এ সংস্কৃতি ধ্বংসের দায় কার?
ইদানিং টকশোতে কিছু জ্ঞানপাপীদের ধরে আনা হয়। যারা কিছুই না জানলেও এটা মনে করে যে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারাটাই বুঝি তার স্বার্থকতা। কোন বিষয় নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করারও একটা যোগ্যতা লাগে। সম্প্রতি এক টকবাজকে নিয়ে সোশ্যাল মাধ্যমে বেশ মাতামাতি হচ্ছে। সে নাকি বলেছে
শুদ্ধভাবে সালাম দেওয়া ও বিদায়বেলায় আল্লাহ হাফেজ বলা বিএনপি -জামায়াতের মাসয়ালা ও জঙ্গিবাদের চর্চা।
মোল্লারা কোথায় যাবে বলেন? আপনাদের তো অবস্থা হলো এমন দাঁড়ি,টুপি আর মোল্লা হলেই যাচাই বাচাই হীন তাকে জামাত শিবির হেফাজত বানিয়ে ছাড়েন। এ হিংসাত্বক বোকামী ছাড়েন। মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখুন।
দুঃখের কথা হলো এ মন্তব্যটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। এমন মুর্খ জ্ঞানপাপীরা ঢাবির কোন একটা বিভাগে চেয়ারম্যান হয় কি করে? এটা আমাদের জন্য লজ্জা!
ধর্মীয় সালাম আদব তো বাংলাদেশের দেশীয় সংস্কৃতি হয়ে গেছে। আজকাল ভিন্নধর্মালম্বরীও আরবীতে সালাম সম্ভাষণ জানে ও করে। কিন্তু দূর্ভাগ্য তার মত জ্ঞানপাপীর এটা জানার আজও সুযোগ হলোনা। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন বক্তব্যে সালাম, ইনশাআল্লাহ, ও বিভিন্ন আরবী আদবের শব্দ উল্ল্যেখ করেছেন। সোশ্যাল মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের সেক্রেটারীর একটা ভিডিও ক্লিপ দেখলাম সেখানে তিনি কর্মীদেরকে শুদ্ধভাবে সালাম দিয়েছেন এবং সালাম নেওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে শুদ্ধসালাম, সম্ভাষণে আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহ হাফেজ শব্দগুলো আরবী হলেও এগুলো এখন বাঙ্গালি সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। ভিন্ন ধর্মের লোকরা আজকাল সালাম ও এসব শব্দ ব্যবহার করেন।কিন্তু দুঃখজনক ঢাবির বিভাগীয় চেয়ারম্যান হয়েও তিনি এ শব্দগুলোর মর্মার্থ জানেন না। এটা চরম মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
আমরা জানি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ। অথচ আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই নানাভাবে ইসলাম বিদ্বেষের চর্চা হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান একজন প্রফেসরের সালাম ও আল্লাহ হাফেজ নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষের ভিডিওটি দেখে মুসলিম তথা বাঙ্গালিরা মর্মাহত হয়েছে।
একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ এতোটুকু জানেন না যে সালাম শব্দের অর্থই শান্তি। সালামের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরের জন্য দোয়া করেন। শান্তির দোয়া করেন। এটা যদি জঙ্গিবাদের লক্ষণ হয়, তাহলে শান্তির বার্তা কোনটি?
আজকাল টিভি শো থেকে নিয়ে বক্তৃতার মঞ্চ, ফেসবুক লাইভ থেকে নিয়ে ওয়াজের মাহফিল অনেকটায় অসভ্য বাক্যচারীদের দখলে। কথাবলার সুযোগ পেলেই ইচ্ছেমতো বকে যাচ্ছে যে যাকে। প্রত্যেক দল ধর্মের এসব অসভ্য বাক্যচারীদের থামাবে কে? রাষ্ট্র ও প্রত্যেক দল ধর্মের সিনিয়র পার্সনরা এদের লাগাম টেনে ধরুন। নয়তো এরা দেশ ধর্ম ও জাতিতে জাতিতে বিশৃঙ্খলা একের পর এক লাগাতেই থাকবে।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক,পাকুন্দিয়া প্রতিদিন
nobosur15@gmail.com