[১] ধর্ষন,ধর্ষক,ধর্ষিতা এই তিন বর্ণের তিনটি বিশেষন শব্দ আমাদের বাঙালি জাতির সাথে সেই মুক্তিযুদ্ধ থেকে বেশ ভাল ভাবেই লেগে আছে।আজ অব্দি থামার কোন নাম নেই।
২০১৬ সালের এপ্রিলে মালশিয়া আসি।
মালয়েশিয়া জীবনের দ্বিতীয় দিনেই একা একা ডেমু ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করি।যদিও পূর্বে ট্রেন ভ্রমণের কোন অভিজ্ঞতা নেই।ষ্টেশনে এসে বেশ কিছু বিষয় আবিষ্কার করলাম। ভাষা না জানা অচেনা একটা পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল।
স্টেশনে এসে টিকেট (প্লাস্টিক পয়সা) সংগ্রহ করে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।মিনিট দু-এক পর দুজন অর্ধ নগ্ন নারী(শর্ট জামা পরিহিত) এবং তিন জন পুরুষ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।নিজের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি লাগছে তাদের দেখে।তারাও ট্রেনের অপেক্ষায়।
ট্রেনে উঠার পর আমার চোখ কপালে উঠার জোগাড়। ট্রেনের দুই পাশে সীটের ব্যবস্থা মাঝখানে ফাঁকা জায়গা।যদিও মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাবস্থা আছে।দুই পাশেই বেশ কয়েকজন (অর্ধনগ্ন) নারী পুরুষ পাশাপাশি বসে আছে।পুরো ট্রেন জুড়েই এক ই অবস্থা।তারা একেকজন একেক দেশের নাগরিক।
কেউ নিজের মত করে মোবাইলে স্কল করছে আর কেউ একজন এরেকজনের সাথে কথা বলছে।এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে অর্ধনগ্ন সাদা চামড়ার মানুষের ভিড়ে নিজেকে কানিকটা মানিয়ে নিয়ে ফাঁকা জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম।বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিক মালশিয়াতে বসবাস করে যার কারনে ইসলামিক দেশ হওয়া স্বত্তেও ছোট কাটো পোশাক পরিধান এখানে স্বাভাবিক বিষয়।
দাঁড়িয়ে থেকে একটা বিষয় লক্ষ করলাম কোন পুরুষ লোক’ই পাশে বসে থাকা শর্ট জামা পরিহিত অর্ধনগ্ন নারীদের দিকে থাকাচ্ছে না। তারা বেশ সাবলীলভাবেই নারী পুরুষ এক সাথে বসে আছে এবং ট্রেনে যাতায়াত করছে মাইলের পর মাইল।শুধু ট্রেন বা বাস নয় এখানকার মার্কেট গুলোও একই অবস্থা।যেখানে আমাদের দেশে বাসের ভিতর বোরকা পিরিহিত নারীর শরীরেও পেছন থেকে পুরুষরা হাত দেই, সেখানে পাশাপাশি বসে থাকা অর্ধনগ্ন নারীর কারো শরীরে কেউ হাত দিবে তো দূরে থাক কারো দিকে কেউ আড় চোখে থাকাচ্ছেও না কিংবা আপত্তিকর কথা বলছে না।যারা বিদেশ যাতায়াত করেন তারা এই বিষয়টা সম্পর্কে ভাল জানেন।
তাহলে কি ভাববেন এদেশের পুরুষদের যৌন চাহিদা নেই??এরা কি পুরুষ নয়?তা না হলে এরা নারীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে না কেন??
না, এখানে পুরুষ রা চোখ বুজে থাকে না।তাদেরও যৌন আকাঙ্খা রয়েছে। নারীদের দিকে তারাও থাকায় তবে সেই থাকানোর মাঝে একটা ভদ্রতা আছে, নম্রতা আছে, শ্রদ্ধাবোধ আছে।
[২]
এক চীনা এজেন্টের অফিসে গিয়েছিলাম আমাদের কোম্পানি থেকে আমি সহ দুজন।অন্যান্য কোম্পানি থেকেও এসেছিল আমাদের বাংলাদেশের’ই কিছু লোক।এদের অধিকাংশের বয়স ৪০/৫০ হবে।সেখানে ফিলিপাইনের ৪/৫ জন মেয়েও এসেছিল শর্ট জামা পরিহিত। মেয়েগুলোকে দেখে আমাদের বাংলাদেশি ভাইয়েরা একজন আরেকজনের সাথে কানাকানি শুরু করে দিল।আমি অবাক হয়ে তাদের কান্ড দেখছিলাম।আমি স্পষ্ট শুনতে ফেলাম একজন আরেকজন কে বলছে-
“এই ভিডিও কর”
রুমে গিয়ে দেখব নে। ব্যাস শুরু হয়ে গেল ভিডিও করা।মেয়ে গুলো খুব ই সংকোচবোধ করে নিজেদের আড়াল করতে শুরু করল।আমি তাদের কান্ড দেখে রীতিমতো হতাশ।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের পুরুষদের অবস্থা।
আমাদের দেশের পুরুরা নারীদের স্রেফ যৌন চাহিদার উপকরণ মনে করে মাত্র।এদের কাছে নারী মানেই বিপরীত আকর্ষন।
এদের কাছে কে ডাক্তার,কে ইঞ্জিনিয়ার, কে শিক্ষক, কে মেয়ের বয়সী,কে মায়ের বয়সী কিচ্ছু আসে যায় না।
[৩]
আমাদের দেশের পুরুষরা (সবাই নয় অধিকাংশ) শারীরিকভাবে না পারলেও চোখ দিয়ে মেয়েদের ধর্ষণ করে প্রতিনিয়ত।
রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে হেটে গেলে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গ নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভাসতে থাকে।এদের চোখের চাহনি আর ভাবনা গুলো আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত না।এদের মধ্যে শুধু ২০/২২ বছরের যুবক’ই নয় ৬০ বয়স উর্দ্ধ বৃদ্ধ পর্যন্ত আছে।এদের অধিকাংশেরই একাধিক বউ, বিবাহ যোগ্য মেয়ে আছে ঘরে।
চোখ দিয়ে ধর্ষন করতে করতে যখন এরা সুযোগ পেয়ে যায় ঠিক তখনি ঝাপিয়ে পড়ে কোন নারীর উপর।যেমন টা ঘটে যাচ্ছে এখন প্রত্যেক দিন।
এটাই আমাদের সমাজ।এখানে ধর্ষন করে বন্ধুদের নিকট হিরো হওয়া যায়।ধর্ষন করতে না পারলেও মেয়েদের নানান বাজে কথা বলে বন্ধুদের আড্ডায় হিরো হয়। বিশ্বাস করুন এটাই বাস্তবতা। স্রেফ জন্মসূত্রে পুরুষ হওয়ার কারনে এই সমাজ, পরিবার আপনাকে আমাকে শিক্ষা দেই তুমি পুরুষ।এখানে তুমি ই হিরো।
এমসি কলেজ আর নোয়াখালীর ঘটনায় আমরা অনেকেই প্রতিবাদ করে বলে যাচ্ছি ধর্ষককে ক্রসফায়ার দেয়ার জন্য।কিন্তু আমরা এটা চিন্তা করছিনা ক্রসফায়ার শুরু হলে আবারো শত শত ওসি প্রদীপের জন্ম নিবে এই দেশে।এই দেশে যখন যার সময় আসে সেই নিজের মত করে ফায়দা লুটে।খুনের শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি থাকা সত্তেও হারহামেশায় খুন হচ্ছে।কারন যতাযত “লাইনঘাট” জানা থাকলে পার পাওয়া যায় এদেশে।কাজেই আইন পরিবর্তন করার আগে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করাটা জরুরি।
এভাবে চলতে থাকলে সুদূর ভবিষ্যতে আমাদের জন্য আরো ভয়াবহ কিছু যে অপেক্ষা করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।কচ্চপ গতিতে বিচার কাজ কখনো অপরাধ নির্মূল তো দূরের কথা, নিয়ন্ত্রণও সম্ভব নয় এ দেশে।আপনারা ভাবছেন হয়ত একটা সময় আসবে যখন এ দেশের মানুষগুলো সোনার মানুষে রুপান্তরিত হবে, তাহলে ভুল ভাবছেন।
সময় কখনো সমাধান দেই না,তাই সময়ের দিকে থাকিয়ে থাকা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।