সুলতান আফজাল আইয়ূবী
গত২৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট শহরের টিলাগড় এলাকায় স্বামীর সাথে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার এক তরুণী। তারা বেশ কিছুক্ষণ মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ক্যাম্পাসে সময় কাটান। সেখানে ৫-৬ জন ছাত্রলীগ কর্মী এসময় ওই তরুণীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে তার স্বামী প্রতিবাদ করলে ওই যুবকরা স্বামীকে মারধর শুরু করেন। এর এক পর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে ওই যুবকেরা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে রেখে একটি কক্ষে চার যুবক ওই তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
উপরের এমন বাস্তব সংবাদ প্রতিনিয়ই আমাদের চোখের সামনে মিডিয়ায় আসছে। ইস! এমন পাশবিক অপরাধের বিচার আর কত চাইবো? বিচার চাওয়ার ইচ্ছাও এখন জাগ্রত হয়না।কেননা, আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে বলার কোন আগ্রহ নেই।নয়তো ধর্ষণের কঠিন শাস্তি থাকলে এত পাশবিকতার সাহস পেতো না অমানুষেরা।
ধর্ষণ কথাটা শুনলে গা শিউরে ওঠে। আজকাল ধর্ষণের প্রবণতা এতই বেড়েছে শিশু থেকে নিয়ে বৃদ্ধা কোন নারী এখন আর নিরাপদ নয়। নারীরা আজ ধর্ষকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। ধর্ষণকারীরা ক্ষমতাবান হওয়ায় অধিকাংশ ধর্ষিতা বিচার পায় না। আইনের আশ্রয় চাইতে গেলে সেখানেও নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয়। প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের মত অমানবিক ঘটনা শোনতে হচ্ছে ৷ধর্ষণের কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেকে বিতর্কিত এবং আপত্তিকর মন্তব্যও করেন৷ ধর্ষণের জন্য মেয়েদের ছোট পোশাককেও দায়ী মনে করেন কেউ কেউ ৷ অনেকেই মনে করেন ধর্ষণের জন্য মূলত বিকৃত মানসিকতাই দায়ী৷ আমি অনলাইনে /অফলাইনে নানাজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণের বেশ কয়েকটা কারন খুঁজে বের করেছি ।
১.ধর্মীয় শিক্ষা ও চর্চার অভাব।
২. নারীর অশ্লীলতা।
৩.পারিবারিক শিক্ষার অভাব
৪.খারাপ সঙ্গ।
৫.যৌন শিক্ষার অভাব।
৬.মানুষিক রোগ।
৭.নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে না পারা।
৮।নারীর প্রতি জেদ।
৯। নেশা করা।
এ ধরনের আরও কিছু কারণ থাকতে পারে। এভাবে আর কত দেখবো এমন নির্মমতা, পাশবিকতা ও অমানবিকতা ? ধর্ষণ রোধে আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে।মানুষের মাঝে মানবিক গুণাবলী জাগ্রত করতে হবে । তার পাশাপাশি অপরাধীদের কঠোর মারাত্মক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রাখতে হবে। যাতে ভবিষৎ এ আর কোন ধর্ষক এমনভাবে মাথা চাড়া দিয়ে গজিয়ে না উঠে।
দেশে অপরাধীরা শাস্তি হয়না না বলে তারা আরো অপরাধ করার স্পর্ধা ও সুযোগ পেয়ে যায়। তাকে দেখে অন্যরাও অপরাধ করতে উৎসাহিত বোধ করে।এইভাবে সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র ও দেশ কলুষিত হচ্ছে। এদেশেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ধর্ষণের সেঞ্চুরী হয়। তারপরও ধর্ষক বুক ফুলিয়ে রাস্তা ঘাটে হাঁটে।
বেশীরভাগ ধর্ষক ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করছে। সেইটাকে রোধ করতে হবে। সর্বোপরি অপরাধ যেই করুক, এ রকম বিকৃত মানসিকতা তথা এমন সব অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আশা করা যায় কিছুটা হলেও সমাজ থেকে ধর্ষণ প্রবনতা কমবে। তা না হলে ভবিষ্যতেও ধর্ষণপ্রবণতা রোধ করা যাবে না।
কবি ও গণমাধ্যমকর্মী
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক,পাকুন্দিয়া প্রতিদিন
nobosur15@gmail.com