এম জে এইচ বাতেন
পাকুন্দিয়ার রাজনীতিতে মহানায়ক, সাবেক সংসদ সদস্য কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক একে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়া। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহচর,মুজিব আর্দশের প্রতীক, সাধারণ মানুষের প্রাণের বন্ধু,সততার প্রতীক,যিনি প্রতিহিংসার বাহিরের মানুষ, সকল মানুষের কথা বলার আস্থার জায়গার নাম একে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়া। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি আমি দেখেছি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। সেই আন্দোলনের সময় একে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়ার দিকনির্দশা মূলক বক্তব্য আমি শুনেছি।
১৯৯১ সালে পাকুন্দিয়ার রাজপথে থেকে উনার নির্দশনা মতে আন্দোলন করেছি।পাকুন্দিয়া কলেজে ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ার পর পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। তখন এমপি,র কাছ থেকে তার নীতি আর্দশের রাজনীতি দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি আওয়ামী লীগের সমমনা বিরোধী দলের মানুষজনও উনাকে ভীষণ ভালবাসতেন। তিনি কোনদিন প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে পছন্দ করতেন না। তিনি সব সময় বলতেন ,তোমরা মানষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ কর। যাতে দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
আমি দেখেছি পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি নেকবর আলী, সাধারণ সম্পাদক মরহুম আ: আহাদ ভাইয়েরা, এমপি একে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়ার নির্দেশে ওয়ার্ড পর্যায়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চিঠি বিতরন করতেন। এই এমপি,র প্রতি গ্রামের তৃণমূলের সাধারণ মানুষের কত টান ছিল তা একটি উদাহারণ দিলে বুঝা যাবে। একদিন কলেজে যাওয়ার পথে পাকুন্দিয়ার হোসেন্দীতে দেখলাম মরহুম উসমান গণি সরদার, শহর আলী,তাহের উদ্দিন ছাতা মাথায় দিয়ে পাকুন্দিয়া হেটে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছেন ? তারা বললেন, আমাদেরকে গোলাপ ভাই ডাকছে পাকুন্দিয়া যাচ্ছি । কুমরী, আহুতিয়া গ্রাম হতে পাকুন্দিয়া প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে তারা পায়ে হেটে যাচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি মিটিং এ যোগদান করার জন্য।
আর একটি স্মৃতি কথা না বললেই নয়- ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় একে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়া আমাদের গ্রামে আসে আমাদের কুমরী গ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশে আমি আর আমার বন্ধু নবী নোয়াজ গোলাপ দুইজন গ্রামে নেতাকে নিয়ে যাই নির্বাচনের ভোট চাইতে কয়েকটি বাড়িতে হেঁটে ভোট চাওয়ার পর আমাদের কুমরী গ্রামের শাহজালালের বাবা কান্ডু মিয়ার বাড়িতে যাই তখন তিনি বাড়িতে ছিল না, বাড়িতে মহিলারা বলল, বাড়ির পাশেই মরিচ চাষ করার জন্য হালচাষ করছে । আমরা নেতাকে বললাম এই লোক বঙ্গবন্ধুর জন্য খুবই ভক্ত মানুষ। নেতা বলল, চল উনার সাথে দেখা করব। তারপর কান্ডু চাচার কাছে জমিতে নেতা জমির আইলে দাঁড়াল । আমি চাচার কাছে গিয়ে বললাম চাচা আপনার কাছে ভোট চাইতে এসেছে তিনি একবার হালকা ভাবে তাকিয়ে বলল, “তুই যা গিয়া ক আমি শেখেরে নৌকায় ভোট দেম, ক যাইতগা আমি আইতাতামনা”। তখন নেতা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে এগিয়ে আসেন জমিতে এবং বললেন ভাই একটু হালটা থামান আমিই শেখের লোক। শেখের দল থেকে আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে এসেছি। এই বলে নেতা চাচাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। সেই স্মৃতি আজও আমার চোখে জ্বলজ্বল করছে। তখন কান্ডু চাচা নেতাকে বলেন, “নৌকা লইয়া আইলে আর ভোট চাইতে অইত না, যাইন আমি আনহেরে ভোট দেয়াম”।
এই ঘটনার পর বুঝা যায় একে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়া তৃণমূল নেতাদের সাথে কেমন সম্পর্ক ছিল। একে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়া ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ১৯৯৬ সলে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আজ ২৫ সেপেটম্বর ১৯৯৯ সালে মহান নেতা রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। আমি এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।এমন মহান নেতার মত নেতা পাকুন্দিয়া বারবার জন্ম হোক।
লেখক
সাবেক সাধারন সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন।
সহ-দপ্তর সম্পাদক,
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কিশোরগঞ্জ জেলা।