শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাবা,পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ( আত্মজৈবনিক রচনা)
/ ২৮৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আবদুর রব খোকন

আমাদের জেনারেশান গ্যাপগুলো বড় অর্থাৎ লম্বা সময়ের। আমার বাবা ও আমার জন্ম পার্থক্য ৫১ বছর! হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন- অর্ধ শতাব্দি। একজন সন্তান জন্ম নিয়ে যেখানে দেখে একজন তরুন বাবার উচ্ছাস, সেখানে আমার জন্মের সময় আমার বাবা বৃদ্ধ! (অনেকের মতে)। কিন্তু সত্যিকারভাবে আমার বাবা বৃদ্ধ ছিলেন না। আমার বাবা প্রায় ৯০ বছর বয়সে যখন রোড এ্যক্সিডেন্টে মারা যান তার আগের দিনও আমি একজন তরুন বাবাকেই পেয়েছি। মৃত্যুর আগেও তার হাঁটার সাথে আমাকে রীতিমতো দৌড়াতে হয়েছে! একজন সত্যিকারের সাদামনের ভাল মানুষ ছিলেন আমার বাবা।

আমাকে প্রথম আমার বাবাই সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে প্রথম স্কুলে নিয়ে যান গ্রামের মেটো পথ ধরে। গতকাল খুব মনে পড়ছিল। গতকাল সেই স্কুলঘরের ভাঙ্গা রুমের জায়গাটা দেখে আসলাম যেখানে প্রথমেই বাবা বসিয়েছিলেন স্যারদের সামনে। ধন্যবাদ আরিফ বাবুকে হেল্প করার জন্য।)

আমার বাবা বেহিসেবি ছিলেন না, অনেকে হয়তো বলবেন কৃপন ছিলেন। হ্যাঁ, আমার বাবার অর্থ আগমনে কোন অপবিত্রতা থাকতো না। তাই সেই সময়ের লোভনীয় ভূমি মন্ত্রনালয়ের চাকরী ছেড়ে দেন। আর তাই যতটুকু সৎপথে প্রাপ্য তাই পেতেন আর তা দিয়েই সংসার চালাতেন।

বাবার জীবনের শেষদিকে আমি আমার বাবাকে অনেকের সাথে তুরনা করতাম, দেখতাম আমার বাবার মতো ভদ্র ব্যবহার আর কেউ করে কিনা। খুব কমই পেয়েছি। আমার বাবাকে কোনদিন কোন রিক্সাওয়ালাকেও আপনি ছাড়া ডাকতে শুনিনি। বইপড়া ও জ্ঞানচর্চাকারী লোকদেরকে বাবা খুব পছন্দ করতেন। মেজর (অবঃ) মতিউর রহমার তার জীবনের শেষদিকে (মৃত্যুর কয়েক বছর আগে) বাবার সাথে এসে খুব আড্ডা দিতেন। তখন তিনি তাবরিগ করতেন। একদিন আমি জিজ্ঞেস করলাম তার সাথে কি এত আড্ডা দেন? আমিও তাকে পছন্দ করতাম। আব্বা বললেন “উনি জ্ঞানী মানুষ, জ্ঞান চর্চা করেন।” ব্যাস।

আমার সাথে আমার বাবার বয়সের গ্যাপ যতই হোক, তিনি শেষ জীবনে আমার সাথে বন্ধুর মতোই আচরণ করতেন। একদিন আমাকে নিয়ে গেলেন কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজে। শুধু এটুকু দেখানোর জন্য যে ঐ হলরুমটায় এসেছিলেন ওরিয়েন্টেশান ক্লাসে। তিনি ওরিয়েন্টেশান ক্লাসে কি বলেছিলেন শিক্ষাগুরুরা সব তিনি বলতে পারলেন।

ছোটবেলায় একবার আমার মার সাথে বাবার ঝগড়া হলো। ফল যা হবার তাই- রান্না বন্ধ। বাবা চুপচাপ আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন পুলেরঘাট বাজারে। আমার প্রিয় শিং মাছ দিয়ে খাইয়ে নিয়ে আসলেন, কাউকে জানালেন না!

আমার বাবা জীবনে তেমন কিছু পাননি, চানওনি। বঞ্চিতই হয়েছেন বেশি। সেই সময়ে, সেই সামাজিক পরিবেশে, সেই আর্থিক সামর্থে বাবার এর চেযে বেশি দেয়ার মতো সুযোগই ছিল কই?

আমার বাবা যেদিন রোড এ্যাক্সিডরন্টে মারা যান। সেদিন আমার পায়ের নিছে কোন মাটি ছিল না। মনে হচ্ছিল আমি সত্যিকারের এতিম হলাম। আমার শুদু মনে হচ্ছিল এটা সম্ভব না, আরও অনেক কথা, অনেক কিছি শেয়ার করার বাকী আছে। বাবা আমাকে কথা দিয়েছিলেন বাবার বাবার বাবার ভিটে দেখাতে নিয়ে যাবেন। কেন কথা রাখেন নি, কেউ আমাকে বলতে পারেন?

আমার বাবা কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন, আমারতো আরও অনেক কথা বাকী ছিল বাবা!

চলবে…..

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ