মাহিম ইসলাম
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারিতে যে পরিমান প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তাতে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই চিকিৎসা সেবা ছেড়েছে। তাই ভয় না পেয়ে মানবসেবায় কাজ করে যাচ্ছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের আঃ হামিদের ছেলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আনিস আহাম্মেদ শিবলী(২৭)। তিনি সাহস সঞ্চয় করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।ভয়কে তিনি জয় করে পাঁচ শতাধিক করোনা উপসর্গ ব্যাক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছেন ।
শিবলী বলেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশপ্রমি মানুষ যদি জীবন বাজি রেখে পরাশক্তি শত্রুর মোকাবিলা করতে পারেন, তাহলে আমি কেন জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব না। এই যুদ্ধ সাময়িক। এই দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাকে এই সাহস ও শক্তি দিয়েছে। পরিবারের লোকজন পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে, এমন ব্যক্তিদের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৬০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বলে জানালেন।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেচ্ছাসেবী হিসেবে করোনা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি। গত ০২-০৫-২০২০ ইং তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো : হাসিবুর সাত্তার স্যার আমাকে সেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগপত্র প্রদান করেন। বর্তমানে আমি সমগ্র উপজেলার নমুনা একাই সংগ্রহ করে আসছি। হাসপাতালের বুথে নমুনা সংগ্রহের পরও অনকলে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে বাড়িতে গিয়ে আমি নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথম ধাপে ১৪৫ জন ও দ্বিতীয় ধাপে ৫৭ জন সেচ্ছাসেবী মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নিয়োগ প্রদান করে। কিন্তু আমি প্রকৃত সেচ্ছাসেবী মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট হয়েও আজ পর্যন্ত নিয়োগ পাইনি। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন আমাদের মতো প্রকৃত সেচ্ছাসেবীদের সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রদান করে বেকারত্বের কবল থেকে আমাদের রক্ষা করেন।
নমুনা সংগ্রহের কাজটি এখন তাঁর কাছে আর ভয়ের নয়। পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি কেটে গেছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো : হাসিবুর সাত্তার বলেন, শিবলী একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট, তাকে আমি চার মাস আগে যখন বলিলাম সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার জন্য সে নিঃসংকোচে আন্তরিকতার সাথে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করে যাচ্ছে। আমার এখানে যারা মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট হিসেবে কাজ করত সিবলী ছাড়া বাঁকি তিনজন করোনা পজেটিভ এখন সে একাই করোনা নমুনা সংগহ করে যাচ্ছে এখন পর্যস্ত পাঁচ শতাধিক করোনা উপসর্গ ব্যাক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে। তার মতো ছেলের চাকুরী যদি সরকারীকরণ করা হয় তাহলে সরকার তথা দেশবাসী লাভবান হবে। যদি কখনো করোনা মহামারি শেষ হয়ে যায় তাহলে তাকে অন্যান্য কাজে ব্যাবহার করা যাবে। গণমাধ্যম এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সাস্হ্য মন্ত্রী ও সাস্হ্য সচিবের কাছে আমার আকুল আবেদন তাদের চাকরি যেন সরকারীকরণ করা হয়।