সুলতান আফজাল আইয়ূবী
মুজিবাদর্শ। বর্তমানে এই শব্দটি কতটুকু জায়গা মত ব্যবহার হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। আজ যততত্র শব্দটি ব্যবহার করে শব্দটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে তথাকথিত একটি চক্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন লড়েছেন বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালির জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। বাঙালি জাতির ভাগ্যকে তিনি জয় করতে গিয়ে নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযোগ পাননি। জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার সব কিছু সহ্য করেছেন; কিন্তু বাংলার মানুষের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাঁর মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলার মানুষের মুক্তি।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট (১৯৭২ সালের এক সাক্ষাৎকারে ) বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়? বঙ্গবন্ধু সে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি। আর আপনার দুর্বল দিকটা কী? বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি। এই হলেন বঙ্গবন্ধু।
আর বর্তমানে মুজিবাদর্শের লড়াকু সৈনিক বলে অতিমাত্রায় নিজেকে মুজিবার্দশবাদী বলে প্রচারকারীরা এ শব্দটিকে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিচ্যুত কাজ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আজ প্রশ্নবিদ্ধ করছে! তারা অন্যায়, অত্যাচার, অসহায়, গরীব নিপেড়িত মানুষদের পান থেকে চুন কষতেই বা ব্যক্তি আক্রোশ মিটাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হামলা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। অথচ যেই মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন আজ সেই মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করছে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে।
আজকের অধিকাংশ মুজিবার্দশবাদী বলে প্রচার করা নেতারা রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িত করলেও তারা অনেকেই এখনও স্পর্শও করেনি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী। তারা জানেনা বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন ও সংগ্রামের মহা উপাখ্যান সম্পর্কে। তারা জানেনা ৫২,৬৯,৭১,৭৫ কে। অতএব, তাদের কাছ থেকে মুজিবার্দশের কোন ফলাফল পাওয়ার আশা উলুবনে মুক্তা ছড়ানো।
তারা জানে বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোট, সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী পরলেই আর বড় কোন নেতার সাথে ছবি ,বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সাথে ছবি তুলায় বুঝি হলো মুজিবার্দশ! ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজেকে মুজিবার্দশের লড়াকু সৈনিক বলে উপস্থাপন করাই বুঝি মুজিবার্দশ!
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঠিক জীবনবৃত্তান্ত জানা ও তাঁর আদর্শ ধারণ করার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, বর্তমান আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তাদের তা অনুধাবন করতে হবে। সমকালীন ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রটি খুবই দূষিত। প্রত্যেকটি জায়গায় আজ নিজেদের ঘরোয়া কোন্দলে আন্দোলিত।সব শাখা প্রশাখায় আজ নামে-বেনামে দলের নতুন নতুন শাখা সৃষ্টি করে বিব্রত করছে সাধারন মানুষদেরকে। অপরদিকে দলের ত্যাগী কর্মী ও বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ লালনকারীদেরকে আজ বঞ্চিত করছে এসব মহল।
তাই বঙ্গবন্ধুর জীবনচর্চা করা দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য অপরিহার্য। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটি উদ্যোগ নিতে পারে। মোড়ে মোড়ে বাঙ্গালিকে কাঙ্গালি ভোজের পাশাপাশি নব্য নেতাদেরকে সভ্য করতে বঙ্গবন্ধুর সঠিক আদর্শ শিক্ষা দিন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদেরকে দিনব্যাপী, সাপ্তাহব্যাপী এমনকি শোকের মাসব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার কর্মশালা করে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শের সাথে পরিচয় করানোর ব্যবস্থা করুন।মুজিবাদর্শের সঠিক চর্চাকারীদের মূল্যায়ন করুন। মুজিবার্দশের প্রকৃত সৈনিক গড়ে তুলুন। তবেই শান্তি পাবে টুঙ্গিপাড়ায় নিভৃতে কাঁদা মুজিবের পবিত্র আত্মা।
কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
nobosur15 @gmail.com