মুহাদ্দিস মাও:আজিম উদ্দিন বিন মজনু।
মানুষ বিভিন্নভাবে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকেন। কেউ তার নামের শুরুতে বংশের নাম ব্যবহার করে থাকেন। আবার কেউ তার নামের শেষে বাবার নাম ব্যবহার করে থাকেন। বিয়ের পর অনেক নারীর নিজের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করে থাকেন। কেউ সেটা স্বেচ্ছায় করে থাকেন কেউ অনিচ্ছায় করে থাকেন। কিন্তু বিবাহের পর একজন নারী তার নামের শেষে স্বামীর নাম ব্যবহার করতে ইসলাম কী বলে?
স্ত্রীর নামের শুরুতে কিংবা শেষে স্বামীর নাম ব্যবহার করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামী শরীয়ত মতে এটা একটি অযৌক্তিক ও হারাম কাজ। যা কবিরা গোনাহ। ইসলাম শরীয়তে এর কোন গুরুত্ব থাকলে, রাসূলুল্লাহ (সা:)এর স্ত্রীগণ রাসূলুল্লাহ্ (স:) এর নামের অংশ তাদের নামের সঙ্গে যোগ করতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। বরং রাসূলুল্লাহ্ (স:) এর স্ত্রী হয়েও তারা পরিচিত ছিলেন তাদের বাবার নামে।
এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম বলেন, জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে পরিচয় সম্বন্ধ করা নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়া’লা ইরশাদ করেন, তোমাদের পালক পুত্রদেরকেও তোমাদের প্রকৃত পুত্র করেননি। এসব তো হচ্ছে এমন ধরনের কথা, যা তোমরা সম্মুখে উচ্চারণ করো, কিন্তু আল্লাহ এমন কথা বলেন যা প্রকৃত সত্য এবং তিনিই সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন।’ (সূরা আল আহজাব: ৪)
মুসলিম নারীদের উচিত বিয়ের পরও তার পৈতৃক নাম ঠিক রাখা। কারণ এটা তার একেবারেই নিজস্ব। বাবা কর্তৃক প্রদত্ত নাম ঠিক রাখার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেছেন: ‘তোমরা তাদেরকে তাদের বাবার নামে ডাকো।’ (সূরা আহজাব : ৫)
তবে সরকারের কোন পলিসির কারণে চালু হলে, ঐসকল দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের ক্ষেত্রে কেবল বাধ্য হলেই তা মেনে চলা বৈধ। অন্যথায় নয়। আল্লাহ্ তায়া’লা ইরশাদ করেন, ‘যেসব জিনিসের ব্যবহার আল্লাহ তায়া’লা হারাম করে দিয়েছেন সেগুলোর বিশদ বিবরণ তিনি তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, তবে তোমরা নিরূপায় অবস্থা ছাড়া।’(সূরা আনআম: ১১৯)
পবিত্র কুরআনে নারীদের পরিচয় পিতার সাথে সম্পৃক্ত করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন, ‘ইমরানের কন্যা মরিয়ম যে তার সতিত্বকে হেফাজত করেছিল।’(সূরা আত তাহরিম: ১২)
হাদিসে পিতার নামের পরিবর্তে অন্য নামে ডাকা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা) এর লা’নত বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাসূল (স) বলেছেন: ‘যে কেউ নিজেকে বাবার নাম ছাড়া অন্য নামে ডাকবে তার ওপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সমগ্র মানুষের লা‘নত বর্ষিত হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তবে স্বামীদের নামে কাউকে উল্লেখ করলে সে ক্ষেত্রে নামহীন কেবল স্ত্রীর সর্ম্পকটি দিয়ে পরিচয় দেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ্ তায়া’লা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কাফেরদের ব্যাপারে নূহ এবং লুতের স্ত্রীদেরকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন।’
পবিত্র কুরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ঈমানদারদের ব্যাপারে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করছেন।’ (সূরা আত তাহরিম: ১০-১১)
রাসূল (সা) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজেকে নিজের পিতা ছাড়া অন্যের সাথে সংযুক্ত করে, তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ)
আবার আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল (স:) বলেছেন, যে কেউ নিজের বাবা ব্যতীত অন্যের পরিচয়ে পরিচয় দেয় সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ সত্তর বছর হাঁটার রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসনাদে আহমাদ)
হাশরের মাঠে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পিতার নামে ডাকা হবে বিধায় প্রত্যেকেই সুন্দর নামের পাশাপাশি উপাধি স্বরুপ পিতার নামে রাখা উচিত। হাদিসের ভাষায়, হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদের ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতার নামে। অতএব তোমাদের নামগুলো সুন্দর করে রাখো। (আবু দাউদ, বায়হাকি ও মুসনাদে আহমদ)
স্বামী বা স্ত্রী যদি স্ত্রীর নামের সাথে উপাধি রাখতে চায় তাহলে স্ত্রী তার পিতার বংশীয় উপাধি ব্যতীত স্বামীর নামা বা স্বামীর বংশীয় উপাধি দিয়ে নাম রাখা মানে নিজের স্থান জাহান্নাম করে নেওয়া।
অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সাথে সম্পৃক্তের দাবী করল, যে বংশের সাথে তার কোন বংশগত সম্পর্ক নেই। সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। (সহীহ্ আল-বোখারী)
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে স্ত্রীর নামের সাথে স্বামীর নাম যোগ করার ভয়াবহ পরিণামের কথা বুঝার তাওফিক দান করুন, আমিন।
মুহাদ্দিস মাও:আজিম উদ্দিন বিন মজনু।
ইমাম এন্ড খতিব; হ্যাটফিল্ড জামে মাসজিদ, আমেরিকা।