জুম ব্যবহার করে শিক্ষকরা তাদের ক্লাস নিচ্ছে। ক্লাসে অংশ নিতে মা-বাবার মোবাইল ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার সরকারি বেসরকারি বিশেষ করে সুপরিচিত স্কুল-মাদরাসা-কলেজগুলোতে গত কয়েক মাস ধরেই এমন চর্চা চলছে। তারই সঙ্গে চলছে পাকুন্দিয়া মডেল মাদরাসার অনলাইন শিক্ষা পাঠদান কার্যক্রম।
করোনাভাইরাসের কারণে সরকার গত মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর এপ্রিল পর্যন্ত ঈদসহ নানা ছুটির কারণে মে মাস থেকেই অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কাজ শুরু করে অনেক স্কুল-মাদরাসা-কলেজ।
পাকুন্দিয়ার বাহিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সাতক্ষীরাসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে এ ধরণের অনলাইন শিক্ষাদান কর্মসূচি চালু করেছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তবে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল-মাদরাসা-কলেজের চেয়ে বেসরকারি স্কুল-মাদরাসা-কলেজগুলো বিশেষ করে ইংরেজি মিডিয়াম বা উভয় মাধ্যমের পরিচিত স্কুল-মাদরাসা-কলেজগুলো ফেসবুক বা জুম ব্যবহার করে অনলাইন পাঠদান শুরু করে গত কয়েক মাস থেকেই।
তবে শহরাঞ্চলে ঠিক কত স্কুল-মাদরাসা-কলেজ অনলাইনে পাঠদান শুরু করেছে আর কতগুলোতে চালু করা যায়নি তার কোনো হিসেব নেই। আবার সরকারি স্কুল-মাদরাসা-কলেজগুলোতে অনলাইনের চেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে সংসদ টিভির মাধ্যমে স্কুল-মাদরাসা-কলেজের সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান প্রক্রিয়াকে।
শহরগুলোর বাইরের শিক্ষাদান পরিস্থিতি নিয়ে পাকুন্দিয়া মডেল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, তারা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেলকেই বেশি ব্যবহার করছেন।
সরকারি পোর্টাল শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে তাদের আগে থেকে রেকর্ড করা কনটেন্ট ইউটিউবে দেয়া হয় এবং শিক্ষার্থীদেরও জানিয়ে দেয়া হয়।
“আমরা অনেকে আমাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রাতিষ্ঠানিক পেজে লাইভ ক্লাসগুলো দেই এবং জুমের মাধ্যমের ক্লাস করাই যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে পেতে পারে। অনেকেই সেগুলো দেখে ও সে অনুযায়ী পড়াশোনা করছে এই বন্ধ সময়টাতে”।
তিনি আরো বলেছেন, ৫ম থেকে ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য অসংখ্য ক্লাস করিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানিক সভায় অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে যেন তারা শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ক্লাসগুলো দেখতে উৎসাহিত করেন।
“আমাদের এখানে যেসব শিক্ষার্থীর বাসায় মোবাইল ও ইন্টারনেট নেই তাদের তালিকা করছি। তাদের পরামর্শ দিচ্ছি যাদের বাসায় মোবাইল ও ইন্টারনেট আছে সেখানে শ্রেণীওয়ারী পাঠদান হচ্ছে সেগুলো যেনো তারা দেখে নেয়”।
‘ফেসবুক পেজ ও জুম নামের অনলাইন মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন তাঁদের পছন্দসই কোর্সগুলো বিনামূল্যে করতে পারেন, সে রকম একটি ব্যবস্থা করেছি। আমরা এই উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনলাইন পাঠদান করিয়েছি। এই দুর্যোগের সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রাখার জন্য বিশেষজ্ঞদের একটা দল আমাদের সঙ্গে আছেন, তাঁরা বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করছেন। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা তাঁদের উন্নত মানের সেবা দিতে চাই।’
মাদরাসা বন্ধ থাকলেও ফেসবুক এবং জুম অনলাইনে পাঠ্য কার্যক্রম চালু রাখার মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা জানায়, “মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ফেসবুক ও জুমে আমাদের লেখাপড়া করছি। এখানে আমাদের যে বাড়ির কাজগুলো দেওয়া হয়, তা আমরা নিয়মিত করি। আমাদের পড়াশোনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ”
অভিভাবকগণ জানান, সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনলাইনে প্রতিদিন ক্লাস করতে হচ্ছে ছেলে-মেয়েকে অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষকরা পাঠদান করছেন। আমাদের সন্তানও নিয়মিত এই ক্লাস করছে। তারা উপকৃত হচ্ছে। আমাদের মনে হয় অন্য শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হচ্ছে।”