মনে মনে করা অংকটা মিলে যাওয়ায় তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে শরীফের মুখে। চোখ দুটোতে রাজহাঁসের মতো খেলা করছে আনন্দের ঝিলিক। এতক্ষণ মুখে না ছোঁয়ানো চায়ের কাপে চুমুক দিল আয়েশী ভঙ্গিমায়। আহ, কি শান্তি! ঈদে বাড়িতে না যেতে পারলেও বউয়ের জন্য শাড়ি, একমাত্র ছেলের জন্য জামা-কাপড়, জুতো আর মায়ের জন্য ডাক্তারের চেকআপসহ ঔষধ। তাতেই খুশির সীমা নেই তার। তাছাড়া বউ এবার বাপের বাড়িতে ঈদ করবে বলে ঠিক করেছে। এতে খরচের পরিমাণ কমে গেল আরো।
ছোটবেলার কথা মনে হলে চোখ ছল ছল করে ওঠে শরীফের। ঈদ-মৌসুমে নতুন নয়, পুরনো জামা রিপেয়ারিং আর দীর্ঘদিন তুলে রাখা জুতো রং করতে পারলেই সুখে আটখানা হয়ে যেত। এখন রিপিয়ারিং লাগে না, ঈদে নিজের জন্য এবং পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা-জুতো কেনার ক্ষমতা তার আছে। চাট্টিখানি কথা নয়!
একটা এনজিও অফিসের সাত তলায় ফুট-ফরমায়েশ আর চা-টা বানিয়ে দেয়ার কাজ করে সে। বেতন যা পায় তার থেকে সব খরচ বাদ দিয়েও হাজার দুয়েক টাকা জমাতে পারে। খুব সুখেই কাটছে তার দিন, অন্তত আগের তুলনায়। বেতন বাড়লে মা আর বউ-সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে আসার ইচ্ছা আছে তার।
বসের রুমে চা নিয়ে যাওয়ার অর্ডার আসলো। চা বানানোর ফাঁকে ভাবল, আজ ৮ তারিখ। সবার বেতন হয়ে গেছে। কেবল শরীফের এবং তার সমপর্যায়ের কর্মচারীর বেতন আটকে আছে। ঈদের বাকি আর পাঁচ দিন। আজ বেতনটা পেয়ে গেলে কাল পরশুর মধ্যে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলতে পারবে। অন্যদেরকে না বলে সরাসরি বসকে বললে বেতনের বন্দোবস্ত দ্রুত হয়ে যেতে পারে। বস দুজন মহিলা ক্লায়েন্টের সাথে মিনি কনফারেন্সে ব্যস্ত। এমন সময় রুমের ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেয়ে চা নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। বসের মন-মেজাজ ভালো কি না তা অনুমান করার চেষ্টা করল শরীফ। ততটা খারাপ বলে মনে হলো না। ক্লায়েন্টেদের সাথে বেশ হাসিমুখে কথা বলছেন। শরীফ চা এগিয়ে দিয়ে আমতা আমতা করছে কথাটা বলবে কিনা। বস ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বললেন- শরীফ, কিছু বলবা?
আশ্বাস পেয়ে শরীফ কিছুটা সাহস পেল। নরম গলায় বলল- স্যার, সবার বেতন হয়ে গেছে। শুধু আমারটা বাকী। আজকে বেতনটা পেলে ঈদের মার্কেট করতে পারতাম স্যার। বস ক্লায়েন্টদের সামনে এমন কথা শুনতে অপ্রস্তুত ছিলেন। সাথে সাথে সুপারভাইজারকে ফোন দিয়ে রাগে চিরচির করতে করতে বললেন- কী লোক নিয়োগ দিয়েছেন ম্যানার বুঝে না। আগামীকাল থেকে এমন আনঅফিসিয়াল লোককে যেন আমার অফিসে না দেখি।
ম্যানেজার দ্রুত এসে শরীফকে তার রুমে নিয়ে গেল। আচ্ছা মতো ঝাড়ি দিয়ে বলল- তোর কত বড় সাহস বসের কাছে বেতন চাইতে গেছিস। তোর চাকরি গেছে তো গেছেই সাথে আমার চাকরিটা নড়বড়ে করে ফেলেছিস। কাল থেকে এ অফিসের দরজা তোর জন্য বন্ধ। শরীফ হতভম্ব হয়ে গেল। কাকুতির সুরে অনয়-বিনয় করে বলল- বেতন যখন ইচ্ছা তখন দিয়েন। তবু আমার চাকরিটা বাদ দিয়েন না। আনন্দের চেয়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকাটাই আমার কাছে অনেক বড়।
তন্ময় আলমগীর
ধানমন্ডি, ঢাকা।
০১৯১৪৩২২০৯৩