মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুরবানীর পশু ক্রয় বিক্রয়ে প্রতারণা ঘৃণ্য কাজ
/ ২০৯ Time View
Update : সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০, ২:৩৭ অপরাহ্ণ

 

সুলতান আফজাল আইয়ূবী

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা মানে কুরবানী।মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ। কেননা বান্দাহ কুরবানীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলা প্রিয় পাত্র ও নিকটবর্তী হতে পারে। কুরবানীর মাধ্যমে বান্দাহ তাকওয়া অর্জন করতে পারে। একজন মুমিনের অন্যতম চাওয়া পাওয়া হলো আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন। তাকওয়া অর্জন ছাড়া বান্দাহ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করতে পারেনা। কুরবানী তথা পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানী দাতা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন : ‘আল্লাহর নিকট পোঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পোঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্ম পরায়ণদেরকে। (সূরা আল-হাজ্জ: ৩৭)

পবিত্র ঈদুল আযহায় কুরবানীর জন্য সারা দেশজুড়ে চলছে কুরবানীর পশু ক্রয় বিক্রয়ের জমজমাট বানিজ্য।আর এই সুযোগে কিছু অসাধু চক্র প্রতারণা করছেন সাধারণ মানুষের সাথে। অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য ভারতীয় ও দেশীয় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী গরু পালনের খাবার খরচ কমাতে এবং অল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করনে গরুকে অতিরিক্ত ইউরিয়া, সি- প্রোহেপটাডিন, ষ্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়াচ্ছে ও ইনজেকশন দিচ্ছে। ফলে গরুর শরীরে পানি , জলীয় পদার্থ ও চর্বি জমছে। গরু মোটাতাজা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করায় এগুলো দেখতে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান ,বাজারেও দামও বেশী । স্বাস্থ্য ও প্রাণী সম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে কৃত্রিম উপায়ে অস্বাভাবিক ভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খাওয়ার ফলে এ দেশের মানুষ উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস ও ব্রেইন স্ট্রোকেও আক্রান্ত হতে পারে। মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদপিন্ড সহ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা সম্পূর্নই প্রতারণা ও অনেকটাই নিরবে মানুষ হত্যার শামিল। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে প্রতারণা, ঠকানো ও ধোঁকাবাজি মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য ও শরিয়ত গর্হিত কাজ। যা দেশ, সমাজ ও সভ্যতাকে কলুষিত করে। মানুষের অসততা, কুপ্রবৃত্তি ও অসৎ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে এটি খুবই নিকৃষ্ট ও মারাত্মক।

ইসলামে ধোঁকা ও প্রতারণার কোনো স্থান নেই। কোনো মুসলমান কাউকে ধোঁকা ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারে না। ধোঁকা মুনাফেকের স্বভাব। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে প্রতারণার জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সময় মুনাফেকরা মুখে বলতো আমরা আল্লাহকে, আল্লাহর নবীকে এবং এই
কোরআনকে মানি কিন্তু তারা বাস্তবে তা
মানতো না। যার ফলে আল্লাহতায়ালা এই আয়াত নাজিল করেন, ‘এমন কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহকে এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করি।
প্রকৃতপক্ষে তারা বিশ্বাস করেনি, তারা
আল্লাহকে ও মুমিন বান্দাদেরকে ধোঁকা
দিতে চায়। (সত্য কথা এই যে) তারা
নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা
দেয় না। এবং তাদের এই বিষয়ে
কোনো উপলব্ধি নেই ‘ (সূরা বাকারা -৮-৯)
বর্ণিত আয়াতনুসারে প্রতারণারকারী প্রথমেই সে তার নিজের ক্ষতি করছে। প্রতারণা করার কারণে তার আমল ও আখেরাত বরবাদ হচ্ছে। তার নীতি-নৈতিকতা মুনাফিকদের সাথে সাদৃশ্য হচ্ছে। জীবিকা উপার্জনের উত্তম
পেশা হিসাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব
অনস্বীকার্য। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা সালাতের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের পরই ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।আল্লাহ তা’আলা বলেন:- ‘ যখন সালাত শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ’ (জুম‘আ- ১০)

অধিকাংশ নবী রাসূল ও সাহাবীগন পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নিয়েছেন। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পেশা
ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই ব্যবসা-
বাণিজ্যে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা,
বিশ্বস্ততা, আমানতদারী থাকা অপরিহার্য। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। দ্রব্যের কোন দোষ-ত্রুটি থাকলে ক্রেতার সম্মুখে তা প্রকাশ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবে এবং তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে।যারা ব্যবসা-বানিজ্যে ধোঁকা দেয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সম্পর্কে বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, ‘একদা নবী করীম (সা:) কোন এক খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যস্তূপে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে দেখলেন তার হাত ভিজে গেছে। তিনি বললেন, হে খাদ্যের মালিক! ব্যাপার কি? উত্তরে খাদ্যের মালিক বললেন, হে আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টিতে উহা ভিজে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘তাহলে ভেজা অংশটা শস্যের উপরে রাখলে না কেন? যাতে ক্রেতারা তা দেখে ক্রয় করতে পারে। নিশ্চয়ই যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়’।(মুসলিম শরীফ -১৭৬)

সুতারাং, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে,মানুষকে ধোঁকা দিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনে সাময়িক লাভবান হওয়া গেলেও এর শেষ পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ঘৃণ্য ও চরম এই পাপ থেকে সকলেই সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।

কবি ও গণমাধ্যমকর্মী
nobosur15@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ