
সুলতান আফজাল আইয়ূবী
হুমায়ূন আহমেদ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের জননন্দিত লেখক। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক , ছোটগল্পকার , নাট্যকার এবং
গীতিকার , চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
আজ এই অমর পুরুষের অষ্টম প্রয়ান দিবস। তরুণ সমাজে জন প্রিয়তার তুঙ্গে এই সাহিত্যিক মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন তার সৃষ্টি সম্ভার উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোও আলোচনার বিষয়। ‘হিমু’,
‘মিসির আলী’ ‘শুভ্র’ ‘কোথাও কেউ নেই’ চরিত্রগুলো তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠেছে ভীষণ জনপ্রিয়।
কোথাও কেউ নেই এর মূল চরিত্র বাকের ভাইয়ের জন্য রাজপথে মানুষ নেমে এসেছেন।তাদের দাবী আদায়ের জন্য চলছে আন্দোলন। বাকের ভাইকে যেন ফাঁসির দড়িতে না ঝুলানো হয়।হ্যাঁ এটিই সত্য, কোন সিনেমার গল্প নয়। তবে ফাঁসিটি দেওয়া হবে সিনেমায়। তবুও বাকের ভাইয়ের মত সুবোধ ব্যাক্তির ফাঁসি হবে এটি মেনে নিতে পারছিলেন না দর্শকবৃন্দ।যদিও এটি সিনেমার দৃশ্য। তাই লেখকের কাছে দাবি
জানিয়েছিলেন দর্শকরা যেন আগামী পর্বে এই চরিত্রে অন্য কোন দৃশ্য দেওয়া হয়।কতটুকু পাঠক মন জয় করলে বাস্তবে এরকম হওয়া সম্ভব!
হুমায়ুন ছিলেন মধ্যবিত্ত মানুষের মনের গহীন কোনে। তার ঐতিহাসিক উপন্যাস নন্দিত নরকের মাধ্যমে প্রথম পরিচয়। রচনা করেছেন অসংখ্য বই। প্রকাশকরা তার পিছনে লাইন ধরে থাকতো। অটোগ্রাফের জন্য পাঠকরাও বই মেলায় ভিড় করতো।
আজ তার ৮ম প্রয়ানে তার সম্পর্কে কালের কণ্ঠে ইমদাদুল হক মিলন লিখেছেন “হুমায়ূন আহমেদ এক কিংবদন্তি। সাহিত্যে তাঁর জনপ্রিয়তার তুলনা চলে শুধু শরৎ চন্দ্রের সঙ্গে। শরৎ চন্দ্রকে বলা হয় অমর কথাসাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদও অমর কথাসাহিত্যিকই। মৃত্যুর পর যে লেখকের জনপ্রিয়তা কমে না বরং বেড়েই চলে, সাহিত্যে তিনি স্থায়ী হয়ে যান। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী হয়ে গেছেন”।
তার জীবনের শেষাংশে তিনি ঐতিহাসিক এক উপন্যাস লিখেছেন বিশ্বনবী (সা:)এর জীবনী, সিরাত বিষয়ক গ্রন্থ “নবীজী”।এটি এখন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন “হুমায়ুন আহাম্মেদের অপ্রকাশিত লেখা”য় প্রকাশ করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ একজন জেনারেল শিক্ষিত ব্যাক্তি,উনি কোন আলেম নন। তাই তার রচনাবালীর মধ্যে ধর্মীয় সাংঘর্ষিক কোন বিষয় থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।তাই বলে ঢালাওভাবে তাকে নাস্তিক বলাটা চরম অন্যায়। একজন আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী আস্তিককে নাস্তিক বলা তার প্রতি চরম তোহমদ ছাড়া আর কিছুই নয়।অনেক জ্ঞানপাপীকে দেখা যায় কিছু না জেনেই হুমায়ূন আহমেদ এবং হুমায়ূন আজাদকে একত্রে মিলিয়ে ফেলে। মনে রাখবেন হুমায়ূন আজাদ ছিল স্ব-ঘোষিত নাস্তিক। আজ হুমায়ুন আহমেদের ৮ম প্রয়ান দিবস। বাংলা সাহিত্যের এই রাজপুত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তার প্রতি রইলো অজস্র ভালবাসা। তার মাগফিরাত কামনা করছি।
কবি ও গণমাধ্যমকর্মী
nobosur15@gmail.com