সুলতান আফজাল আইয়ূবী
বিশাল পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা।আল্লাহর হুকুমে সৃষ্টি নিয়মে এ বিশ্বের সবকিছু পরিচালিত হয়। ঠিক তেমনি দিন-রাত ও একটি বৎসরের বারটি মাস মহান আল্লাহ হুকুমেই অতিবাহিত হয়।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,আমি রাত ও দিনকে দু’টি নিদর্শন বানিয়েছি। রাতের নিদর্শনকে বানিয়েছি আলোহীন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকোজ্জ্বল। যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ তালাশ করতে পারো এবং মাস ও বছরের হিসেব জানতে সক্ষম হও। এভাবে আমি প্রত্যেকটি জিনিসকে আলাদাভাবে পৃথক করে রেখেছি।(সূরা বানী ইসরাইল -১২)
আবার মাসের সূচনা হয় চাঁদ দেখার মাধ্যমে এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে “লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি তাদের বলে দিন এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজকর্মের) এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য। (সুরা বাকারা : ১৮৯) অন্যত্র
ইরশাদ করেন “সূর্য ও চন্দ্র একটি
হিসেবের মধ্যে আবদ্ধ আছে”(সুরা
রহমান : ৫)
দিন ও রাতের পরিক্রমায় আমরা এখন হিজরী যিলকদ মাস অতিবাহিত করছি। যিলকদ আরবী মাস সমূহের এগারতম মাস। যিলকদ হজ্বের মাস। যিলকদ সম্মানিত মাস “আশহুরুল হুরুম”তথা নিষিদ্ধ মাস। যিলকদ মুমিনের বিশ্রামের মাস। আশহুরে হুরুমের মাহাত্ম্য সম্পর্কে
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
“যখন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে। এর মধ্যে চারটি হারাম মাস। এটিই সঠিক বিধান। কাজেই এ চার মাসের নিজেদের ওপর জুলুম করোনা।
(তাওবা : ৩৬-৩৭)।
উল্লেখিত নিষিদ্ধ চারটি মাস হলো যিলকাদ, যিলহজ, মুহাররাম ও রজব। পূর্ববর্তী নবীদের যুগেও এ চারটি মাস অতি বরকতময় ও সম্মানিত মনে করা হতো। এবং তাদের শরীয়াহ মতে এ মাসগুলোতে সব ধরনের ইবাদতের সওয়াব বেশি এবং গুনাহের পরিণামও তুলনামূলক ভয়াবহ। এছাড়া এসব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-বিবাদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। পবিত্র কোরআনে চারটি
জিনিসকে মানবজাতির জন্য শান্তি,
নিরাপত্তা ও তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিক
হিসেবে ঘোষণা করেছেন।১. বাইতুল্লাহ শরিফ,২.সম্মানিত চার মাস অর্থাৎ আশহুরে হুরুম, ৩.হাদী অর্থাৎ ওই পশু, যার গলায় মালা পরিয়ে হারাম শরিফে নিয়ে যাওয়া হয় কোরবানী করার জন্য। ৪.কলায়েদ অর্থাৎ গলার হার। ইসলাম পূর্ব আরবের প্রথা ছিল যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করত, সে হজের নিদর্শনস্বরূপ একটি মালা গলায় পরে নিত।(যেমন বর্তমান সময়ে হাজীরা তাদের গলায় পরিচয় পত্র ঝুলিয়ে রাখেন)
এটি ছিল কারো অনিষ্ট থেকে বাঁচার
জন্য। আবু বকর আল জাসসাস (রহ.) বলেন, এই চারটি মাসকে ‘হুরুম’ বলার কারণ দুটি-
১. এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম। যা মুশরিকরাও মানত।
২. অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে গোনাহের পরিণতি বেশি ভয়াবহ এবং ইবাদতের প্রতিদান অনেক বড়।
আশহুরল হুরুম তথা সম্মানিত চারটি মাসের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আবু বকর আল জাসসাস (রহ.) বলেন, এই মাসগুলোতে ইবাদতে অভ্যস্ত হলে অন্য মাসেও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ অটুট থাকবে। আর এই মাসে গুনাহ ও মন্দ কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারলে অন্য মাসেও এর থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। নিষিদ্ধ মাস সমূহ বড়ই মর্যাদা সম্পন্ন। এ মাসগুলিতে পাপ শাস্তির দিক দিয়ে এবং সওয়াব প্রতিদান প্রাপ্তির দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে (তাবারী ১৪/২৩৮) সুতারাং যারা এই নিষিদ্ধ মাসগুলোকে সম্মান না করে পাপাচারে লিপ্ত হবে নিশ্চই তারা সীমালঙ্গনকারী আর সীমালঙ্গনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন ‘যে ইচ্চা করে পাপ কাজের সীমালঙ্গন করে তাকে আমি আস্বাদানকরাব মর্মান্তদ শাস্তি (সুরা হজ্ব -২২:২৫)
আশহুরুল হুরুম তথা সম্মানিত মাস সমূহে নেক আমলের পরিমান বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং এ মাসের বর্জনীয় আমল সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘অতএব তোমরা এ মাসগুলোর ব্যাপারে নিজেদের ওপর জুলুম করো না’ (সুরা তাওবা : ৩৭)।
‘নিজেদের ওপর জুলুম করো না’ এর তাৎপর্য হলো মক্কার মুশরিকদের মতো তাদের সুবিধামত মাস সমূহের নাম বদলের মাধ্যমে বিন্যাস পরিবর্তন করে সম্মানিত মাসেও যুদ্ধ বিগ্রহ করা।কিংবা এসব মাসের নির্দিষ্ট বিধি- বিধান ও সম্মানের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করা এবং ইবাদতে অবহেলা করা। পাপাচারে লিপ্ত হয়ে নিজেই নিজের অমঙ্গল ডেকে আনা। যদিও এখন সরাসরি যুদ্ধ নেই,কিন্তু প্রত্যেকেই ছোট ছোট যুদ্ধে প্রতিনিয়তই লিপ্ত আছি, সম্মানিত মাসের সম্মানে এগুলো বন্ধ করা উচিত। হযরত কাতাদাহ রাহ: বলেন আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মানব জাতির মধ্য থেকে রাসূলদেরকে মানোনিত করেছেন। যমিনের মধ্যে মসজিদ সমূহকে মর্যাদা দিয়েছেন। মাসগুলোর মধ্যে রমজান ও হারাম মাস সমূহকে সম্মানিত করেছেন। দিনের মধ্যে শুক্রবারকে, রাতের মধ্যে লাইতালুল কদরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ পাক যেভাবে ইচ্ছা করেছেন একাটির উপর অন্যটিকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুতারাং যেগুলোকে আল্লাহ তা’আলা মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সেগুলোর মর্যাদার প্রতিও আমাদেরও লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য।
তরুণ আলেম ও মিডিয়াকর্মী
nobosur15@gmail.com