
বিশেষ প্রতিবেদক : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের এম.এ মান্নান মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. গোলাম মোস্তফা আওয়ামীলীগ নেতার রুশানলে পড়ে চাকরি হারিয়ে ১০ বছর পর ইউএনওর নির্দেশে স্বপদে পূণ:বহাল হলেন । রবিবার সকালে উপজেলার জামায়াত , বিএনপির নেতা কর্মী ও এলাকার লোকজন ফুলের মালা দিয়ে সুপারকে স্বপদে বসান ।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা এম এ মান্নানের অনৈতিক কাজে মাদ্রাসার সুপার মো. গোলাম মস্তোফা রাজি না থাকায় ২০১৪ সালে সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হওয়ার পর বরখাস্ত হওয়া সুপার সুবিচারের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলামের নির্দেশ মোতাবেক রবিবার সকালে মাদ্রাসায় যোগদান করেন মাওলানা মো. গোলাম মোস্তফা । এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতে সেক্রেটারী মাহমুদুল হাসান, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মোড়ল, কটিয়াদী পৌর যুবদলের সভাপতি প্রিন্স আজিজসহ প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী, ম্যানেজিং কমিটি সদস্য , স্থানীয় নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা সুপারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন৷
এম.এ মান্নান মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে কর্মরত থাকাকালীন ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর মাসে জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ ও অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ১৮ টি গাছ বিক্রি করেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এই বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার প্রতিবাদ করলে তৎকালীন সভাপতি আওয়ামী লীগের দোষর এম এ মান্নান সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সূত্রে জানা যায়, এম.এ মান্নান মহিলা দাখিল মাদ্রাসা সুপার মো. গোলাম মোস্তফা কে গত ১৮-১০-২০১৪ খ্রি. তারিখে সাময়িক বরখাস্ত করেন তৎকালীন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা যায় অত্র প্রতিষ্ঠানের পদত্যাগকারী সহকারী শিক্ষক (গণিত ও বিজ্ঞান) জাহাঙ্গীর আলম এর নিবন্ধন সনদ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিটে জাল প্রমাণিত হয়। তাঁর বেতন ভাতা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম.এ মান্নান এটা না করার পক্ষে অবস্থান নিলে সুপার মো. গোলাম মোস্তফার সাথে তাঁর মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। জাল নিবন্ধন সনদধারী সহকারী শিক্ষক (গণিত ও বিজ্ঞান) জাহাঙ্গীর আলম সভাপতির নিকটাত্মীয় হওয়ায় তাঁর এ অবস্থানের কারন। পরবর্তী সময়ে সভাপতি প্রতিষ্ঠানের ১৮টি গাছ বিক্রয় করেন এবং বিক্রয় লব্ধ অর্থ প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা দেননি। গাছ বিক্রিতেও সরকারী বিধি বিধান অনুসরণ করা হয়নি। এ সকল বিষয়ে রেজুলেশন করতে বললে সুপার রাজী না হওয়ায় তিনি গোপনে জাল রেজুলেশন তৈরি করেন। পরবর্তীতে সভাপতি সুপার মো. গোলাম মোস্তফাকে সাময়িক ও চূড়ান্ত বরখাস্ত করেন। চাকুরী হতে বরখাস্ত করার সরকারি বিধি বিধান মেনে করেননি। বেসরকারী শিক্ষকদের চূড়ান্ত বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পূর্ব অনুমোদন নিতে হয় যা সভাপতি নেননি। সাময়িক বরখাস্ত চলাকালীন সময়ে খোরপোষ ভাতা দেয়ার কথা। সেটিও ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসাবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা দেননি। সভাপতির অনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল হোসেন জানান, অন্যায় ভাবে সুপার মো. গোলাম মস্তোফাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে আমি সততা প্রমাণ পেয়েছি।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলাম জানান, এম.এ মান্নান মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সাময়িক বরখাস্ত ছিল। মাদ্রাসা বোর্ডের চিটি অনুযায়ী সুপারকে খোরপোষ ভাতা দেওয়া ও কর্মস্থলে নিয়মিত হাজির হয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চাকুরীতে পুর্ণ বহালের জন্য বোর্ডের আপিল এন্ড আরবিট্রেশনে একটি চিটি পাঠানো হবে। বোর্ড পরবর্তীতে সুপারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পাপ্র/সুআআ