সঞ্জিত চন্দ্র শীল, হোসেনপুর থেকে: যৌতুক লোভী স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনে কলেজ ছাত্রী দীপা রানীর ভবিষ্যৎ এখান সীমাহীন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তাই অসহায় দীপাসহ তার হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন ন্যায় বিচার পেতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৫ বছর আগে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যানরত অবস্থায় হোসেনপুর উপজেলার পিপলাকান্দি গ্রামের লাল মোহন দাসের মেয়ে দীপা রানীর বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া পাবনকালী গ্রামের হরিচরণ দাসের ছেলে কৃষ্ণ দাসের।
বিয়ের সময় দীপার দরিদ্র পিতা লালমোহন দাস মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালংকার, ফার্নিচারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিলেও কিছুদিন সংসার করার পর তার স্বামী, শশুর-শাশুড়িসহ ভাসুররা মিলে দশ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন।
তাদের চাহিদামতো দীপা যৌতুক দিতে না পারায় তার উপর ধারাবাহিক ভাবে চলে শারীরিক মানসিক নির্যাতন। তবু তার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর অমানবিক নির্যাতন নিরবে সহ্য করতে থাকে। কিন্তু দিনের পর দিন যৌতুক লোভী স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে যায়।
এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অবশেষে দীপা কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের ৩ ধারা মতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ।যার সিআর মোকদ্দমা নং ৪৪৬(১)২২।
মামলার পর অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আপোষ মীমাংসা করে দীপাকে তার স্বামী বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কিছু দিন পর আবারো দশ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে ।
দীপা যৌতুক দিতে রাজী না হওয়ায় স্বামীর পরিবারের লোকজন রতন রবিদাস, রঞ্জিত রবিদাস, হৃদয় রবিদাস, নীলা রানী দাস, গেন্দু রবিদাস ও নিপা রানী দাসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় দীপাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ করেন দীপার স্বামী কৃষ্ণ দাস।
এ খবর পেয়ে গত ১৭মে দীপার তার স্বামীর বাড়িতে গেলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কৃষ্ণ দাসের পরিবারের লোকজন। ওই সময় দীপার স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের অমানবিক নির্যাতনের ফলে গুরতর অসুস্থ হয়ে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালে ভর্তি হন দীপা। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে দীপা আবারো যৌতুক লোভী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পুনরায় মামলা দায়ের করতে বাধ্য হন।
মামলার আসামিরা হলেন, স্বামী ভাসুর কৃষ্ণদাস, রতন রবিদাস, রঞ্জিত রবিদাস, হৃদয় রবিদাস, নিলা রানী দাস, গেন্দু রবিদাস ও নীপা রানী দাস। এরই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট আদালত পাকুন্দিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে তদন্ত-পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেন।
অসহায় কলেজ ছাত্রী দীপা রানী দাস জানান- আমি ন্যায় বিচারের দাবীতে বহু দিন যাবৎ স্বামী ও তার পরিবারের লোকদ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে থানা, আদালতসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করছি। আমি আমার স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে চাই।
দীপার পিতা লালমোহন দাস জানান – আমি একজন গরীব ও অসহায় মানুষ মেয়ের সুখের আশা বিভিন্ন সময় মেয়ের জামাইয়ের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেছি। তবু মেয়ের সুখ ফিরে আসেনি তাই আমি সুবিচার প্রার্থনা করছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা স্বপন কুমার জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়,যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনের শিকার কলেজ ছাত্রী দীপার অনুমতি ছাড়া তার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করেন।যা আইনসিদ্ধ নয়। তাছাড়া দীপার পিতার অসহায়ত্বের সুযোগটি নিয়েছে তার স্বামী কৃষ্ণ দাস। আরও অধিকতর তদন্তের পর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবো।