সুলতান আফজাল আইয়ূবী
লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান নিয়ে আমাদের কাঁদা ছোড়াছুঁড়ির অন্ত নেই। এ নিয়ে জুমআর খুৎবা থেকে অগুছালো কয়েকমিনিটের বক্তব্য।
১. লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান শরী’আতে স্বতঃসিদ্ধ, প্রমাণিত গুনাহ মাফের একটি রাত। এ রাতের ফজীলত অস্বীকার করা প্রকারান্তরে সহীহ হাদীস অস্বীকার করার নামান্তর। আবার এ রাতকে কেন্দ্র করে মনগড়া ইবাদত করাও বিদআত / দ্বীন গর্হিত কাজ।
২. এ রজনীতে একাকি কেউ ঘরে বা মাসজিদে গিয়ে রাতের শুরুতে বা শেষভাগে অনির্ধারিতভাবে সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির আজকার, দোয়া, রবের দরবারে কান্নাকাটি, রোনাজারি ইত্যাদি আমল করতে কোন অসুবিধা নাই। এতে এ বরকতপূর্ণ রাতের যে ফজীলাত ( গুনাহ মাপ ইত্যাদি) বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে তা সে ব্যক্তি লাভ করতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।
৩. লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বানে নির্দিষ্ট কোন কাঠামোগত ইবাদতের কথা কুরআন হাদীসে উল্লেখ নেই। যেমন, এত রাকাত সালাত আদায় করতে হবে, বা জামাত সহকারে সালাত আদায় করলে এত এত সওয়াব লাভ করবে এগুলো ভিত্তিহীন। বরং এ রাতে জামাতে সালাত আদায় করাকে সুন্নাহ মনে করাও বিদ’আহ।
৪. ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বানের কোন অস্তিত্বই নেই’ এ জাতীয় কথা আমাদের দেশের যে সকল সালাফি দাবিদার আলিমরা করে থাকেন, তাদের উচিত শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়ার (রহ.) মন্তব্যগুলো আগে পড়া, তাঁকে পড়তে বলছি কারণ তিনি তাদের মান্যবর ইমাম এবং তাঁকে আমিও একজন হকপন্থী সালাফ মানি ।
৫. লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান নিয়ে সামাজিক পরিমণ্ডলে এ দেশে যে বিদ’আতগুলো প্রচলিত আছে তাঁর সিংহভাগই জাল হাদিসভিত্তিক। আমার জানামতে ভারতীয় উপমহাদেশের কোন ফকীহ বা মুহাদ্দিসই এগুলোর বৈধতা দেননি।
৬. এ রাতের বিশেষ গোসল, মাসজিদে লাইটিংস, মুসল্লিদের মাঝে মিষ্টান্ন বিতরণ, মিলাদ পালন, জামাতবদ্ধ সালাত, কুরআন খানি, ঘরবাড়িতে স্পেশাল রান্নাবান্নার আয়োজন করা এগুলো সুস্পষ্ট বিদ’আত। এসবের সাথে সত্যপন্থী আলিমগণের কোন সম্পর্ক নেই।
৭. শবে বরাত কেন্দ্রীক বিদ’আতগুলো মূলত এ দেশে ঐ শ্রেণীর আলিম ও লোকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা সারাবছরই জাল হাদিসভিত্তিক কিছু অপসংস্কৃতিকে দ্বীনের নামে চালিয়ে দিয়ে বিদ’আতের সয়লাব ঘটিয়ে এ দেশে শারীয়াতের প্রকৃত রূপটাই বিকৃত করে আসছে যুগ যুগান্তরে।
৮. শবে বরাতের রাত নিয়ে আলাদা উৎসবমুখর হওয়ার দরকার নাই। এ রাতের প্রমাণিত ফজীলত মাথায় রেখে একাকি ঘরে বা সম্ভব হলে মহল্লার মসজিদে ইবাদতবন্দেগি করবেন। কেউ না করলে তাঁকে তিরস্কার করবেন না। শবে বরাত কেন্দ্রিক বিদ’আতগুলো থেকে নিজ এবং পরিবারকে কঠোরভাবে বিরত রাখবেন।
৯.মধ্য শাবানের রাত্রির বিশেষ মাগফিরাত সম্পর্কে একটি বিষয়ই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
‘মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’’
(এ অর্থের হাদীস কাছাকাছি শব্দে ৮ জন সাহাবী: আবূ মূসা আশআরী, আউফ ইবনু মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর, মুয়ায ইবনু জাবাল, আবু সা’লাবা আল-খুশানী, আবূ হুরাইরা, আয়েশা ও আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। সামগ্রিক বিচারে হাদীসটি সহীহ। শাইখ আলবানী বলেন, ‘‘হাদীসটি সহীহ। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রিটি একটি বরকতময় রাত এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। কিন্তু এ ক্ষমা অর্জনের জন্য শিরক ও বিদ্বেষ বর্জন ব্যতীত অন্য কোনো আমল করার প্রয়োজন আছে কি না তা এই হাদীসে উল্লেখ নেই।
অতএব, আসুন আজকের দিনে শিরিক থেকে বিরত থাকি আর যদি আমাদের হৃদয়ে বিদ্বেষ থাকে সেটা পরিহার করি…….. আমিন।
সুলতান আফজাল আইয়ূবী
খতিব,মহিষবেড় উত্তরপাড়া জামে মসজিদ