হুমায়ুন কবির, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টোর
তহবিলে পর্যাপ্ত টাকা থাকার পরও তিন বছরে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ফলে ধীর গতিতে এগোচ্ছে কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া-টোক সড়ক প্রকল্পে মাটি ভরাট ও নির্মাণ কাজ। ফলে ১৭ কিলোমিটারের সড়ক এলাকার বেশকিছু জায়গায় বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে প্রতিদিন এই সড়কে চলাচলকারি কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
স্হানীয়রা বলেন বাইপাস হতে যেহেতু দেরি হচ্ছে তাহলে মধ্য পাকুন্দিয়া থেকে পাকুন্দিয়া বাজারের গরুর হাট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার দাবি জানান।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর এই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে পাশ হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় ন্যাশনাল ডেভেলপম্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই বছরই প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে। প্রকল্পটির আওতায় কিশোরগঞ্জের বিন্নাটি চৌরাস্তা থেকে পাকুন্দিয়া হয়ে কাপাসিয়া উপজেলার টোক বাজার পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩২ ফুটে প্রশস্তকরণ, মধ্য পাকুন্দিয়া থেকে পাইক লক্ষীয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারের একটি নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও বিন্নাটি, কোদালিয়া ও বাহাদিয়া এলাকায় তিনটি বাঁক সরলীকরণ এবং একটি সেতুসহ ১২টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাস্তা নির্মাণের জন্য ১৮০ কোটি টাকা আর ৬৯.৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ খাতে রাখা হয় ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্ব পায় কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদফতর।
পুরো সড়কটি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সড়কের দুই ধার ৩২ ফুট প্রশস্ত করণের কাজ প্রায় অর্ধেকের মতো শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমির মালিকরা জায়গা না দেওয়ায় বাকি অর্ধেক কাজ আটকে আছে। অন্যদিকে তিনটি বাঁক সরলীকরণ ও নতুন দুই কিলোমিটার বাইপাস সড়কটিতে এক কোদাল মাটিও ফেলতে পারেনি ঠিকাদার। এদিকে কালটিয়া বাজার, কোদালিয়া চৌরাস্তা বাজার, সুখিয়া বাজার, মধ্য পাকুন্দিয়া ও পাকুন্দিয়া সদর বাজার এলাকায় সড়ক ভেঙে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি জমে কাদা পানির সৃষ্টি হওয়ায় জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
পাকুন্দিয়া সদর বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ সৈয়দ মিয়া বলেন, সড়কটি ভাঙা হলেও শুকনো মৌসুমে চলাচল করা যেত কিন্তু এখন হালকা বৃষ্টিতে কাদা একটু রোদে ধুলোবালির কারণে হাঁটাও যাচ্ছে না। বিভিন্ন ছোট বড় যানবাহন উল্টে পড়ে যাত্রী ও পথচারী প্রায়ই আহত হচ্ছে। অটোরিকশা চালক মোঃ মুরশিদ মিয়া জানান, ভাঙা এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতিদিনই গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। যা রোজগার করি গাড়ি মেরামতের পিছনেই সব শেষ হয়।
ট্রাক চালক মোঃ ইয়াছিন জানান, সোমবার (১১ই সেপ্টেম্বর) ভোর সকালে ঢাকা থেকে পাকুন্দিয়া উপজেলার পুলেরঘাট বাজারে ফিড নিয়ে যাচ্ছিলাম, দুপুর বারোটার দিকে পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে পুলেরঘাট রাস্তার কাছেই গর্তে পরে ফিড বোঝাই ট্রাকটি উল্টে যায় এবং এক্সেল ভেঙ্গে যায়। সৌভাগ্য ক্রমে আমরা পথচারীরা বেঁচে যাই, ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাকটি ঠিক করে আবার ট্রাক বোঝাই করতে কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যায়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভলপম্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক গাজী কামাল পাশা বলেন, এ পর্যন্ত সড়কের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ করতে পেরেছি। ভূমি হাতে না পাওয়ায় বাকি কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের সরকারি টেলিফোন নাম্বারে কল করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ জাবের আহমেদ বলেন আপনি লিখিত দেন, লিখিত ভাবে জানান জানাবো।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুকূলে টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। ৮ ধারা নোটিশ পেলেই জমির মালিকেরা টাকা পাবেন। কাজের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আগের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসে। টাকা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে জমির মালিকদের বুঝিয়ে প্রায় অর্ধেকের মতো রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, পাকুন্দিয়া বাজারের রাস্তাটি হবে আরসিসি ঢালাই, বাইপাস ও বাজারের রাস্তার কাজ একসাথে হবে।