তানিয়া সুলতানা হ্যাপি
ইডেনে পড়ার সময় বেশিরভাগ
ক্লাসেই উপস্থিত হতে পারতাম না,
রাজনীতির মিছিল মিটিং করে।
ক্লাসের হোম ওয়ার্ক ও ঠিকমতো
শেষ করা হয়ে উঠতো না।
প্রায়ই ক্লাসে ঢোকার আগে
ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হতো।
আর তখন ক্লাসের সবাই
আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো।
সেজন্যই বোধহয় ডিপার্টমেন্টে
আমার কোন বন্ধু জুটে নি
শিক্ষকদের আদর,ভালবাসা ও জুটেনি!
প্রাইমারি স্কুলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল নাসিমা।
হাইস্কুলে আমার বন্ধু ছিল এত্তগুলা!
নাসিমা,সুবর্ণা,আলেয়া, বুলবুলি, কলি, বিলকিস…
কলেজে পড়ার সময়
একখান মনের মতো সই ও জুগিয়েছিলাম
আমার সইয়ের নাম ছিল মৌসুমী।
আমার সব বন্ধুদের কেউ বিসিএস ক্যাডার
কেউ উকিল, কেউ শিক্ষক হতে চেয়েছিল।
আমি সেসব হতে চাইনি-
আমি চেয়েছিলাম একদিন
মানচিত্রের পুরোটা জুড়ে বিচরণ করতে।
আমি চেয়েছিলাম
একদিন পতাকাবাহী লাশ হতে।
আমার বন্ধুদের যে উকিল হতে চেয়েছিল
সে গর্ব করে বলে সে বেহেশতে যাওয়ার টিকিট পেয়েছে।
অর্থাৎ তিনকন্যা সন্তানের জননী হয়েছে।
আর যার শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে ছিল সে হয়েছে উকিল।
ধরিত্রীতে চলছে করোনার তান্ডব লীলা
বাইরে বের হতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা।
চারিদিকে মৃত্যুর ভয়ে নুজ্ব্য পৃথিবী
এদিকে হাতে অফুরন্ত সময়
তাই মেয়েবেলার বন্ধুদের সাথে
প্রায়ই অনলাইনে আড্ডা দেই,
পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করি।
ভাবাবেগে আমার হৃদপিণ্ডে উপলুব্ধ হয়
আচ্ছা আমার যে বন্ধু শিক্ষক হতে চেয়েছিল
সেতো জনসেবা করার ইচ্ছেও করতে পারতো?
আবার আমার যে বন্ধু আদর্শ গৃহিণী,
আদর্শ মা হওয়ার চেষ্টা করছে
সেতো শ্রেষ্ঠ নারী উদোক্তা ও হতে পারতো?
সবাই যা হতে চেয়েছিল কিছু একটা হয়েছে।
এক আমি ছাড়া
আমি আজো মানচিত্রের পুরোটা জুড়ে
বিচরণ করতে পারি নি
বৈশ্বিক মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে না মরলে,
হয়তো একদিন পতাকাবাহী লাশ হবো।
হয়তো একদিন ঠিকই
মানচিত্রের পুরোটা জুড়ে বিচরণ করবো।
হয়তো টা হয়তো বা একদিন সত্যি হবে
মরে গেলে অপূর্ণ রবে স্বপ্ন স্বাদ।