বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সমাজ ও বাস্তবতা নিয়ে আপনি ভাবেন কি?
Update : সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩, ৭:২৪ অপরাহ্ণ

যা দেখছি! তা বলছি!!

মাহবুবুর রহমান

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের র‍্যাগ ডে পালন করতে দেখতাম। আর তা দেখে নিজেও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম, অবশেষে সে স্বপ্ন একদিন বাস্তবে পরিণত হয়। আর এখন দশম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের র‍্যাগ ডে পালন করার মর্মার্থ বিশ্লেষণের মত যোগ্যতা আমার নেই।

জীবনের সব শখ,স্বাদ আহ্লাদ যদি এই অল্প বয়সেই শেষ হয়ে যায়! তাহলে কিসের আশায় স্বপ্ন দেখবে? যদি এই বয়সেই গার্ল ফ্রেন্ড হয়ে যায়! শারীরিক সম্পর্কের কারণে আত্মহত্যার হুমকি ধমকি পাওয়া যায়! বাবার ব্লাড প্রেসার বেড়ে স্ট্রোক হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়! আদরের সন্তানের চিন্তায় অনিদ্রা, অনাহারে মায়ের স্বাস্থ্য ভেঙে যায়! সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে বাবা-মায়ের তুমুল ঝগড়া বেধে যায়! সুযোগ্য সন্তান এতে কর্ণপাত না করে ক্লাসমেটের চিন্তায় বিভোর হয়ে যায়!

যদি এই বয়সেই ছেলে মেয়ের হাতে হাত পরে যায়, ধরাধরি মারামারির পর্যায়ে চলে যায়! যদি খাওয়ার মতো পিল নিজের ব্যানিটি ব্যাগেই পাওয়া যায়! যদি পিল বেশি খেয়ে বেমালুম বাবা-মা কেই ভুলে যায়! যদি পিলের ঠ্যালা সামাল দিতে দুলাভাইয়েরও বারোটা বেজে যায়! বমি করায় পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায় তখন কিই বা করার থাকে!

ইয়াবা, মদ ও গাজার মতো নেশায় আসক্ত হয়ে চোখের সামনে মেধাবী ছাত্ররা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! এলাকা যেন গাজা উপত্যকা। বাল্যবিবাহ হরহামেশাই ঘটছে। প্রতিবাদ করার কেউ নেই বরং কিছু সমাজপতিরা উপরি ইনকামের সুযোগে পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিচ্ছে। বাল্যবিবাহে বাধাঁ দিতে গিয়ে একবার সমাজপতি ও সামাজিক চাপে আমার বারোটা বেজেছে। এমনকি আইনের লোকেও গালিগালাজ করেছে। ইয়াবা কেনার টাকা না থাকায় ঘর থেকে ৫/১০হাজার টাকা উধাও হয়ে যায় তখন কিইবা করার থাকে?

আমরা যখন পাটুয়াভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তাম তখন হয়তো এতো বড় বড় বিল্ডিং ছিল না, কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের ভালবাসা আর আন্তরিকতার অভাব কোন অংশেই কমতি ছিলনা। প্রতিটি ছাত্র/ছাত্রীই ছিল শিক্ষকদের প্রাণ, এসব যেন আজ কোথায় হারাতে বসেছে। এসবের জন্য দায়ী কে?

স্কুলঘরগুলো এমন ছিলো যেন ছোট একটা ঝড় আসলেই টিনের চাল উড়ে গিয়ে জমিতে পড়ে যায়। তাই আমরা র‍্যাগ ডে এর মত এমন কথা ভাবতেই পারিনি! দশমশ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের র‍্যাগ ডে নামক ডিস্কো গানের অত্যাচারে আমাদের স্যারেরা জোহরের নামাজ পরবেন সে সুযোগ নেই।
কাকে দোষ দেব? নিজেকে? না শিক্ষার্থীদের?

এসব কথা বলার কারণে উঠতি ছেলেরা আমাকে পর দিন পথ আটকিয়ে অপমান করবেনা যে তার বিশ্বাস কি? আসলে বেতের শাসন উঠে যাওয়ার পর থেকেই খেয়াল করছি- নামধারী কিছু শিক্ষিত তৈরি করার নামে ভালো মানের কিছু বেয়াদব তৈরি করছি। যে ছেলের এসএসসি পাস করার যোগ্যতা নেই, সেই ছেলে পাবলিক ইউনিভার্সিটির এক বড় ভাই(শিক্ষক) কে ঘুষি মারতেও দ্বিধা করেনি। দুইজন চিপায় কি করে জানতে চাইলে উত্তরে ছাত্র শিক্ষককে শাসিয়ে বলে,” আমি সভাপতির ভাগিনা সেটা আপনার হয়তো মনে নেই! ” পরিক্ষার হলে ম্যাডাম এক শিক্ষার্থীকে মোবাইল দেখে না লিখতে বলায় তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় গুণবান শিক্ষার্থী। ৭ম ও ৮ম শ্রেণির বাচ্চারাও বাইক নিয়ে স্কুলে আসে এবং প্রয়োজন ছাড়াই মাঠে সাঁ সাঁ শব্দে এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়। আর সেই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে ৬ পয়সা ইনকামের সামর্থ্য নেই এমন ছেলেও বাবা-মাকে ৬লাখ টাকার R15 কিনে দেবার আল্টিমেটাম দেয়! এদের এখনই থামাতে না পারলে এর ভুক্তভোগী কেবল তাদের পরিবার নয় পুরো দেশকেই ভুগতে হবে। এ কোন যুগে বাস করছি!!!!

শিক্ষক ও সমাজকর্মী
সহাকারী শিক্ষক,আমেনা আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটুয়াভাঙ্গা, পাকুন্দিয়া।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
আমাদের ফেইসবুক পেইজ