সুলতান আফজাল আইয়ূবী
“ছেলেটির বয়স মাত্র ২০। মামার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে মর্গে কাজ করতো সে। নাম মুন্না ভগত। কিন্তু জঘন্যতম একটি অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো সে। সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হতো, সেসব লাশের মধ্য থেকে মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো মুন্না।”
উপরের নিউজটি গত বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউন থেকে নেওয়া। নিউজটি ছেপেছে দেশের প্রিন্ট অনলাইন এমনকি বিভিন্ন চ্যানেলগুলোও। ভাবতে অবাক লাগে নৈতিকতার কতটুকু অধঃপতন হলে এমন কাজ কোন মানুষ করতে পারে! মানুষের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি হলো মৃত্যু। মানুষ যখন কোন মৃত্যু সংবাদ শুনে বা মৃত মানুষ দেখে তখনই স্বভাবতই প্রত্যেকের মন নরম হয় একবার হলেও মৃত্যুর ভয় জাগ্রত হয়, অথচ এখানেও এ ধরণের আচরণের খবর আমাদের শুনতে হলো? ছেলেটি গ্রেফতার হয়েছে। হয়তো বিচারও হবে। কিন্তু সচেতন মহলকি ভেবে দেখবে এ দায় কার? শুধু ছেলের (অপরাধী) একার? তার নৈতিক এ অধঃপতনের দায় কার ? পরিবার, সমাজ, শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই কমবেশী দায়ী।
সমকালে নীতি- নৈতিকতার ব্যাপারটার আদৌ কোনো অস্তিত্ব আমাদের সমাজে আছে কি না? অথবা এর প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহারের ক্ষেত্র কোনটি? নীতি – নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়ার স্থান কোনটি? এসবের সঠিক উত্তর আছে? একসময় বিদ্যালয়ে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নৈতিকতা, আদর্শ, আচার-আচরণ শেখানো হতো। এখন প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির ঘটনা। শিক্ষক যখন এ রকম কুকর্মে লিপ্ত থাকেন, সেই শিক্ষকের কাছ থেকে নৈতিকতা শেখার কোনো সুযোগ থাকে বলে আমার মনে হয়না।
নৈতিকতার বিচ্যুতি বর্তমানে আমাদের সমাজের সবক্ষেত্রেই দেখা যায়। বিচ্যুতি নেই এমন স্থান খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এসব চিত্র দেখে বাঙলা প্রবাদ বাক্য বলতে হয় ” সর্বাঙ্গে ব্যাথা ঔষদ দেব কোথা? ” শিক্ষা, শিক্ষক, শিক্ষকতা, ছাত্র ও অভিভাবক দিয়েই শুরু করা যাক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার প্রথম ধাপ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো পরিবার / অভিভাবক, যেখানে পরিবারের সন্তানদের নৈতিকতা সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে। কিন্তু এই পরিবারেই যে আজ নারী / শিশুরা অনিরাপদ এমন সংবাদ নিকটেই আমরা দেখেছি। অভিভাবক যখন তাঁদের ছেলেমেয়েকে অনৈতিক পন্থায় পরীক্ষায় পাস বা সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য সমর্থন করেন, তখন ছেলেমেয়েদের মধ্যে নৈতিকতার কোনো বিকাশ যে হবে না, এটাই স্বাভাবিক।
যখন এ রকম পরিস্থিতি ক্রমশ বাড়তে থাকে, শিক্ষাঙ্গনে একটা অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরীক্ষায় ফেল করলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল, শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করা, শ্রেণিকক্ষে তালা দেওয়া, ব্যবহারিক পরীক্ষা/থিসিস নম্বরের সুযোগ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, প্রাইভেট টিউশন নিতে বাধ্য করা,ইত্যাদি নানা প্রতিনিয়তই অবক্ষয় হচ্ছে নীতি ও নৈতিকতার।
ধর্ষণের মহামারী তো চলছেই। এর ভিতর আবার এ সংবাদ। নারী তো মরে গিয়েও লাশকাটা ঘরেও নির্যাতনের শিকার। এভাবে নানা দিকের সমাজ ধ্বংসের হাত থেকে এ সমাজকে রক্ষা করবে কে? কে নিবে নৈতিকতাহীন এ সমাজের দ্বায়িত্ব? নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হিসেবে আগামী প্রজন্ম তৈরী করার দ্বায়ভার কি আপনার আমার নেই?
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, পাকুন্দিয়া প্রতিদিন
nobosur15@gmail.com