ডেস্ক রিপোর্ট : হঠাৎ করে আলোচনায় এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব করা নূপুর শর্মা। গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন তিনি। নূপুরের মন্তব্য দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিজেপি। জেনে নিন কে এই নূপুর শর্মা এবং কি বলেছিলেন?
গত রবিবার টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানে হজরত মহম্মদ সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মা। এই কারণে তাকে বরখাস্ত করেছে বিজেপি হাইকমান্ড। বিজেপির দিল্লির মিডিয়া ইনচার্জ নবীন কুমার জিন্দালকেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি।
নূপুর শর্মাকে পাঠানো সাময়িক বরখাস্তের চিঠিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটি লিখেছে, ‘আপনি বিভিন্ন বিষয়ে দলের অবস্থানের বিপরীত মতামত প্রকাশ করেছেন। আপনাকে দল থেকে এবং আপনার দায়িত্ব থেকে অবিলম্বে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে।’
দিনকয়েক আগে হজরত মহম্মদের বিয়ে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কানপুর এলাকা। পাথর ছোঁড়া, দোকান ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ জনকে। সংঘর্ষের সময় ২০ জন পুলিশ কর্মী সহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিন ঠিক কি বলেছেন নূপুর? একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বিতর্ক অনুষ্ঠানে, নুপুর শর্মা বলেছিলেন যে ইসলামিক ধর্মীয় বইয়ের কিছু বিষয় উপহাসের যোগ্য। তিনি বলেন, মুসলমানরা হিন্দু ধর্মকে উপহাস করে থাকে এবং মসজিদ কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে পাওয়া ‘শিবলিঙ্গ’কে ফোয়ারা বলে অসম্মান করার চেষ্টা করছে। নুপুর শর্মার বিরুদ্ধে হায়দরাবাদ, পুনে এবং মুম্বাইতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নুপুর শর্মার বরখাস্তের খবর প্রকাশের কিছুক্ষণ আগে, বিজেপি রবিবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে যে তারা সমস্ত ধর্মকে সম্মান করে এবং যে কোনও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অবমাননার তীব্র নিন্দা করে।বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিজেপি সেই ধরনের মতাদর্শের দৃঢ়ভাবে বিরোধী যা কোনও সম্প্রদায় বা ধর্মকে অপমান করে বা ছোট করে। বিজেপি এই ধরনের মানুষ বা দর্শনকে প্রশয় দেয় না,’ । বিজেপি থেকে নুপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইট করেছেন, ‘আরবের প্রতিক্রিয়া সত্যিই দংশন করেছে।’ প্রসঙ্গত শনিবার, ওমানের সুলতানাতের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আহমেদ বিন হামাদ আল-খালিলি টুইটারে নুপুর শর্মার দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা করেছিলেন।
তবে এই ঘটনার পর শুধু ভারতেই নয়, অনেক মুসলিম দেশেও নুপুরের (Nupur Sharma) মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশে ভারতীয় পণ্য কেনা বেচার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সে দেশের সরকার। তবে এই ঘটনার জেরে বিপাকে পড়েছেন নুপুর নিজেও। নুপুর জানিয়েছেন, তাঁর উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। তাই টুইট করে নুপুর জানিয়েছেন, কারোর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে তার জন্য তিনি দুঃখিত।
কে এই নূপুর শর্মা? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হিন্দু কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক নূপুর পরে আইনের ডিগ্রিও অর্জন করেন। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে আইনে স্নাতকোত্তরও করেছেন তিনি। কলেজে থাকতেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নূপুরের। সংঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী হন নূপুর শর্মা। ২০০৮ সালের নভেম্বরে সংসদ হামলায় অভিযুক্ত এসএআর গিলানিকে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে এই বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে। পরে আদালতে বেকসুর খালাস পেয়ে যান তিসি। সংসদ হামলায় অভিযুক্ত অধ্যাপক গিলানির মুখে থুতু ছিটিয়ে ছিলেন নূপুরের সঙ্গী। সেই সময়ই খবরের শিরোনামে উঠে আসেন এই বিজেপি নেত্রী।
এরপরেই পদোন্নতি। ভারতীয় জনতা পার্টির যুব মোর্চার জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য হন নূপুর। দিল্লি বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির সদস্যও হন তিনি। পরে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র হন নূপুর।২০১৫ সালে দিল্লি বিধানসভায় নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন নূপুর। যদিও ৩১,৫৮৩ ভোটে কেজরীর কাছে হেরে যান।২০১৭ সালে দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র হন নুপুর।
সুত্র : বাংলা সমাচার প্লাস